নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলে বালুঘাটের আধিপত্য বিস্তার ও বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নদী তীরবর্তী এলাকা। প্রায়ই ঘটছে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা। ‘হোয়াইট গোল্ড’ নামে পরিচিত এ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ভূঞাপুরের যমুনা নদী তীরবর্তী বাগানবাড়ি এলাকা ও কালিহাতীর নিউ ধলেশ্বরী নদীর জোকারচর পয়েন্টে সম্প্রতি দুটি বড় ধরনের হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
হামলায় ব্যবহার করা হয় অত্যাধুনিক দেশীয় অস্ত্র। ঘটে গুলির ঘটনাও। আহত হয় প্রায় ৩০ জন। বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা।
গত শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) টাঙ্গাইলের কালিহাতীর ধলেশ্বরী ও পুংলী নদী খনন প্রকল্পের কাজের অবৈধ বালুঘাট দখলে রাখতে ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে দুই গ্রুপের ১০ জনকে আটক করে পুলিশ।
ফাইল ছবি
স্থানীয়রা বলেন, ওইদিন দুপুরে হেলমেট পরে সুলতান গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মাসুদ-নুরুল ইসলামের বালুরঘাটে অতর্কিত হামলা চালায়। পরে মাসুদ গ্রুপের লোকজনও পাল্টাহামলা চালায়। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ চলে।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে সাবেক মেম্বার সুলতান ও তার ভাইয়ের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় মাসুদ গ্রুপের লোকজন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে পুলিশ দুই গ্রুপের ১০ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সাবেক মেম্বার সুলতান বলেন, জোকারচর এলাকার মাসুদ সরকার ও নুরুল ইসলাম মেম্বারের লোকজন আমার ও আমার ভাইয়ের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করে। এ সময় আমার ঘরের ভেতরে থাকা আলমারি ভেঙে নগদ ১৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। আমি সরকারের কাছে এর বিচার চাই।
অন্যদিকে মাসুদ সরকার জানান, বালুরঘাটে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সুলতান মেম্বারের লোকজন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে আমরা তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষ হয়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়। আর নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের ঘটনা একটি সাজানো নাটক।
কালিহাতীর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা আজিজুর রহমান বলেন, উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের জোকারচর এলাকায় বালুরঘাট দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় দুই গ্রুপের ১০ জনকে আটক করা হয়।
ফাইল ছবি
এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের যমুনা নদীর তীরবর্তী বাগানবাড়ি এলাকায় বালু ঘাটের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মতিন গ্রুপ ও মাসুদ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৭ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে ১৫ জন আহত হয়। পরে ভূঞাপুর থানার এসআই মো. সাইফুল ইসলাম বাদি হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরে আলম মন্ডল নুহুকে এক নম্বর অপর ইউপি সদস্য আব্দুল করিমকে দুই নম্বর আসামী করে ৫৯ জনের নাম।
উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রাতে মামলা দায়ের করে। মামলার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রায়ই ঘটছে হামলা সংঘর্ষে ঘটনা।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানার ওসি মো. আব্দুল ওহাব বলেন, বালু ঘাটের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে এক গ্রুপের ইউপি সদস্য নুরে আলম মন্ডল নুহুকে এক নম্বর এবং অপর গ্রুপের ইউপি সদস্য আব্দুল করিমকে দুই নম্বর আসামি করে ৫৯ জনের নাম উল্লেখসহ উভয়পক্ষের অজ্ঞাত ৭ থেকে ৮শ’ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময়ের ভিডিও দেখে আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বালুঘাট ও আশপাশের এলাকায় প্রতিদিনই পুলিশ টহল দিচ্ছে।
Leave a Reply