মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

শিরোনাম :
ভুঞাপুরে হিট‌স্ট্রো‌কে আক্রান্ত হ‌য়ে অসুস্থ্য শিক্ষার্থী সখীপুরে শাল-গজারি বনে এক মাসে ২৫ স্থানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা নাগরপুরে তিনদিন ব্যাপী খাদ্যভিত্তিক পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ঘাটাইলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করছে দুর্বৃত্তরা টাংগাইলে নায়ক মান্নার বাসা থেকে ৬ শত ২০ মিটার রাস্তার উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন নাগরপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের ইন্তেকাল ঘাটাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত টাংগাইলে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বিতরন নাগরপুরে প্রবাসীকে হত্যার অভিযোগে দুইজন গ্রেফতার মাভিপ্রবিতে বিতর্কে জয়ী বিরোধী দল ‘ভগ্নমনস্কতা’

সখীপুরে ঝরাপাতা বিক্রি করে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪
  • ৭৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ঝরা পাতা গো–আমি তোমারি দলে।অনেক হাসি, অনেক অশ্রুজলে ফাগুন দিল বিদায়মন্ত্র, আমার হিয়াতলে। ঝরা পাতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় আনন্দ, বেদনা, বিরহ সবই আছে। তবে টাঙ্গাইলের সখীপুরের বনাঞ্চলে বসবাস করা নিম্ন আয়ের মানুষের ফাল্গুন-চৈত্র মাসে শালবনের ঝরাপাতা শুধুই আনন্দ নিয়ে আসে। এ সময়টা তাদের ঝরাপাতা কুড়িয়ে বিক্রি করে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় বন বিভাগ বলছে, বনের ঝরা পাতা বিক্রি করে ওই সব পরিবারের শুধু আর্থিক চাহিদাটাই মিটছে না, এতে বনে আগুন লাগার আশঙ্কা কমছে। ফলে একদিকে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে। অন্যদিকে ওই সকল পরিবারগুলো খানিকটা অর্থিক সুবিধাও পাচ্ছে।
শাল-গজারি বাগান থেকে সংগ্রহ করা শুকনো ঝরাপাতা বস্তায় ভরে সেগুলো ভ্যান, কিংবা মাথায় করে মধ্যবিত্ত, নিম্ন–মধ্যবিত্ত কৃষক ও বিভিন্ন পেশার মানুষের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বাড়তি টাকা আয়ের সুযোগ হওয়ায় তাঁদের এ আনন্দ।
স্থানীয় বনবিভাগ সূত্র জানায়, উপজেলার ১১ টি বিট কার্যালয়ের আওতায় কমপক্ষে ১০ হাজার একর জমিতে শালগজারি বাগান রয়েছে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে শালগজারিসহ সাধারণত সব গাছেরই পাতা ঝরে যায়। বিশেষ করে এ সময় উপজেলার নলুয়া, কালমেঘা, বহেড়াতৈল, এমএমচালা, কাকড়াজান, কড়ইচালা, ডিবিগজারিয়া, কচুয়ার শালবাগান যেন গাছের শুকনো ঝরা পাতার বিছানা হয়ে গেছে।
নতুন পাতা গজানোর আগে এ সময় গজারি গাছের পুরোনো পাতা ঝরে যায়। এই পুরোনো পাতা ঝরার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওইসব শালবাগানের আশপাশের হাজারো শ্রমিক আর নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা। নিম্ন আয়ের এসব মানুষ পাতা ঝরার এ মৌসুমের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন।
গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার কালমেঘা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন নারী গজারি বনে ঝাড়ু ব্যবহার করে ঝরা পাতা একত্রিত করে স্তুপ করে রাখছেন। পরে বস্তায় ভরে ভ্যান গাড়ি করে বাড়িতে নিয়ে যাবেন। ওই গ্রামের জমেলা ভানু (৫০)  বলেন, ঘন্টা দুয়েক সময় পাতা কুড়ালে ৮-১০ বস্তা হয়। প্রতি বস্তা ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি করা যায়। প্রতিবছর এ সময়টার জন্য আমরা অপেক্ষা করি। অন্য কাজের পাশাপাশি পাতা কুড়িয়ে বাড়তি টাকা পাওয়া যায়।
রওশনারা আক্তার জানান, কিছু পাতা আমরা বিক্রি করি আর বাকি ঝরা পাতাগুলো আমরা সারা বছর নিজেদের রান্নার জন্য সংরক্ষণ করে রাখি।
উপজেলার আমতৈল গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘একটি ভ্যানে ১০-১২ বস্তা পাতা বহন করা যায়। ৩৫-৪০ টাকায় এক বস্তা পাতা বিক্রি করা যায়। এতে খরচ বাদে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা টেকে।’   উপজেলার ধোপারচালা গ্রামের গজারি বনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন নারী পাতা সংগ্রহ করছেন। সেখানে রুপারানী বর্মন নামের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর এক নারী বলেন, ‘আমি বাগান থেকে পাতা কুড়িয়ে মাথায় করে গিরস্তের বাড়িতে নিয়ে যাই। এক বস্তার দাম পাই ৪০ টাকা। দিনে আট-নয় বস্তা পাতা কুড়ানো যায়। এ সময় দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পাওয়া যায়। কল্পনা বর্মন নামের আরেক নারী বলেন, গজারি বনে জমে থাকা শুকনো পাতাগুলো কুড়িয়ে নেওয়ায় বন বিভাগের লোকজনও আমাদের ওপর বেশ খুশি। এ সময়ে সংসারে বাড়তি আয় হওয়ায় আমরাও খুশি।
উপজেলার কালিদাস বন বিট কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ‘বনের ভেতর জমে থাকা শুকনো পাতাগুলো দ্রুত নিয়ে গেলে আমরা নিশ্চিন্ত হই। কেননা, শুকনো পাতায় যদি আগুন লাগে, তাহলে বাগানের ক্ষতি হবে। এছাড়াও আগুনে বনের পোকামাকড় ও জীবজন্তু পুড়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সাধিত হয়। তাই যারা ঝরাপাতা কুড়ায় তাদের আমরা সবসময় উৎসাহিত করি।’ টাঙ্গাইল বন বিভাগের বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা আমিনুর রহমান  বলেন, উপজেলার ১১ বিট কার্যালয়ের আওতায় কমপক্ষে শতাধিক স্বল্প আয়ের নারী পুরুষ এ সময়ে ঝরা পাতা বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন। এছাড়াও মধ্যবিত্ত নারীরাও বিক্রির জন্য নয়, তারা নিজেদের সারা বছরের রান্নার জন্য জ্বালানি হিসেবে শুকনো পাতা সংগ্রহ করে ঘরে মজুত রাখেন।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights