মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:১৫ অপরাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

মির্জাপুরে গজারি ও উডলট বাগানে ১ মাসে ১০ স্থানে আগুন

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গত এক মাসে গজারি ও উডলট বাগানের ১০ স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এ আগুনে পুড়েছে বনাঞ্চলের গজারি বন ও উডলট বাগান। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির লতাগুল্ম, কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড়ও পুড়েছে বলে জানা গেছে। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ।

বাঁশতৈল রেঞ্জের হাটুভাঙ্গা বিট এলাকার বেলতৈল মৌজার বেলতৈল দক্ষিণপাড়া, সিরামিক, উত্তর এলাকার ছয়টি, বাঁশতৈল সদর বিট ও নলুয়া বিটের চার স্থানে বনে দেওয়া হয় আগুন। দুর্বৃত্তরা বনের ভেতরে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।বন বিভাগের হাটুভাঙ্গা বিট কর্মকর্তা আব্দুল কাদের একটি সাধারণ ডায়েরি ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে অভিযোগ করেছেন বলে রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শাহিনুর ইসলাম বিপ্লব জানিয়েছেন।

রবিবার (৫ মে) সরেজমিনে বাঁশতৈল রেঞ্জের হাটুভাঙ্গা বিট এলাকার কয়েকটি সংরক্ষিত গজারি বন ও উডলট বাগান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বন বিভাগ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাঁশতৈল রেঞ্জের আওতাধীন মির্জাপুর উপজেলার ৪টি ও সখিপুর উপজেলার ২টি বিট রয়েছে। হাটুভাঙ্গা বিটের অধীনে প্রায় ১০০০ একর বনভূমি রয়েছে। অধিকাংশ ভূমিতে গজারির সংরক্ষিত বন রয়েছে। আর বাকি ভূমিতে উডলট বাগান রয়েছে।

একেকটি উডলট বাগানে ৫০ জন স্থানীয় ব্যক্তির অংশ রয়েছে। যারা প্রতিটি উডলট বাগানে আকাশমনি গাছের চারা রোপণ করেছেন। যা ১০ বছর পর পর টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। বিক্রির ৪৫ ভাগ বন বিভাগ, ৪৫ ভাগ সুবিধাভোগী আর বাকি ১০ ভাগ নার্সারির কাজে খরচ করা হয়।

গত ১৪ এপ্রিল হাটুভাঙ্গা বিটের বেলতৈল এলাকার পান্না মিয়ার উডলট বাগানে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে চার শতাধিক আকাশমনি গাছের চারা পুড়ে ফেলেছে।

এ ছাড়া একই বিটের বেলতৈল মৌজার বেলতৈল দক্ষিণপাড়া ও উত্তর এলাকার ছয়টি স্পটে গজারি বনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগুনে বড় গজারি গাছ অক্ষত থাকলেও শালকপিচ ও ছোট ছোট বিভিন্ন প্রজাতির লতাগুল্ম ও শালকপিচ পুড়ে গেছে।

গত ৩ মে শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে হঠাৎ সিরামিক এলাকার গজারি বনে আগুন লাগে। এতে বনের শালকপিচ ও ছোট ছোট বিভিন্ন প্রজাতির লতাগুল্ম ও শালকপিচ পুড়ে গেছে। ওই বাগানের ভেতরে আগুনে পুড়ে যাওয়া গজারির লাকড়িও পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

এ ছাড়া বাঁশতৈল সদর এবং নলুয়া বিটের চার স্থানে গজারি বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। বাঁশতৈল রেঞ্জের তিন বিটের ১০ স্থানে প্রায় পাঁচ একর ভূমির শালকপিচ ও ছোট ছোট বিভিন্ন প্রজাতির লতাগুল্ম ও শালকপিচ পুড়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় কয়েকজন যুবক বেলতৈল মৌজার পান্না মিয়ার উডলট বাগানের ভেতরে বৈশাখী মেলার আয়োজনের চেষ্টা চালায়। এজন্য রাতের আঁধারে তারা ওই বাগানে আগুন দেয়। এতে চার শতাধিক আকাশমনি গাছের চারা পুড়ে যায়। মেলাটি ৬, ৭ ও ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। বন বিভাগের লোকজন বিষয়টি জানার পর ওই যুবকদের চিহ্নিত করে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। পরে বন বিভাগ কর্মকর্তাদের নির্দেশে মেলাটি ওই স্থান থেকে প্রায় ৬০০ গজ দূরে আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, গোড়াই-সখিপুর সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে এমন খবর এলাকায় চাওর আছে। মোটা অংকের টাকা উপার্জনের পথ হিসেবে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী রাস্তার পাশে বনের জমি দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণের পাঁয়তারা করছেন। আগুন দেওয়াও একটি কৌশল হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

ছিড়ামিক বটতলা এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার মোরল জানান, শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে হঠাৎ তার দোকানের পূর্ব পাশে গজারি বাগানে আগুন দেখতে পান। মুহূর্তের মধ্যে বাগানের ছোট ছোট গাছপালা পুড়ে যায়।

উডলট বাগানের মালিক পান্না মিয়া বলেন, আমি একজন দরিদ্র মানুষ। আমার তিনজন সন্তান রয়েছে। তারা লেখাপড়া করছে। চা বিক্রি করে সংসারের খরচ মেটানো যায় না। আমি বন বিভাগের ১২০ শতাংশ জমির ওপর ১৩০০ আকাশমনি গাছের চারা রোপণ করেছি। এজন্য তার প্রায় ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। রাতের আঁধারে বাগানে আগুন দিয়ে গাছের চারাগুলো পুড়িয়ে দিয়ে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

হাটুভাঙ্গা বিট কর্মকর্তা আব্দুল কাদের মিয়া জানান, এই বিট এলাকায় ১০০০ একর বনভূমি রয়েছে। কিছু নেশাখোর বাগানের ভেতরে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বনে আগুন দেওয়া কয়েকজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে অভিযোগ দিয়েছেন কেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

নলুয়া বিট কর্মকর্তা মো. ছাকেরুজ্জামান বলেন, ঈদের আগে তার বিটের গজারি বাগানে রাতে তিন স্থানে আগুন লাগে। কাঞ্চনপুর বিমান বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় আগুন নেভানো হয়। এসময় আগুনের তাপে তিনি আহত হন।

বাঁশতৈল রেঞ্জের রেঞ্জার মো. শাহিনুর ইসলাম বিপ্লব বলেন, বনের ভেতর দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনের বিষয়টি বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া দোষীদের গ্রেপ্তারে থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights