মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১০:১৩ অপরাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

মধুপুরে উপজেলা নির্বাচনে সাবেক দুই মন্ত্রীর প্রভাব, আওয়ামীলীগে অনৈক্য!!

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
  • ৪৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দেশের প্রধম ধাপের মধুপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামীকাল বুধবার। টাঙ্গাইলের অন্য উপজেলার নির্বাচন থেকে মধুপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকের প্রতিদ্বন্দিতায়  এ নির্বাচন তিন ধারায় এগিয়ে গেলেও সাবেক দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর প্রভাবে দুই ধারায় রূপ নিয়েছে। ২৩ বছর আগের ৭ম সংসদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বনাম সদ্য বিলুপ্ত একাদশ সংসদের কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ধারায় এসে ঠেকেছে। তারা এবার পৃথক দুই প্রার্থীর পক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে মধুপুরের রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছেন। বিষয়টি ভবিষ্যত স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে অনৈক্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মধুপুরের উপজেলা নির্বাচনের স্বরূপ বা মেজাজটা এ কারণে ভিন্ন ও বিশেষ অর্থপূর্ণ। স্থানীয় রাজনীতি সচেতন মানুষজনের সাথে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

তাদের ভাষ্যমতে, দেশের রাজনীতির ইতিহাসে গৌরবোজ্জল পরিবারের সন্তান হিসেবে আবুল হাসান চৌধুরী টাঙ্গাইল-১ আসনে পর পর দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে ষষ্ঠ সংসদে বিরোধী দলীয় হুইপ ও পরে ৭ম সংসদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ওই সময় থেকে গত দুই যুগে এ আসনের জনগণের কাছে তিনি সমান তালে জনপ্রিয়। অন্যদিকে ছাত্র রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধ করে একেবারে মাঠ থেকে উঠে আসা সরকারি চাকরিজীবী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ১৯৯৬ সালের আলোচিত জনতার মঞ্চ’র অন্যতম রূপকার হিসেবে দলের নজরে আসেন। নাটকীয় রহস্যের নানা ঘটনায় মন্ত্রী থাকা কালে আবুল হাসান চৌধুরী ছিটকে পড়ায় একই আসনে ৮ম সংসদ থেকে টানা ৫ বারের এমপি হয়েছেন তিনি। একবার খাদ্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের এবং একাদশ সংসদে প্রথম কৃষিবিদ কৃষিমন্ত্রী। তিনিও এ জনপদের জনপ্রিয় নেতা। আবুল হাসান যুগপৎ দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন, অপরদিকে ড. রাজ্জাক প্রথমে কৃষি বিষয়ক সম্পাদক এবং বর্তমানে প্রেসিডিয়াম সদস্যের দায়িত্বে থাকা জাতীয় নেতা। ২৩ বছর আগে রাজনীতির অঙ্গণে কাছাকাছি অবস্থান করা এ দু’জন এবার উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অনেকটা মুখোমুখি। দলীয় নির্দেশনা ও আচরণবিধির কারণে ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি কৌশলে এবং কায়সার চৌধুরী প্রকাশ্যে নির্বাচনে নেমেছেন।

গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আলোচিত মধুপুরের আওয়ামী রাজনীতিতে শুরু হয়েছে দ্বি ধারা। উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু সংসদ নির্বাচন করার অভিপ্রায়ে গত বছর মে মাসে গণমাধ্যমে প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। স্থানীয় রাজনীতিতে মূলত এ নিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে ড. রাজ্জাকই দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ৫ম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। চার মাসের মাথায় উপজেলা নির্বাচন এসেছে। আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক দলীয় নিষেধাজ্ঞা না মেনে নিজের পছন্দের প্রার্থী উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলীকে দলের প্রার্থী বলে মাঠে নামিয়েছেন। তফসীল ঘোষণার আগে তার প্রার্থী বলে বিভিন্ন জনসভায় ইয়াকুব আলীকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বলে ভোট প্রার্থনা করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে ছরোয়ার আলম খান আবু এবং ড. রাজ্জাকের মধ্যে সম্পর্কের সেই যে ছেদ তা আর জোড়া লাগেনি। এমপি ড. রাজ্জাক এ নির্বাচনের তার চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াকুব আলী এবং মেয়র সিদ্দিক হোসেন খানকে সামনে এগিয়ে দিয়ে মধুপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মধুপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি খন্দকার শফিউদ্দিন মনিসহ দলের একটি অংশ ড. রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। দল এভাবে বিভক্ত হওয়ায় নেতা কর্মী সমর্থকরাও বিভক্ত। এমন অবস্থায় ড. রাজ্জাককে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে নির্বাচনী মাঠ ছাড়েননি বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান আবু। গত প্রায় দুই যুগ আগে মধুপুর থেকে রাজনীতির মাঠ ছাড়া সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার এই ছরোয়ার আলম খান আবুকে সমর্থনে মাঠে নেমেছেন। গত ৪ মে আবুর পক্ষের কর্মি সভায় প্রধান অতিথি হয়ে আসেন জনপ্রিয় আবুল হাসান চৌধুরী। নানা জল্পনা কল্পনা, প্রতিকুলতা ডিঙ্গে তিনি সভাস্থলে আসেন। তাকে মধুপুরের নির্বাচনী মাঠে আবারো দেখা যাবে এ বার্তায় অসংখ্য ভক্তে ও নির্বাচনী কর্মিতে পৌর শহরের বাইরে শেওড়াতলার খোলা মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। বিশাল কর্মিসভায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য খন্দকার আব্দুল গফুর মন্টু সভাপতিত্ব করেন। পরেরদিন ৫ মে ড. রাজ্জাক সমর্থিত প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ইয়াকুব আলীর আনারসের পক্ষে পৌর শহরে বিশাল মিছিল করে পাল্টা শো ডাউন হয়েছে। ৬ মে পৌর শহরের বাইরে শো ডাউন হয়েছে আবুর সমর্থনে। একাধিক স্থানে পথসভায় আবুল হাসান চৌধুরী বক্তব্য দিয়েছেন ।

অন্যদিকে উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. মীর ফরহাদুল আলম মনি ২০১০ সালের উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ছিলেন বিপুল ভোটে। ২০১৪ সালে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে নেমে দলীয় চাপে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। পরেরবার মনোনয়ন চেয়েও দলীয় পদের আশায় নির্বাচন করেননি। আশাহত জনপ্রিয় নেতা ডা. মীর ফরহাদুল আলম মনি এবার উম্মুক্ত মাঠে অনেকটা একা একা নির্বাচন করে যাচ্ছেন। এসব মিলে নির্বাচন যুদ্ধের অর্ন্তরালের হিসাব নিকাসের চিত্র ভিন্ন মেজাজ ও বৈচিত্রের। বুধবার ভোটের মাধ্যমে এদের একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। তিনি যেন অধিকতর সৎ, যোগ্য ও মানুষের নেতা হয়ে উঠেন। মধুপুরের জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন- এ প্রত্যাশা করেছেন স্থানীয় অনেকেই।

উল্লেখ্য, এবার নির্বাচনে তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু (দোয়াত কলম), উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলী(আনারস) ও উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. মীর ফরহাদুল আলম মনি(মটরসাইকেল)।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights