জানা গেছে, যানজটের ভোগান্তি দূর করতে উত্তরবঙ্গগামী গাড়িগুলো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ওয়ানওয়ে (একমুখী) চলাচল করবে। ঢাকাগামী যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে গোলচত্বর দিয়ে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা প্রবেশ করবে। এতে করে যানজট অনেকটা কমে যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা থেকে যানবাহনগুলো চার লেন সড়কের সুবিধায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত অতি দ্রুত আসতে পারে।
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের চার লেনের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প সমন্বয়ক মিজান সরোয়ার বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৬০০ কোটি টাকার কাজটি শুরু হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। সম্প্রতি করা সমীক্ষায় এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত মোট ৭৩টি দুর্ঘটনায় মধ্যে ৫৪টিই হয়েছে সেতুতে। আশা করছি এবার ঈদে মহাসড়কে যানজট হবে না।’
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ১৯/২০ হাজার যানবাহন সেতু দিয়ে পারাপার হয়। ঈদে এর সংখ্যা আড়াই থেকে তিনগুণ বেড়ে যায়। গতবছর সর্বোচ্চ ৫৬ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছিল। যখন সেতুর ওপর গাড়ির চাপ পড়ে তখন টোল আদায়ে সমস্যা দেখা দেয়। সাময়িকভাবে টোল বন্ধ থাকে। এরজন্য যানজট কিছুটা হয়। এবার সেতুর দুইপাশে ৯টি করে ১৮টি এবং মোটরসাইকেলের জন্য ২টি করে ৪টি টোলবক্স বসানো হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মহাসড়কে চার লেনের কাজে ধীরগতি চলছে। এরমধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এবার লম্বা ছুটি হওয়ায় মহাসড়কে যানজট হবে না।’
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খান বলেন, ‘ঈদে ঢাকামুখী যানবাহনগুলো ভূঞাপুর-এলেঙ্গা আঞ্চলিক সড়ক হয়ে চলাচল করে। এখানে খানাখন্দগুলো ঈদের আগেই মেরামত করা হবে।’
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ‘এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন একমুখী চলাচল করবে। আর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর বিকল্প সড়ক হিসেবে গোলচত্বর থেকে উত্তর দিকে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসবে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘দুর্ভোগ লাঘবের জন্য যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়লে মহাসড়কের পাশে পেট্রোল পাম্প, হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে যাতে শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে সেজন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২৫টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ইফতার ও সেহরিতে যাতে অসুবিধা না হয় সে জন্য এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত যানজটে আটকে পড়া মানুষের মাঝে পানি, শুকনা খাবার সরবরাহের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এবার ঈদে ৭০০ পুলিশ হাইওয়েতে ডিউটি পালন করবে। অনেক সময় ঈদের আগের দিন রাস্তা তুলনামূলকভাবে ফাঁকা হয়ে যায়। অনেক ব্যবসায়ীরা ফাঁকা রাস্তায় বাড়িতে যেতে নিলে ছিনতাইকারী বা মলম পার্টির খপ্পরে পড়তে পারে। সে জন্য সব পুলিশ ঈদের সাতদিন আগে থেকে ঈদের পরের দুইদিন পর্যন্ত হাইওয়েতে ডিউটি করবে।’
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, ‘এ মহাসড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহগামী মানুষের ভোগান্তিমুক্ত ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করি সাধারণ মানুষ এবারো নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবেন।’