নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টিলা কাটা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা প্রশাসন। বন্ধ হয় টিলা কাটা। টিলা ছেড়ে এবার নদীপাড়ে নজর দিয়েছে মাটিখেকোরা।
এরই মধ্যে উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ গাঙগাইর এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া বংশাই নদীপাড়ের অনেক অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। এসব মাটি বিক্রি করা হয়েছে ইটভাটায়।
ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়ি লাল মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে আসছিল বেশ কয়েকটি চক্র। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎপরতায় বন্ধ হয়েছে টিলা কাটা।
তবে থেমে নেই মাটিখেকোরা। এবার তাদের নজর পড়েছে বংশাই নদীর পাড়ে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বংশাই নদী ভরাট হয়ে গেছে। নদীর পাড় কাটা হয়েছে কোথাও ২০ ফুট গর্ত করে, আবার কোথাও ১০ ফুট। বোরো মৌসুমে দুই পাড়ে সেচযন্ত্র বসিয়ে নদী থেকে জমিতে সেচ দিচ্ছেন কৃষক।
নদীর পাড় কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে মুখ খুলতে নারাজ তারা।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক কৃষক জানান, যারা নদীপাড়ের মাটি লুটে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলা বারণ। এলাকায় তারা প্রভাবশালী। পাশে থাকা আরেক কৃষক এবার একটু সাহস দেখালেন।
পরিচয় গোপন রেখে জানালেন, নদীর পাড় কাটছেন রতন খান ও তাঁর ভাতিজা বাদল খান।
স্থানীয়রা জানান, পলি পড়ে নদী ভরাট হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছরই পাড় উপচে পানি আসে। প্লাবিত হয় নিচু এলাকা। ক্ষতি হয় ফসলের। সামনের বর্ষায় এর আর দরকার হবে না। পাড় কেটে ফেলায় পানিতে নদী পূর্ণ হওয়ার আগেই এলাকায় প্রবেশ করবে পানি। ফসলের ক্ষতি হবে অন্য বছরের থেকে দ্বিগুণ।
জানা গেছে, নদীপাড়ের মাটি ধলাপাড়া এলাকার বিভিন্ন ইটভাটায় গেছে। ইটভাটার এক ম্যানেজার বলেন, নদীপাড় থেকে যে পরিমাণ মাটি কাটা হয়েছে, তা যদি নির্দিষ্ট একটি ভাটায় ফেলা হতো, তবে পুরো মৌসুম পার করে দেওয়া যেত।
নদীর পাড় কাটার সঙ্গে জড়িত মাকড়াই এলাকার বাদল খান ও তাঁর চাচা রতন খান।
পাড় কাটার কথা স্বীকার করে বাদল খান বলেন, নদীর পাড় ব্যক্তিমালিকানাধীন। এ মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হয়েছে। ফোনে কথা বলার ফাঁকে প্রতিবেদককে তাঁর সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন আকন্দের সঙ্গে।
তাঁর ভাষ্য, নদীপাড়ের মাটি কাটার বিষয়ে জানেন না তিনি। তবে যারাই নদীর পাড় কাটার সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি তাঁর।
ঘাটাইল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া বলেন, সব ধরনের মাটি কাটা আইনে নিষিদ্ধ। নদীর পাড় কাটা বড় ধরনের অপরাধ। এ কাজে ব্যবহৃত মাটিবোঝাই দুটি ট্রাক গত বৃহস্পতিবার রাতে আটক করা হয়েছে। নদীপাড়ের মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি জানতে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও রিসিভ করেননি। মেসেজ পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতিজা হাসান বলেন, নদীর পাড় কাটার বিষয় তাঁর জানা নেই। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।