নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বংশাই নদীতে ড্রেজার বসিয়ে প্রকাশ্যেই চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রউফ মিয়া ও তার অনুসারীরা এসব বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দিন-রাত বালু উত্তোলনের ফলে এলাকার পাকা রাস্তা, ব্রিজ কালভার্টসহ ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আশেপাশের ঘরবাড়ি।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা পরিষদ ও মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় স্থানীয়রা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে একটি প্রভাবশালী মহল প্রতিবছর এই মৌসুম এলে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন করছেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ ও তার অনুসারীরা। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে এলাকার শতশত পরিবার এবং ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত। ইতিমধ্যে নদীভাঙনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আঞ্চলিক সড়ক কুরনী-ফতেপুর রাস্তার ফতেপুর বাজারের দক্ষিণ পাশ ভেঙে উপজেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া হিলড়া আদাবাড়ি মোকছেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, বাজার, ফতেপুর বাজার, ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বার বার অনুরোধ করার পরও তারা তা মানছেন না। বরং নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আর এসবের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুর রউফ মিয়া এবং তার অনুসারীরা। ফলে প্রভাবশালী মহলের চাপে ও হুমকির মুখে তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা জানতে পেরেছি স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ মিয়ার সঙ্গে যোগসাজশ করে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এতে এলাকার রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি এবং ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানানো হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ মিয়া বলেন, এলাকার জনপ্রতিনিধি হলে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করতে হয়। কিছু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর অনুরোধে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। প্রশাসন নিষেধ করলে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন এবং এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান বলেন, মির্জাপুর উপজেলার কোনো এলাকায় নদী থেকে ড্রেজার বা ভ্যেকু দিয়ে বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চক্রের সদস্যরা যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন কোনো অবস্থায় তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধকোটি টাকা জরিমানা, শতাধিক মামলা, কয়েকজনকে কারাদণ্ড এবং ভ্যেকু, ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে।