মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

শিরোনাম :
টাংগাইলে আজ কারফিউ সকাল ৭টা হতে সন্ধা ৭টা পর্যন্ত শিথিল কোরিয়ান শিক্ষার্থীদের মাভাবিপ্রবি পরিদর্শন টাংগাইলে কারফিউ শিথিল করায় জনজীবন স্বাভাবিক হয়েছে মির্জাপুরে বিয়ের দাবিতে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে কলেজছাত্রীর অবস্থান টাংগাইলে আন্দোলনকারীদের জ্বালাও-পোড়াও হামলা-ভাঙচুর মামলায় গ্রেপ্তার ১৭৫ কলম্বিয়াকে হারিয়ে কোপার সর্বোচ্চ ১৬ বার চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ঘাটাইলের সাগরদীঘি ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ বাসাইলে বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ মির্জাপুরে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এর ৫ম মৃত্যু বার্ষিকী পালন টাংগাইলে কোট সংস্কারের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

টাঙ্গাইল গজারি বনে অগ্নিকাণ্ডে কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ ভস্মীভূত

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১২ মে, ২০২৪
  • ১০৫ বার পড়া হয়েছে

জয়নাল আবেদীনঃ টাঙ্গাইলের গজারি বনে অগ্নিকাণ্ডে কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ ভস্মীভূত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্য। বেহাত হচ্ছে বনভূমি। কিন্তু বন অপরাধ দমনে সরকারি উদ্যোগ খুব একটা দৃশ্যমান নয়।

জানা যায়, টাঙ্গাইল বন বিভাগের আটটি রেঞ্জে ১ লাখ ২২ হাজার একরে বনাঞ্চল বিস্তৃত। এখানে গজারির পাশাপাশি কাইকা, সিধা, আজুলি, জিগা, ভূতুম, জারুল, আনাই, হরিতকিসহ ৫০৩ প্রজাতির বৃক্ষ, ভেষজ উদ্ভিদ ও গুল্মলতাদির দেখা মেলে। সর্বশেষ তথ্যে, প্রায় ৪৫ হাজার একর বনভূমি জবরদখলে গেছে। সরকারি হিসাবে ৩৫ হাজার একর আর বেসরকারি সংস্থা সেডের তথ্য অনুযায়ী ২০ হাজার একরে গজারি বন রয়েছে। কিন্তু ক্রমাগত অগ্নিকাণ্ড আর জবরদখলে গজারি বন এখন বিলুপ্তির পথে। এবারের টানা খরায় ধলাপাড়া, বহেড়াতলী, বাঁশতৈল, দোখলা এবং জাতীয় সদর উদ্যান রেঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটছে। প্রায় ৪০০ একর বনাঞ্চল এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে একটি বেসরকারি সংস্থা জানায়। শুধু বহেড়াতলী রেঞ্জে এক মাসে এক ডজন, ধলাপাড়া রেঞ্জে তিনটি এবং দোখলা ও জাতীয় সদর উদ্যান রেঞ্জে ছোটবড় ২৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গজারি বনে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ‘পরিবেশ ও প্রতিবেশ’ নামক এক সংস্থার গবেষণায় বলা হয়—বসন্তে পর্ণমোচী বৃক্ষের শুকনা পাতার পুরু আস্তরন পড়ে বনতলে। ফায়ার বে সিস্টেম না থাকায় আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এ আগুনে শুধু গাছপালা, গুল্মলতাদি ও ভেষজ উদ্ভিদই পোড়ে না, বন্যপ্রাণী, পশুপাখি ও মৌমাছির আবাসস্থল ধ্বংস হয়। মাটির নিচের বহু কীটপতঙ্গ সমূলে বিনাশ হয়। সর্বোপরি বনের ইকোসিস্টেম ধ্বংস হয়।

গত শুক্রবার দোখলা সদর বিটের পীরগাছায় অগ্নিকাণ্ডে ২৫ একর বেত ও গজারি বন পুড়ে যায়। আগুন নেভাতে গেলে ভূমিখেকোরা বনকর্মী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা চালায়। গত ২২ এপ্রিল একই বিটের অরনখোলায় সুফল প্রকল্পের ৩০ একর বনে দুবৃর্ত্তরা আগুন দিলে ৫ হাজার গাছপালা পুড়ে যায়। গত ৬ এপ্রিল লহুরীয়া বিটে অগ্নিকাণ্ডে দেড় একর বন পুড়ে খাক হয়। পরিবেশ কর্মী আবু রায়হান খান জানান, বনে অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে ভূমিদস্যুরা। এরা স্থানীয় কিছু মানুষকে দিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে আগুন লাগায়। বিনিময়ে পুড়ে যাওয়া গাছপালা থেকে তারা লাকড়ি পায়। এরপর বনের বড় গাছ কেটে নেয় দুর্বৃত্তরা। সবশেষে বিরান বনভূমি দখলে নেয় ভূমি দস্যুরা। তারপর দখলি জমিতে লাগায় কলা আর আনারস চারা। বিগত তিন বছরে শুধু জাতীয় সদর উদ্যান, মধুপুর ও দোখলা রেঞ্জের প্রায় ৪ হাজার একর বনভূমি এভাবে বেহাত হয়েছে।

মধুপুর বনাঞ্চলের দোখলা গ্রামের অবিনাশ কোচ জানান, বনে আগুন দিলে চার পক্ষের লাভ। যেমন স্থানীয় শ্রমিক শ্রেণির মানুষ লাকড়ি পায়, চোরেরা গাছ পায়, ভূমি দস্যুরা জমি পায় আর ‘ইনাম’ পাওয়ার একটি দলও আছে। এই যে চার দুষ্টচক্র, তাদের রোখার কেউ নেই। মধুপুর বনাঞ্চলের ২১ জন প্রভাবশালী ভূমি দস্যুর কবজায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার একর বনভূমি রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয় ৪ বছর আগে। কিস্তু রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীগত প্রভাব থাকায় বনভূমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করা যায়নি। এসব রুই-কাতলার দেখাদেখি এখন ছোটখাটো ভূমি দস্যুরাও বনে আগুন দিয়ে বন বিনাশ করছে। লহুরিয়া বিট অফিসার শাহ আলম জানান, স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কেউ কেউ বন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

মধুপুর বনাঞ্চলের সহকারী বন সংরক্ষক আশিকুর রহমান জানান, অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে বনভূমি জবরদখল এবং অগ্নিকাণ্ড বন্ধে তারা সচেষ্ট রয়েছেন। টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাজ্জাদুজামান জানান, গজারি বনে আগুন লাগলে লাভ ও ক্ষতি দুটোই হয়। যেমন বৃষ্টির পর পুড়ে যাওয়া বনতলে দ্রুত গজারি গাছের রিজেনারেশন হয়। তবে পশুপাখি, কীটপতঙ্গ ও প্রাণবৈচিত্র্যের বেশ ক্ষতি হয়। প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্টাফ না থাকায় বনে অগ্নিসংযোগ এবং বনভূমি জবরদখল ঠেকানো কঠিন হচ্ছে।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights