নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের বাসাইলে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঝগড়ায় এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিক্ষার্থীর নাম জিজান হাসান দীপ্ত (১৮)। গতকাল সকাল সোয়া ৬টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বাসাইল পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রিন্স মাহমুদ এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। কাউন্সিলর প্রিন্স মাহমুদ বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হয়ে কলেজছাত্র জিজান হাসান দীপ্ত ২৪শে জানুয়ারি থেকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হামলার ৯দিন পর জিজান হাসান দীপ্ত গতকাল ভোরে মৃত্যুবরণ করে। এদিকে কিশোর গ্যাংয়ের মূলহোতা শাকিল আহাম্মেদ ওরফে টিকটক শাকিলসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত জিজান হাসান দীপ্ত সখীপুর উপজেলার চাকদহ গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম মল্লিকের ছেলে। দীপ্ত ঢাকায় বিজিবি পিলখানায় অবস্থিত বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ থেকে ২০২৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। দীপ্ত মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
এ ঘটনায় জিজান হাসান দীপ্তর মা সোহেলী সুলতানা দিপা বাদী হয়ে ২৭শে জানুয়ারি বাসাইল থানায় শাকিল আহাম্মেদ (২৫), আলমগীর হোসেন (২৪), স্বাধীন মিয়া (২০), মনা মিয়া (১৯), অনিক মিয়া (১৯), রাহাত হাসান (২০), জিহাদ মিয়া (১৯) ও সীমান্ত মিয়ার (১৯) নাম উল্লেখ করে আরও ৩-৪ জন অজ্ঞাত যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর পুলিশ ঘটনার মূলহোতা শাকিল ও তার সহযোগী অনিক এবং আসাদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। শাকিল ও অনিককে গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি রাম দা ও লোহার পাইপে মোটরসাইকেলের চেইন প্রিমিয়াম ঝালাইযুক্ত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এরপর শাকিল ও অনিকের বিরুদ্ধে থানায় অস্ত্র আইনেও মামলা হয়েছে। বর্তমানে তারা ৩ জন কারাগারে রয়েছে। জানা যায়, জিজান হাসান দীপ্ত গত ২৩শে জানুয়ারি বাসাইল দক্ষিণপাড়া এলাকায় তার নানা রফিকুল ইসলামের বাড়িতে বেড়াতে আসে। পরে ২৪শে জানুয়ারি দুপুরে সমবয়সী বাসাইল উত্তরপাড়ার নাঈম ও সজল খানের সঙ্গে জিজান হাসান দীপ্ত বাসাইল বাজারে বেড়াতে যায়। সেখান থেকে নাঈমকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান শাকিল বাসাইল বাজারের একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেয়। এ সময় জিজান হাসান দীপ্ত ও সজল খানও উপস্থিত ছিল। এরপর সন্ধ্যায় আবারো তারা ৩ জনে মিলে বাসাইল বাজারের দিকে যাওয়ার সময় বাসাইল মনি ক্লিনিকের সামনের মোড়ে পৌঁছালে কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান শাকিলের নেতৃত্বে অতর্কিত তাদের ওপর হামলা চালায়।
পরে নাঈম ও সজল প্রাণ রক্ষার্তে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় জিজান হাসান দীপ্তকে ধারালো দা, কাঠের স্ট্যাম্প, লোহার পাইপে মোটরসাইকেলের চেইন প্রিমিয়াম ঝালাইযুক্ত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে এলে কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান শাকিলসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে দীপ্তকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর সেখান থেকে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। ওইদিন থেকে ঢাকার একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিল জিজান। মামলার আইও বাসাইল থানার এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছেলেটি সকালে মারা গেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে মূলহোতা শাকিল ও অনিককে রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’