টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনটি বরাবরই ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত। এ আসনে রয়েছেন বিএনপির হেভিয়েট কয়েকজন প্রার্থী। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার গুঞ্জন উঠলেও বর্তমানে তিনি কারাগারে। ফলে এখনো পর্যন্ত মাঠে রয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা।
বিএনপির একাধিক নেতা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এরমধ্যে আলোচনায় রয়েছেন দলের ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটো। এছাড়া বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হালিম মিয়া, ড্যাব নেতা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার উপদেষ্টা ডা. শাহ আলম, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও টাঙ্গাইল জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি একেএম আব্দুল আউয়াল, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শুকর মাহমুদ এবং মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি বাদলুর রহমান খান।
জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে গুঞ্জন উঠলেও বর্তমানে তিনি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকায় হিসাব পাল্টেছে আবার।
এছাড়া সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত শাহজাহান সিরাজের পরিবারের কোনো সদস্য প্রার্থী হতে পারেন এমন আলোচনাও আছে। তার মেয়ে ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন পরে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে তিনি এখনও মাঠে নামেননি।
বিগত নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ ৬ বার, জাসদ (সিরাজ) ২ বার, জাসদ ১ বার, বিএনপি ২ বার এবং স্বতন্ত্র প্রাথী ২ বার নির্বাচিত হয়েছেন।
১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বিজয়ী হন। তবে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জয় পান জাসদের প্রার্থী, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে বিজয়ী হন। এরপর ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় জাসদ (সিরাজ) থেকে পুনরায় শাহজাহান সিরাজ জয়লাভ করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও শাহজাহান সিরাজ টানা দ্বিতীয় বারের মতো বিজয়ী হন। পরে তিনি জাসদ থেকে বিএনপিতে যোগ দেন।
১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তিনি বিএনপি থেকেই আবার নির্বাচিত হন। পরে ৯৬-এর জুন মাসের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে লতিফ সিদ্দিকী আবারো বিজয়ী হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে পুনরায় শাহজাহান সিরাজ বিএনপি থেকে জয়লাভ করেন। তবে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকী বিজয়ী হন। কিন্তু বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে ২০১৪ সালের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আওয়ামী লীগ তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। মন্ত্রিত্ব হারান এবং জেল খাটেন লতিফ সিদ্দিকী। পরে লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করলে টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকে আসনটি শূন্য হয়।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের উপনির্বাচনে হাছান ইমাম খাঁন সোহেল হাজারী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও পরবর্তীতে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান লতিফ সিদ্দিকী। সেসময় সোহেল হাজারী টানা দ্বিতীয় বারের মতো বিজয়ী হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
দুটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-৪ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬৪ জন। নিবন্ধিত নতুন ভোটার ১৪ হাজার ৭২২ জন।
স্থানীয়রা বলেন, এই আসনে অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও উপজেলার রাস্তাঘাটের তেমন উন্নয়ন হয়নি। অপরিকল্পিতভাবে অনেক কিছুই গড়ে উঠেছে। এ উপজেলার গোহালিয়া এবং দুর্গাপুর ইউনিয়ন নদীভাঙন এলাকা। বিগত সময়ে নদী ভাঙনরোধে তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এছাড়া অবৈধভাবে বালুরঘাটের কারণে অনেক ফসলি জমি নষ্ট ও বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। কিন্তু সেসময় জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। যিনি সাধারণ মানুষের পক্ষে কাজ করবেন, ভোটাররা তাকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।
বিএনপির প্রার্থী বেনজির আহমেদ টিটো বলেন, ‘বিগত সময়ে অনেক জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করেছি। আমরা দলের জন্য শীতকালের পাখি নই, ‘শরৎকালের’ পাখি। দল যদি মনে করে আমাকে নমিনেশন দিবে, তাহলে আমি নির্বাচন করবো। বিগত সময়ে শুধু কালিহাতী নয়, সারা দেশেই লুটপাট রয়েছে। কাজেই সমস্ত দেশটাকেই মেরামত করতে হবে। তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
লুৎফর রহমান মতিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে তার অনুসারী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কারণে লুৎফর রহমান মতিনকে মনোনয়ন না দিয়ে লিয়াকত আলীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর আগেও ২০১৪ সালে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। তবে এবার সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। আশা করছি দল তাকে মনোনয়ন দেবে।’
জামায়াতের প্রার্থী খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কালিহাতীতে গত ৫৪ বছরে আমাদের মুখ খুলতে দেওয়া হয়নি। আমাদের মাঠে-ময়দানে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। এবার আল্লাহর নামে আমি নির্বাচনে নেমেছি। আমি আশাবাদী এবং সম্ভবনা দেখছি। বিএনপির সঙ্গে আমাদের নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে। সে হিসেবে আমরা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছি।’