নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ঘাটাইলের সাগরদীঘি ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা মো. হাবিবুল্লাহ্ বাহার। চলনে বলনে ফিটফাট ও ধর্মপরায়ণ হলেও বাস্তবে ঠিক তার উল্টো। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই সাগরদীঘি ইউনিয়নকে ফিল্মি কায়দায় শাসন আর শোষণ করে যাচ্ছেন। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ইউপি ভবন তার সুবিধামতো স্থানে স্থানান্তর করে নিজের খেয়ালখুশিমতো পরিচালনা করছেন। বর্তমানে ইউপি ভবনটির এতই বেহালদশা যে সরকারের অতি গুরত্বপূর্র্ণ স্থানীয় আদালতটি তিনি রড সিমেন্টের দোকান বানিয়ে রেখেছেন। এখানেই শেষ নয়, তার বিরুদ্ধে পরিষদের উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগও কম নয়। বরাদ্দের ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় মাত্র ৫টি ক্যামপ্রো ব্র্যান্ডের সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন তিনি। যার একেকটির দাম ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৮০০ টাকা করে। অথচ বাজার যাচাই করে জানা গেছে, সবচেয়ে ভালো মানের একটি ক্যামপ্রো সিসিটিভি ক্যামেরার দাম মাত্র ২ হাজার ৪৫০ টাকা। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে গোটা উপজেলা জুড়ে।
সরজমিন ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদের ভেতরে দু’টি এবং বাইরে একটি গাছে স্থাপন করা হয়েছে।
এগুলো ‘ক্যামপ্রো’ ব্র্যান্ডের। গাছের ৩টি ক্যামেরার মধ্যে একটি ভেঙে গেছে। পরিষদের সামনে দেখা হয় ইউপি সদস্য মোকাম্মেল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই ক্যামেরাগুলো ভালো। আপনি বাসায় লাগাতে পারেন।’ দাম কতো? কতোদিন আগে লাগানো হয়েছে? দামের বিষয়ে বলতে না পারলেও সময়টা বললেন, ৫-৬ মাস আগে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আরেকজন ইউপি সদস্য বলেন, ‘শুধু ৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা কেনা হয়েছে, মনিটর বা অন্যকিছু কেনা হয়নি। কোথায় কোন প্রকল্প দেয়া হয়, তা একমাত্র চেয়ারম্যানই ভালো জানেন। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন নারী ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগম। তবে কতো টাকা দিয়ে ক্যামেরাগুলো কেনা হয়েছে, তা জানেন না তিনি; জানেন চেয়ারম্যান।
ক্যামপ্রো ক্যামেরার দাম যাচাই করতে কথা হয় ঢাকার আইসিটি ভবনে অবস্থিত ‘গোল্ডেন সান’ দোকানের মালিক আবু সাইদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অডিও, ভিডিও এবং হাই রেজুলেশনের সবচেয়ে ভালো মানের ক্যামপ্রো সিসিটিভি ক্যামেরার দাম ২ হাজার ৮০০ টাকা। তবে আমরা বিক্রি করি ২ হাজার ৪৫০ টাকায়।’ হাতিমারা জালাল মেম্বারের বাড়ির মোড় থেকে আলালের বাড়ি হয়ে হোসেনের বাড়ি পর্যন্ত এবং সাগরদীঘি বাইপাস রাস্তা হয়ে আলীমের বাড়ির পাকা রাস্তা পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। মাটির কাজের এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয় ৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা। স্থানীয়রা জানান, নামে মাত্র মাটি ফেলা হয়েছে রাস্তায়। বাকিটা চেয়ারম্যানের পকেটে যাবে। সাগরদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাওলানা মো. হাবিবুল্লাহ্? বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য বরাদ্দের পুরো টাকা এখনো উপজেলা প্রকল্প অফিস থেকে উত্তোলন করা হয়নি। যা টাকা পাওয়া গেছে, সেই টাকা দিয়ে ৫টি ক্যামেরা ও একটি মনিটর কেনা হয়েছে। তবে মনিটর নষ্ট হয়ে গেছে।’ ক্যামেরার দাম কতো? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তালিকা দেখে বলতে হবে। রাস্তার কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, ভালোভাবেই রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন প্রকল্পে টিআর বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, যার পুরো টাকাই চেয়ারম্যান উত্তোলন করেছেন। আর রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। কাজে কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকল্পের সভাপতি ইউএনও ইরতিজা হাসান বলেন, প্রকল্পের কাজে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।