টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের বন্দিদের জীবন কেমন কাটছে?

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কারাগার রাষ্ট্রের অতি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র, সমাজ তথা ব্যক্তি মানুষ কে সংস্কার ও সংশোধনে এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ছিঁচকে চোর থেকে শুরু করে শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গী, এমনকি রাজবন্দিদের নিরাপদ আটক এবং তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সমাজে পুনর্বাসন করাই এ প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব। “রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ”- এই ব্রতকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল জেলা কারা প্রশাসন দায়িত্ব পালন করে চলেছে।

পাক-ভারত বিভাজন হওয়ার পর হতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত শহরের প্রাণকেন্দ্রে টাঙ্গাইল উপ-কারাগারের কার্যক্রম চালু ছিল। পরবর্তীতে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে উপ কারাগারটি জেলা কারাগারে উন্নীত করা হয়। শহর এলাকা হতে প্রায় ২ কি.মি. উত্তর পূর্বে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ৩১.৩০ একর জমির উপর বর্তমান টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে পেরিমিটার ওয়ালের ভিতরে ৮.৩৩ একর ও বাহিরে ২২.৯৭ একর জমি রয়েছে।

ভিতরের ৮.৩৩ একর জমির মধ্যে ১৩০ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন প্রকার সবজি মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি,শালগম, পালংশাক, কলমিশাক, বেগুন, পুঁইশাক, গাজর ইত্যাদি ও ফুল উৎপাদন করা হয়। পেরিমিটার ওয়ালের বাইরে প্রায় ২ একর জায়গা জুড়ে একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেল, বিগহেড, সিলভারকার্প, গ্রাসকার্প, মিরেরকার্প, সরপুটি, তেলাপিয়া ও অন্যান্য ছোট প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়। তাছাড়া কারা কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের পোষ্যদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে একটি বড় খেলার মাঠ ।

টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের কর্মকর্তা ও কর্মচারী ১৯০ জন। হাজতি-কয়েদি প্রায় ১ হাজার ৫ শত জনের মত। অথচ কারাগারে প্রতিজন হাজতি-কয়েদির জন্য ৬ ফুট জায়গা বরাদ্দ থাকলেও তাতে বসবাস করছেন কমপক্ষে তিনজন। সমাজের ঘুনে ধরা মানুষগুলোর বিনির্মাণে কাজ করছেন জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি গত ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ সালে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের যোগদান করেন। কারাগারের নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতি ঘুচাতে কিছু সময় গেলেও শৃঙ্খলা ফিরেছে এখানে। তার দাবি- অনেকটাই সুস্থ ও শৃঙ্খল জীবন কাটাচ্ছেন হাজতি-কয়েদিরা। খাবারের মান বেড়েছে সাধ্যের মধ্যে বহুগুণ। কারাগারে বন্দী থাকলেও ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন ফলমূল সুদূর রাজশাহী থেকে আম ও লিচু এনে তাদের খেতে দেওয়া হয়েছে।

শীতকালে বিভিন্ন পিঠা খাওয়ানো হচ্ছে তাদের। তারা সপ্তাহের প্রতিদিন একবেলা কওে মাছ অথবা মাংস খাচ্ছেন। বন্দী জীবনে তারা খারাপ কোন চিন্তা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। ব্যবস্থা করা হয়েছে বিভিন্ন কাজের। তারা অবসর সময়ে নানা হস্তশিল্পের কাজ করছেন। তাদের হাতে তৈরী বিভিন্ন হস্তশিল্প যেমন- টিস্যু বক্স, কলমদানী, জায়নামাজ ,টুপি, লুঙ্গি, গামছা বিভিন্ন প্রদর্শনীতে প্রশংসনীয় হয়েছে। তারা কাঠ ও বেত দিয়ে নানা আসবাবপত্র তৈরী করছেন।

কারাবন্দিরা অসুস্থ হলে এখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। জরুরী প্রয়োজনে বা উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতাল অথবা ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। করোনা মহামারীতে দেশের সর্বপ্রথম টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে তাদের টিকা প্রদান করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ছিঁচকে চোর থেকে শুরু করে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গীরাই কারাগারে আসেন । ভালো মানুষ কয়জন আসে। আমি প্রথমেই চেষ্টা করেছি, যারা এ গুরুদায়িত্ব পালন করেন তাদের সৎ, সাহসী, ন্যায়পরায়ন, উদ্ভাবনশীল ও পরিছন্ন মানুষ হিসাবে তৈরী করতে। কারন এটা টিম ওয়ার্ক।

একা আমার পক্ষে এতো কিছু করা সম্ভব না। আমরা সবাই মিলে আজকে কারাগারের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যাতে একজন মানুষ এখান থেকে কিছু শিখে যান, ভালো কিছু। বাইরে গিয়ে তার জীবনটাকে যেন গড়তে পারেন। সামান তালে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন সমাজের আর দশজনের সাথে। তবেই আমাদের স্বার্থকতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap