মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৩ অপরাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

ঘাটাইলে বৃক্ষরোপন অভিযানের ১৬ লাখ টাকা লোপাট

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৭১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সামাজিক বনায়নের বৃক্ষরোপণ তহবিলের ১৫ লাখ ৮১ হাজার ৩৮৫ টাকা না পাওয়ার অভিযোগ উপকারভোগীদের। কার পকেটে এ টাকা তাও জানেন না তারা।

বন বিভাগের দাবি, উপকারভোগীদের নিয়ে গঠিত কমিটির অ্যাকাউন্টে টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে প্রায় চার মাস আগে। আর কমিটির দাবি, টাকা বন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে খরচ করা হয়েছে।

টাকা না পেয়ে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপকারভোগীরা।

দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের আর্থ- সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি হাতে নেয় সরকার।

এর আওতায় বৃক্ষরোপণ, পরিচর্যা বনজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকেন উপকারভোগীরা। দশ বছর গাছগুলো দেখভাল শেষে নিলামে বিক্রি হয়।

গাছ বিক্রির মোট অর্থের ৪৫ শতাংশ পায় বন অধিদপ্তর। এর সমপরিমাণ পান উপকারভোগী। আর বৃক্ষরোপণ তহবিলে জমা থাকে ১০ শতাংশ।

সামাজিক বনায়নের নীতিমালায় বলা আছে-বৃক্ষরোপণ তহবিলের টাকা তফসিলভুক্ত জমিতে পুনরায় বাগান সৃষ্টির কাজে ব্যবহৃত হবে। আর এ টাকা বন কমিটির মাধ্যমে পেয়ে থাকবেন উপকারভোগীরা।

ঘাটাইল উপজেলার বন বিভাগের বাড়কা বিটের অধীনে মাকড়াই, কুমারপাড়া ও মালেঙ্গা মৌজায় সামাজিক বনায়নের প্লট রয়েছে ১০১টি। প্রায় দুই বছর আগে নিলামে এসব প্লটের গাছ বিক্রি হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বৃক্ষরোপণ তহবিলে টাকা জমা পড়েছে ১০ শতাংশ।

বন বিভাগের তথ্যমতে, যার অঙ্ক ১৫ লাখ ৮১ হাজার ৩৮৫ টাকা। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্লটগুলোতে নতুন করে বাগান করা হয়েছে। উপকারভোগীরা নিজ অর্থায়নেই করেছেন এ বাগান। গাছের বয়স প্রায় ৯ মাস। কিন্তু এখন পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ তহবিল থেকে একটি টাকাও জোটেনি উপকারভোগীদের ভাগ্যে।

বন কর্তৃপক্ষ বলছে, এ তহবিলের টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। কমিটির সম্পাদকের দাবি, টাকা খরচ করা হয়েছে বাগান সৃজনে।

তবে উপকারভোগীরা বলছেন, নিজ অর্থায়নে করেছেন বাগান। একটি টাকাও ওঠেনি তাদের পকেটে।

এ নিয়ে বাগান সৃজনকারী ১০১ জনের মধ্যে ৭০ জনের সঙ্গে সরেজমিন কথা হলে সবাই টাকা না পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।

কথা হয় বড়চালা এলাকার চা দোকানি মোহাম্মদ আলীর (৬২) সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘নিজের পকেটের টাকা দিয়া গাছের চারা কিনা কামলা নিয়া জমিতে গর্ত কইরা গাছ লাগাইছি। কোনাহান থাইকা এক টেহাও পাই নাই। শুধু আমিই না কেউ পায় নাই ওই টেহা।’

তাঁর ভাষ্য, বৃক্ষরোপণ তহবিলের টাকা কোথায় আছে তা নিয়ে প্রায় চার মাস আগে তাঁর দোকানের পাশে সভা করেন উপকারভোগীরা। কারা এই টাকা মেরে খেয়েছেন তাদের খুঁজে বের করতে হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এরপর আর কোনো

বন বিভাগের দাবি, তহবিলের টাকা বন কমিটির অ্যাকাউন্টে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

কথা বলার এক পর্যায়ে এগিয়ে এলেন উপকারভোগী সুফিয়া বেগম (৬০)।

তিনি বলেন, ‘বনের নেতারা টেহা তুইলা খাইয়া ফালাইছে। মানুষ কিবা বেইমান গো, গাছ লাগানোর খরচার একটা টেহাও দিল না।’

তহবিলের টাকার ছিটেফোঁটাও না পাওয়ার তালিকায় আছেন বড়চালা এলাকার আব্দুস সাত্তার, আব্দুল বাছেদ, শুকুর মাহমুদ, আব্দুর বারেক, আব্দুল হক, ইসমাইল হোসেন, মনছের আলী, নূর হোসেন ও মজিবর রহমানসহ অনেকে।

মাকড়াই গ্রামের আলী আকবর বলেন, ‘১১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বাগান করতে। কোনো টাকা পাইনি বৃক্ষরোপণ তহবিল থেকে।’

কথা হয় একই গ্রামের কাবেল হোসেন, কমলা বেগম, মোহাম্মদ আলী, ইদ্রিস আলী, বিল্লাল হোসেনসহ অনেকের সঙ্গে। তারাও জানতে চান বৃক্ষরোপণ তহবিলের এই টাকা কার পকেটে গেছে।

বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় ওই তিন মৌজার সামাজিক বনায়নের সভাপতি আজমত আলীর সঙ্গে।

তাঁর দাবি, কিছুই জানেন না তিনি। সব জানেন কমিটির সম্পাদক।

সম্পাদক বাদল খানের দাবি, বৃক্ষরোপণ তহবিলের টাকা সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তার সমন্বয়ে খরচ করা হয়েছে।

কোথায় কীভাবে খরচ করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নার্সারি ও বাগান করে।

বাগানের চারাগাছ কেনা থেকে শুরু করে শ্রমিকের মজুরি সব খরচ তো উপকারভোগীরা করেছেন, আপনি তাহলে কীভাবে খরচ করলেন? এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দেন তিনি।

ঝড়কা বিট কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, নার্সারি করা এবং গাছ লাগানো বাবদ সংশ্লিষ্ট এলাকার বন কমিটির সভাপতি এবং সম্পাদকের আরব-বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ অ্যাকাউন্টে টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। শুরুতে নার্সারি করার জন্য পাঁচ লাখ, পরবর্তীতে বাগান করার জন্য ১০ লাখ ৮১ হাজার ৩৮৫ টাকা উত্তোলন করেছে বনের ওই কমিটি।

এই টাকা উত্তোলনের মালিক একমাত্র ওই কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের।

ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমান বলেন, ‘উপকারভোগীরা টাকা পায়নি বিষয়টি আমার জানা নেই। বৃক্ষরোপণ তহবিলের টাকা উপকারভোগীদের মধ্যে গঠিত কমিটি বিতরণ করে থাকে। আমরা টাকা ছাড় দিয়েছি প্রায় চার মাস আগে। এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক ভালো বলতে পারবেন। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।’

উপজেলা বন কমিটির সভাপতি ইউএনও ইরতিজা হাসান জানান, ঘটনার সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights