মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১১:৩৭ অপরাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

শিরোনাম :
ভুঞাপুরে হিট‌স্ট্রো‌কে আক্রান্ত হ‌য়ে অসুস্থ্য শিক্ষার্থী সখীপুরে শাল-গজারি বনে এক মাসে ২৫ স্থানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা নাগরপুরে তিনদিন ব্যাপী খাদ্যভিত্তিক পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ঘাটাইলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করছে দুর্বৃত্তরা টাংগাইলে নায়ক মান্নার বাসা থেকে ৬ শত ২০ মিটার রাস্তার উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন নাগরপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের ইন্তেকাল ঘাটাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত টাংগাইলে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বিতরন নাগরপুরে প্রবাসীকে হত্যার অভিযোগে দুইজন গ্রেফতার মাভিপ্রবিতে বিতর্কে জয়ী বিরোধী দল ‘ভগ্নমনস্কতা’

মাভিপ্রবিতে ১৪ প্রার্থীর চাকুরি নিতে ঘুষ দেয়ার ঘটনার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০২৪
  • ৫২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) বিভিন্ন পদে চাকুরির জন্য ১৪ প্রার্থী ৪৯ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় গেস্ট হাউজের সহকারী রেজিস্ট্রারের কাছে দিয়েও চাকুরি না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও অঘটন ঘটায় বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষে প্রকৃত ঘটনা জানতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দীর্ঘদিন অতিবাহত হলেও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছোটখাট পদে জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়ে ওই নিয়োগ পাইয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় গেস্ট হাউজের সহকারী রেজিস্ট্রার মুহা. মুজাম্মেল হোসাইন, গেস্ট হাউজের বাবুর্চি জাহিদ কাজী এবং হিসাব অফিসের উপ-পরিচালক সত্য সাহার সমন্বয়ে চক্রটি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ৪৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করে। পরে ওই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে আত্মসাত করেন। যাদের কাছ থেকে টাকা গ্রহন করা হয়েছেন তাদের মধ্যে ১৪ জনের নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শফির কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা, সাগরের কাছ থেকে আট লাখ, রাসেলের কাছ থেকে পাঁচ লাখ, ফেরদৌসীর কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ, হানিফার কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ, নাজমার কাছ থেকে আড়াই লাখ, মিতুর কাছ থেকে দুই লাখ, লাল মিয়ার কাছ থেকে ছয় লাখ, শাহনাজের কাছ থেকে দেড় লাখ, ফারুকের কাছ থেকে চার লাখ, হাসানের কাছ থেকে দুই লাখ, মামুনের কাছ থেকে চার লাখ, হৃদয়ের কাছ থেকে এক লাখ এবং এতিম খানার জনৈক খালার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও চাকুরি না হওয়ায় প্রার্থীরা তাদের দেওয়া টাকা ফেরত চাইতে চাপ দিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে চাকুরি বা দেওয়া টাকা ফেরত না পাওয়ায় প্রার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাপক অসন্তোষের মধ্যে চাপে পড়ে তিন ব্যক্তিকে দেওয়া টাকার পরিমাণ থেকে কিছু অংশ ফেরত দেওয়া হয়। চাপ সৃষ্টি করায় শফিকে পাঁচ লাখের মধ্যে চার লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। অনুরূপভাবে সাগরকে আট লাখের মধ্যে ছয় লাখ ও ফেরদৌসীকে সাড়ে তিন লাখের মধ্যে দুই লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। কয়েক ব্যক্তি বিক্ষুব্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজের বাবুর্চি মো. জাহিদ কাজীকে মারধর করে। বাধ্য হয়ে গেস্ট হাউজের বাবুর্চি মো. জাহিদ কাজী বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের পরিচালকের মাধ্যমে গত বছরের (২২ অক্টোবর) রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রক্টর প্রফেসর ডক্টর মীর মো. মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি গঠনের দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তদন্তের রিপোর্ট এখনও আলোর মুখ দেখেনি। অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান এ বিষয়ে কঠোর গোপণীয়তা বজায় রাখছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেন জানান, তার বোন আছমাকে চাকুরি দেওয়ার জন্য চার লাখ টাকা গেস্ট হাউজের সহকারী রেজিস্ট্রার মুহা. মুজাম্মেল হোসাইনকে দেন। মুজাম্মেল হোসাইন গেস্ট হাউজের রেজিস্ট্রারের অফিস থেকে নিজ হাতে টাকা নেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি হলেও কমিটি শুধুমাত্র তদন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোকপি মেশিন অপারেটর ফেরদৌসী আক্তার জানান, তার ছোটবোন শাহিদা সুলতানাকে অ্যাডহক ভিত্তিতে উচ্চমান সহকারী পদে চাকুরির জন্য ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে প্রথম পর্যায়ে পাঁচ লাখ টাকা এবং তার ভাগ্নি জামাই আবদুল্লাহকে পিয়ন পদে চাকুরির জন্য সাত লাখ টাকার চুক্তিতে প্রথম পর্যায়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন। টাকাগুলো তার কাছ থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার মুহা. মুজাম্মেল হোসাইন নেন। এরমধ্যে চাকুরি দিতে না পারায় বোন শাহিদা সুলতানার জন্য নেওয়া পাঁচ লাখ টাকা এবং ভাগ্নি জামাই আবদুল্লাহর জন্য নেওয়া টাকা থেকে দুই লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। তিনি এখনও দেড় লাখ টাকা পেলেও ফেরত পাননি। তিনি জানান, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি গত ডিসেম্বর মাসে তাকে সাক্ষাতকার দেওয়ার জন্য ডাকলে তিনি কমিটির সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

স্থানীয় শফিকুল ইসলাম শফি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাবুর্চি লালনের মাধ্যমে জানতে পেরে তার ভাতিজা নবাব হোসেন নয়নকে পিয়ন পদে চাকুরি দেওয়ার জন্য সহকারী রেজিস্ট্রার মুহা. মুজাম্মেল হোসাইনের কাছে নগদ ছয় লাখ টাকা দেন। মুহা. মুজাম্মেল হোসাইন ওই টাকা গ্রহণের বিপরীতে বাবুর্চি মো. জাহিদ কাজীর ছয় লাখ টাকার একটি ব্যাংক চেক প্রদান করেন। এছাড়া বাবুর্চি লালনের মাধ্যমে স্থানীয় খোরশেদ আলম সাগর পিয়ন পদে চাকুরির জন্য ছয় লাখ টাকা দেন। টাঙ্গাইল পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরুল ইসলাম রকি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন-আয়াসহ নানা ছোটখাট পদে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে গেস্ট হাউজের সহকারী রেজিস্ট্রার মুহা. মুজাম্মেল হোসাইন, বাবুর্চি মো. জাহিদ কাজী সহ একটি চক্র অনেক লোকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। লোকজন নানা গৃহপালিত পশু, জমি-বাড়ি বিক্রি করে চাকুরির জন্য টাকা দিয়েছেন। এখন চাকুরি না পেয়ে অনেকেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রতিকার পেতে তার কাছে আসছেন। তিনি জানান, প্রায় দেড় মাস আগে চাকুরি প্রার্থীরা দেওয়া টাকা ফেরত পেতে বাবুর্চি মো. জাহিদ কাজীকে অলোয়া গ্রামে আটকে রেখে মারধর করে। খবর পেয়ে তিনি সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন এবং টাকা ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। পরে তিনি আর কথা রাখেন নি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজের বাবুর্চি মো. জাহিদ কাজী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন-আয়াসহ বিভিন্ন ছোটখাট পদে জনবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য অনেকের কাছ থেকেই টাকা নেওয়া হয়েছে। সব টাকা গেস্ট হাউজের সহকারী রেজিস্ট্রার মুহা. মুজাম্মেল হোসাইন নিয়েছেন। প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে তিনি অনেকের বাসায়ই তাকে সাথে নিয়ে গিয়েছেন। অনেক সময় তাকে দিয়ে টাকা আনিয়েছেন। এখন চাকুরি দিতে না পেরেও টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। ৩-৪ জনের টাকা ফেরত দিয়েছেন। তিনি জানান, চাকুরি প্রার্থীদের চাপের মুখে তিনি মুহা. মুজাম্মেল হোসাইনের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তাকে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান। টাকা ফেরত দিতে না পারায় তিনি প্রার্থী ও তাদের আত্মীয়দের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন- মারধরের শিকারও হয়েছেন। মুহা. মুজাম্মেল হোসাইন তাকে অফিসের কেচি গেটের সামনে পাহারায় রেখে জনৈক নারীর সঙ্গে অনৈতিক কাজে একাধিকবার লিপ্ত হয়েছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গেস্ট হাউজের সহকারী রেজিস্ট্রার মুহা. মুজাম্মেল হোসাইন জানান, তিনি কাউকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। কোন উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশও করেন নাই। তিনি বাবুর্চি মো. জাহিদ কাজীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা পাওনা রয়েছেন। ওই টাকা যাতে না দিতে হয় সেজন্য তিনি নানা ধরনের উদ্ভট কথা বলে বেড়াচ্ছেন। অফিস চলাকালে জনৈক নারীকে নিয়ে অনৈতিক কাজ করার বিষয়ে তিনি জানান, এসব সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য জাহিদ কাজী এসব কথা বলছেন।

বিশ্বদ্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান প্রক্টর প্রফেসর ডক্টর মীর মো. মোজাম্মেল হকের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তদন্ত কমিটির অপর সদস্য অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ খাদেমুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। চলমান বিষয়ে আগেই কোন বক্তব্য দেওয়া সমীচীন নয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর ফরহাদ হোসেন জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে কারও যদি টাকা বেশি হয় এবং কাউকে দিয়ে দেয়- তাহলে তার কিছু করার নেই।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights