মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

শিরোনাম :
ভুঞাপুরে হিট‌স্ট্রো‌কে আক্রান্ত হ‌য়ে অসুস্থ্য শিক্ষার্থী সখীপুরে শাল-গজারি বনে এক মাসে ২৫ স্থানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা নাগরপুরে তিনদিন ব্যাপী খাদ্যভিত্তিক পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ঘাটাইলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করছে দুর্বৃত্তরা টাংগাইলে নায়ক মান্নার বাসা থেকে ৬ শত ২০ মিটার রাস্তার উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন নাগরপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের ইন্তেকাল ঘাটাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত টাংগাইলে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বিতরন নাগরপুরে প্রবাসীকে হত্যার অভিযোগে দুইজন গ্রেফতার মাভিপ্রবিতে বিতর্কে জয়ী বিরোধী দল ‘ভগ্নমনস্কতা’

টাঙ্গাইল পৌরসভা আবর্জনা, দুগন্ধ ও পঁচা মশার বসবাস

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০২৪
  • ৬৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল পৌরসভায় এখন আবর্জনা, দুগন্ধ ও পঁচা মশার বসবাস। ডেঙ্গু মশার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে নগরবাসী। কোনভাবে মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। মশার হাত থেকে মসজিদে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও বাসায় কোন স্থানেই রক্ষা নেই। অথচ টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরা কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এরা নাগরিক সেবায় কোন কাজ করে না। টাঙ্গাইল শহরের কলেজ পাড়া নূরাণী জামে মসজিদে এসে নামাজ পড়া শেষে মনের কষ্টে এমন কথাগুলো বলেছিলেন নুর আলী (৪৭)।

টাঙ্গাইল পৌর এলাকার ডেঙ্গু মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গরম ও বৃষ্টিপাতের সাথে সাথে ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে ডেঙ্গু মশার বিস্তার। দিন-রাতে সব সময় মশার কামড়ে নাজেহাল পৌরবাসী। দিনের বেলায়ও অফিস কিংবা বাসা বাড়িতে মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে। আর সন্ধ্যা হলেই মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে আরো কয়েকগুণ। কিন্তু মশা নিধনের জন্য প্রতিবছর বাজেট থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও পৌরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাঙ্গাইল পৌরসভা প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা। ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভা গঠিত। লোকজনসংখ্যা ১,২৮,৭৮৫ লাখ। বৃষ্টিপাতের পর প্রাকৃতিকভাবে মশার প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভা মশা নিধন করছে না। ফলে বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। কিন্তু দীর্ঘদিনের দখল ও দূষণে পুরো লৌহজং নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এখানেই ময়লা-আবর্জনা ফেলছে পৌরবাসী। ফলে পানিতে ময়লার স্তূপ জমে প্রচুর মশা জন্ম নিচ্ছে।

টাঙ্গাইলের পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথেই মশার উপদ্রব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কয়েল, স্প্রে বা মশারি টাঙিয়েও মশার উৎপাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। রমজানের এই সময়ে ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীরা মসজিদে মাগরিব, এশাসহ তারাবির নামাজ আদায় করেন থাকেন। ঠিক এই সময়ে মশার উপদ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করে। মশার কামড়ে অতিষ্ট হয়ে নামাজ পড়া খুবই কষ্টকর বিষয় হয়ে যায়। এছাড়া কেউই স্বাভাবিকভাবে অন্য কোন কাজও করতে পারছেন না। পৌর এলাকার যেখানে সেখানে দূষিত বর্জ্য, বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা নোংরা পানি এবং সব সড়কের পাশেই ময়লা আবর্জনা ফেলায় পুরো শহর মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পৌর এলাকার কোথাও কোন ডাস্টবিন ও আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোন স্থান নেই। এছাড়া শহরের সর্বত্র নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার বিস্তার ক্রমশ বাড়ছেই। আর এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুসহ সকল বয়সের মানুষ। তাছাড়া মশার উৎপাতে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাতে চরম ব্যাঘাত ঘটছে।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, সারাদিন মশার উপদ্রব কম বেশী থাকলেও সন্ধ্যার পরপরই এই উৎপাত আরো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। সারা রাতভর মানুষ মশার যন্ত্রনায় রাত পার করেন। সন্ধ্যায় মশার কয়েল জ্বালিয়ে বা স্প্রে করে শিক্ষার্থীদের পড়তে বসেও রেহাই নেই। এমনকি মশার উৎপাতে নাজেহাল হয়ে মশারি টাঙিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করতে হচ্ছে। অনেকেই মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পৌর শহরের ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাসান আলি বলেন, কাউন্সিলর সাহেবকে ফগার মেশিন কাঁধে নিয়ে ফেসবুকে ছবি আপলোড করার জন্য দু’ একটি যায়গায় একদিন দেখা গিয়েছে। তারপর আর কোথাও দেখা যায়নি। মশার উৎপাত আগের মতোই রয়েছে। বিশ্বাস বেতকা এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল মিয়া জানান, মশা এতোই শক্তিশালী যে কয়েলও মানে না। কানের কাছে এসে পুন পুন শব্দ শুরু করে। পৌর মেয়রের কাছে দাবি যাতে মশা নিধনের একটা ব্যবস্থা নেয়। পূর্ব আদালত পাড়ার বাসিন্দা রাজু মিয়া বলেন, গতবছরও পৌরসভার উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় মশক নিধক ঔষুধ স্প্রে করা হয়েছে। কিন্তু এবার পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা মশা মারার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না। সেন্টাল ড্রেনও পরিষ্কার করা হচ্ছে না। ফলে মশা প্রতিনিয়ত বাড়ছেই।

শিক্ষার্থী রাব্বি মিয়া বলেন, সন্ধ্যা বেলা হলে মশার উত্তাপ বেড়ে যায়। পড়ার টেবিলে পড়তে বসতে পারি না। গত বছরের চেয়ে এবার মশার উপদ্রব যেন খুব বেশি। মশার কামড়ে সন্ধ্যা থেকেই অতিষ্ঠ হতে হয়। কয়েলের ধোঁয়া কিছু দিয়েই কিছু হচ্ছে না। সাবালিয়া এলাকার বাসিন্দা হোসনে আরা আক্তার বলেন, শুধু রাতে না, দিনেও ঘর একটু অন্ধকার হলেই মশা কামড়াচ্ছে। ফলে অনেক সময় দিনেও মশারি ব্যবহার করতে হচ্ছে। প্যারাডাইস পাড়ার মুন্নি বেগম বলেন, সন্ধ্যা নামার পর থেকেই ঘরে মশার উপদ্রব বেড়ে যাচ্ছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখলেও মশা কমছে না। আমার একটি ৩ বছরের ছেলে আছে। ঘুমানোর জন্য বিছানায় শুয়ালে মশারি টাঙানো ছাড়া আর কোন উপাই থাকে না। মেয়রের কাছে আমাদের একটাই দাবি মশা থেকে রক্ষা করেন।

আটপুকুর এলাকায় বাসা ভাড়া থাকেন কুদ্দুস মিয়া। তিনি বলেন, আমি আটপুকুর এলাকায় দ্বিতীয় তলায় বাসা ভাড়া নিয়ে আমার পরিবার নিয়ে থাকি। এখানে এতো মশা যে কয়েল ছাড়া বসে থাকা যায় না। পবিবার নিয়ে যে একটু আড্ডা দিব মশার কারণে তা দিতে পারি না। গত বছর পৌর কৃর্তপক্ষ মশা নিধকের জন্য স্প্রে দিয়েছিল। এবার এখন পর্যন্ত পৌর কৃর্তপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। পরিবেশবাদিরা জানান, মশা নিয়ন্ত্রণে পৌরসভা বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। টাঙ্গাইল পৌরসভা ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু মশার বংশ বৃদ্ধি ঘটছে। দ্রুত মশার বিস্তাররোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

চিকিৎসকরা জানান, এই সময়ে ডেঙ্গু মশার বংশ বিস্তার ঘটায়। এ সময় মশার কামড়জনিত রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গু, অ্যানোফিলিশ, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এজন্য সকলকে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

টাঙ্গাইল পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত সেনেটারি ইন্সেপেক্টর মিজানুর রহমান জানান, পৌরসভার প্রত্যেক কাউন্সিলরদের একটি করে স্প্রে মেশিন দেয়া হয়েছে। প্রত্যেককে মশার ডিম মারার জন্য কেরসিন ও মশা মারার জন্য ডেসিস ২.৫ ইসি নামক ওষুধ দেয়া হয়েছে। পৌরসভায় ৯টি ফগার মেশিন থাকলেও ৬টি মেশিন সচল রয়েছে। বাকি ৩টি মেরামতের জন্য দেয়া হয়েছে। এ মেশিনগুলো রোষ্টার আকারে প্রতিদিনই কোন না কোন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এছাড়া ১০টি বিশেষ ওয়ার্ডে দুইজন করে লেবার দেয়া আছে। লেবাররা এলাকায় পরিচ্ছন্নতার কাজ ও মশা নিধনের কাজ করে থাকে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, পৌর শহরের ১৮টি ওয়ার্ডে মশা নিধনের কাজ চলমান রয়েছে। ১৮ টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের সকলকে স্প্রে মেশিন ও ঔষধ দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন তারা মশা নিধনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কাউন্সিলররা সঠিকভাবে মশা নিধনের কাজ করছে কি না, তা আমরা সব সময় মনিটরিং করি। ফগার মেশিন আমাদের অতিরিক্ত সেবা হিসেবে পরিচালিত হয়। ফগার মেশিন আমাদের মেইন সার্ভিস না। যখন যেখানে ফগার মেশিন প্রয়োজন বা কেউ চাইলে আমরা তা পাঠাই। আমাদের মেইন সার্ভিস হল স্প্রে মেশিন।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights