আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন একাধিক প্রার্থী। ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী চূড়ান্ত করে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন তার দলের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়াও অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন।
১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে এই আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন হুমায়ুন খান পন্নী। তারপর থেকে এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। হারিয়ে যাওয়া সেই আসনটি ফিরে পেতে দুই উপজেলায় ব্যাপকভাবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আহমেদ আযম খান। তিনিই মনোনয়ন পাবেন এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে জানায় দলীয় নেতাকর্মীরা। এডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি’র আন্দোলন-সংগ্রামে আছি, তাই দল আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে বিশ্বাস করি। আমি নির্বাচিত হলে সখীপুরের আঁটিয়াবনের কালো আইনের বিরুদ্ধে কাজ করবো এবং সখীপুর-বাসাইলে উন্নয়নের মাধ্যমে আলোকিত করবো। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের টাঙ্গাইল জেলার সদস্য সচিব শেখ মোহাম্মদ হাবীব দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। সেই লক্ষ্যে তিনিও দুই উপজেলায় জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি’র এই আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য সখীপুরের সন্তান শেখ হাবীবের কোনো বিকল্প নেই এবং তিনি ব্যাপক ভোটে বিজয়ী হবেন বলে জানায় তার কর্মী-সমর্থকরা। শেখ মোহাম্মদ হাবীব বলেন, আমি বিশ্বাস করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। এখানে ’৯৬ সালের পর অনেকেই দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, তারা যা পারেননি আমি তা দেখিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ।
এদিকে, লাবীব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীর রাসেল (সিআইপি) দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সখীপুর-বাসাইলের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মেধাবী, অসচ্ছল এবং প্রতিবন্ধীদের আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন। এ ছাড়া শীতের সময় শীতবস্ত্র, ঈদ উপহার, ক্রীড়াসামগ্রী এবং বন্যাকবলিত মানুষদের সহযোগিতা করে থাকেন বলে জানান সাধারণ মানুষ। তিনি মনোনয়ন পেলে বা নির্বাচনে আসলে অবশ্যই এমপি হবেন বলে মন্তব্য তাদের। সালাউদ্দিন আলমগীর রাসেল বলেন, দুই উপজেলার বেকারত্ব ও দারিদ্র্যতা নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে নয়, এটা আমার মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে করে যাচ্ছি, আগামী দিনেও করবো।
এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক কৃষিবিদ শেখ মোহাম্মদ শফী শাওন বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে দলীয় কার্যক্রম করতে গিয়ে মামলা-হামলার শিকার হয়েছি- তাই দল আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে বিশ্বাস করি। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও এগ্রিকালচারিস্টস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি কৃষিবিদ ইয়ার মাহমুদ বলেন, রাজনীতির কারণে গত ১৭ বছরে আমার নামে মামলা হয়েছে ৩২টি। আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দুই উপজেলায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম খান। তিনি বাসাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম খান বলেন, মানুষ গতানুগতিক রাজনীতির পরিবর্তন চায়, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন চায়। আমি নির্বাচিত হলে সখীপুর-বাসাইলে উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবর্তন ঘটাবো ইনশাআল্লাহ।
১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে পরাজিত করে এই আসনে বিজয়ী হন তিনি। ২০১৮ সালে তার দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিলে মেয়ে ব্যারিস্টার কুড়ি সিদ্দিকী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে তাকে পরিকল্পিতভাবে পরাজিত করা হয় বলে নেতাকর্মীদের দাবি। উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন সজীব বলেন, এই আসন থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের জন্ম হয়েছে। আগামী নির্বাচনে আমাদের দল এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম এই আসনে নির্বাচন করবেন। ’৭১ থেকে শুরু করে এখনো আমাদের নেতা সখীপুর-বাসাইলের মানুষের সুখে-দুঃখে আছেন এবং থাকবেন।
এ ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল লতিফ মিয়া, খেলাফত মজলিসের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শহীদুল ইসলাম এবং জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মুফতি রুহুল আমিন আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।