মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১২:৫২ পূর্বাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

শিরোনাম :
ভুঞাপুরে হিট‌স্ট্রো‌কে আক্রান্ত হ‌য়ে অসুস্থ্য শিক্ষার্থী সখীপুরে শাল-গজারি বনে এক মাসে ২৫ স্থানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা নাগরপুরে তিনদিন ব্যাপী খাদ্যভিত্তিক পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ঘাটাইলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করছে দুর্বৃত্তরা টাংগাইলে নায়ক মান্নার বাসা থেকে ৬ শত ২০ মিটার রাস্তার উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন নাগরপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের ইন্তেকাল ঘাটাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত টাংগাইলে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বিতরন নাগরপুরে প্রবাসীকে হত্যার অভিযোগে দুইজন গ্রেফতার মাভিপ্রবিতে বিতর্কে জয়ী বিরোধী দল ‘ভগ্নমনস্কতা’

ভূঞাপুরে হুমকির মুখে প্রধানমন্ত্রীর উপহার শত শত কোটি টাকার বাঁধ

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৬৩ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ যমুনা নদীর বামতীর ঘেঁষা ভূয়াপুর-তারাকান্দি সড়কটি ব্যবহৃত হয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হিসাবেও। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায়, শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে ভুঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয়রা দাবি করেন, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার শাখারিয়া স্লুইস গেট থেকে গুলিপেচা মাঝে ভুঞাপুর উপজেলার জগৎপুরার ৩কিলোমিটার অংশে অন্তত ১০টি স্থানে, বাঁধ ঘেঁষে বসেছে বালু বিক্রির অবৈধ ঘাট। দিন-রাত বাঁধের ২০মিটার কাছেই শক্তিশালী একাধিক ভেকু বসিয়ে ১০চাকার ড্রাম ট্রাকে  বালু উত্তোলন করে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। এই অংশে নদীর তীর সড়ক লাগোয়া হওয়ায় বাঁধটি অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় কৃষকরা ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রতিদিন শত শত লাইসেন্সবিহীন ভারি ড্রাম ট্রাকে ওভার লোডে বালু পরিবহন করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। সংস্কারের এক বছর পার না হতেই, নলিন থেকে গোপালপুর উপজেলা সদরে যাওয়ার সড়কে একাধিক স্থানে গর্তের সৃষ্টি হতে শুরু করেছে।  অবাধে এসব ট্রাক চলাচল করায় গোপালপুর শহরে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
গতবছর বালুবাহী ট্রাক দুর্ঘটনায় নিহত হন নলিন বাজারের ব্যবসায়ী হাকিম, ভেঙ্গুলা গ্রামের টিটু, জগৎপুরা গ্রামের আ: রশিদ এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেন কামদেববাড়ী গ্রামের গৃহবধূ বানেছা বেগম, শিশু রাণু সহ অজ্ঞাতরা। ঔ সময় অবৈধ বালুবাহী ট্রাক বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন গুলিপেচা গ্রামবাসীসহ স্থানীয়রা, প্রতিবাদ সমাবেশ করে নলিন বাজারের ব্যবসায়ীরা এবং মানববন্ধন করেন গোপালপুর উপজেলা নাগরিক সমাজ ও ছাত্র ছাত্রীরা।
কারা বালু উত্তোলন করছে এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয়রা জানান, প্রকাশ্যই তো বালু তোলা হচ্ছে, সেই বালু উপজেলা শহরের মধ্যে দিয়েই দিন-রাত অবাধে পরিবহন করা হচ্ছে। সঠিক তদন্ত করলেই নাম বেরিয়ে আসবে।
স্থানীয়রা আরো জানান, এই ১০টি বালুর ঘাট মালিকরা মিলে সমিতি করেছে। পালাক্রমে প্রতিটি ঘাট টানা ৩দিন (দিন-রাত) বালু উত্তোলন করতে পারে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ভুঞাপুর উপজেলার জগৎপুরার অংশে বড় বড় গর্ত করে বালু উত্তোলন করা  যমুনার বুক ক্ষত বিক্ষত করার চিহ্ন। বালু উত্তোলন করার কাজে নিয়োজিত ভেকু চালকদের কাছে ঘাট মালিকদের নাম জানতে চাইলে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।
নলিন গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া বলেন, বাঁধ ঘেঁষে বালু তোলার কারনে প্রতিনিয়ত নদী পূর্ব দিকে সরে এসেছে, এতে বাঁধটি অত্যন্ত ঝুঁকিতে পড়েছে। বালু কেটে বড় বড় গর্ত করায় আমরা ফসল আবাদ করতে পারছিনা। প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত ২৪-২৫ হাজার টাকার বাদাম উৎপাদন হতো।
স্থানীয় বাসিন্দা খলিল মিয়া জানান, এসব ঘাট মালিকরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। এতো টাকার বাঁধ ঝুঁকিতে ফেলে বালু উত্তোলন করছে, নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করা হয়। তারা চলে যাওয়ার পর পরই আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়। এতে বেড়িবাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে, বর্ষা মৌসুমে বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে টাঙ্গাইলের কয়েকটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষের ও ফসলি জমির ক্ষতি সাধন হবে।
সত্যতা স্বীকার হেমনগর ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তালুকদার হীরা বলেন, অবৈধভাবে গড়ে উঠা বালু মহালগুলো অধিকাংশ ভুঞাপুরের সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছে, কিন্তু নদী থেকে উঠেই গাড়িগুলো গোপালপুর সীমানার সড়ক ব্যবহার করছে। ১০চাকার ট্রাকের ওভারলোডে সড়কের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হচ্ছে। উপজেলা আইন শৃঙ্খলার সভায় বিষয়গুলো আমি উপস্থাপন করেছি।
গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমদাদুল ইসলাম তৈয়ব বলেন, এবিষয়ে ট্রাফিক বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে। আমি এই থানায় যোগদানের পর কোন বালু ট্রাকে দুর্ঘটনার কোন অভিযোগ আসেনি।
গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, এ বিষয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ৫টির বেশি অভিযানে জরিমানা ও এক্সাভেটরের চাবি জব্দ করা হয়েছে।  অভিযান পরিচালনার সময় লোকজন সব দৌড়ে পালিয়ে যায়। চালক না থাকায় এক্সাভেটরগুলো জব্দ করে নিয়ে আসতে পারিনা। বালুবাহী অবৈধ গাড়ি বন্ধে এবং বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে জানিয়েছি। ইউএনও সাহেবরা একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছে। এ বিষয়ে দেখতে আমিও সরেজমিনে যাবো।
সড়ক রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ব্যয় কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বাইরে আছি ফাইলপত্র দেখে পরে জানাবো।
গনমাধ্যমে প্রকাশিত সূত্রে জানা যায়, প্রথমে শাখারিয়া-সোনামুই পর্যন্ত ২০০ কোটি বরাদ্দ করা হলেও, পরবর্তীতে নলিন বাজারের দক্ষিণ থেকে তাড়াই-গাড়াবাড়ি পর্যন্ত বর্ধিত করে ৪৫০ কোটি বরাদ্দ করা হয়। উত্তরে পিংনা পর্যন্ত যমুনা নদীর বামতীর সংরক্ষণ কাজ করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের বন্যায় যমুনা নদী ব্যাপক ভাঙ্গনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হেমনগর ইউনিয়নে নলিন বাজার অংশ। এসময় নদীতে বিলীন হয়ে যায় বাঁধের পশ্চিমে থাকা শাখারিয়া ও নলিন গ্রামের একটি অংশ।
সে সময় নলিন হাটের পাশে গড়ে উঠা মসজিদ, স্কুল, মাদরাসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখতে ব্যাপক পরিশ্রম করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
নদী ভাঙ্গনের কারণে পরবর্তীতে বন্যা এলেই ঝুঁকি থাকতো গোপালপুর, ঘাটাইল, ধনবাড়ী, মধুপুর ও কালিহাতি উপজেলার মানুষ। প্রত্যেকবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায়, জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলে ভুঞাপুর-তারাকান্দি সড়কটি কোনমতে রক্ষা পায়।
২০১২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেমনগর কলেজ মাঠে এক জনসভায় অংশ নিলে, ভুঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জোড়ালো দাবি উঠে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসাবে বাঁধটি নির্মাণ হয়। প্রকল্পটি গতবছর অক্টোবর মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights