নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের সখীপুরে সংরক্ষিত বনভূমিতে বাড়ি নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। ‘রক্ষকদের’ বিরুদ্ধে বন উজাড় ও দখল করে বাড়ি নির্মাণে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। গেজেটভুক্ত সংরক্ষিত বনের ভেতর গড়ে উঠেছে অসংখ্য বসতবাড়ি, হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পোলট্রি খামার।
অথচ ব্যক্তিগত রেকর্ডীয় জমিতে স্থাপনা নির্মাণে বাধা দেন স্থানীয় বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বন বিভাগের তথ্যমতে, সখীপুর উপজেলায় ২৮ হাজার ৫৯৪ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। যার অর্ধেকের বেশি দখল হয়ে গেছে। অথচ ১৯২৭ সালের বন আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ‘বিনা অনুমতিতে প্রবেশাধিকার নিষেধ’। কিন্তু এই আইনের তোয়াক্কা না করে বনের ভেতর বসবাস করছে দুই থেকে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ।
আর বন বিভাগের দাবির কারণে ব্যক্তিমালিকানা জমির খাজনা আদায় ও রেজিস্ট্রি বন্ধ রয়েছে। অথচ জমিগুলোর এসএ রেকর্ডও ব্যক্তির নামে। শত বছরের খাজনা-দাখিলাও রয়েছে ভূমি মালিকদের নামে।
প্রজাস্বত্ব আইনে জমিদার এবং জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পর এসএ রেকর্ড সূত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুকূলে ব্যক্তি মালিকদের খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে। ১৯৩৪ সালে ছয়টি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বনের গেজেট থেকে অবমুক্ত হওয়া ২৫টি মৌজার ৯ হাজার ৪৩০ একর জমি, যা ১৯৫৬-৬২ সালে ব্যক্তি নামে এসএ রেকর্ড হয়।
১৯৮২ সালে ভুলক্রমে ওইসব জমি ‘আটিয়া বন অধ্যাদেশ-১৯৮২’-এর আওতাভুক্ত হয়, যা সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী বাতিলের পর ফের অবমুক্ত হয়েছে। দখল, স্বত্ব বা কোনো রেকর্ডে মালিকানা না থাকা সত্ত্বেও বারবার ব্যক্তিমালিকানা জমিতে স্থাপনা নির্মাণসহ যে কোনো কাজেই বাধা দিচ্ছে বন বিভাগ।
অন্যদিকে রক্ষকদের বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা নিয়ে বন দখলে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে দখল হওয়া সংরক্ষিত বনের ভেতর নির্মিত হয়েছে কমপক্ষে ৫০-৬০ হাজার বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা। ফলে দিনের পর দিন বিলুপ্ত হচ্ছে শাল-গজারি। বেদখলে যাচ্ছে সংরক্ষিত বনভূমি। হতেয়া, বহেড়াতৈল, বাঁশতৈল ও ধলাপাড়া রেঞ্জের বিভিন্ন বিট কার্যালয় ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বনকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় ভূমিদস্যু ও দালাল চক্রের যোগসাজশে সংরক্ষিত শালবন উজাড় শেষে এখন বনভূমিও দখলে চলে যাচ্ছে। এ জন্য ‘রক্ষকরাই’ প্রধান দায়ী বলে জানান তারা।
বনের কিছু জমি দখল হয়ে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা এ কে এম আমিনুর রহমান। সমকালকে তিনি বলেন, ‘বনভূমি রক্ষায় দখলকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা অব্যাহত রয়েছে। চলমান ডিজিটাল জরিপে যাতে গেজেটভুক্ত জমি ব্যক্তিগত দখলে এবং ব্যক্তিগত জমি বনের গেজেটভুক্ত না হয়, সে বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত আছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন বিটে সংরক্ষিত বনের ভেতর বসবাসকারী একাধিক ব্যক্তি জানান, বনের লোকজনকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই বাড়ি নির্মাণ করতে হয়েছে। যারা বনের জমিতে বাড়ি বানিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই টাকার বিনিময়েই বাড়ি করেছেন।
সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবদুল আলীম বলেন, “এক সময় সংরক্ষিত এই বনাঞ্চল ছিল শাল-গজারিতে পরিপূর্ণ। শাল-গজারি এখন আর নেই। ‘চোরেরা’ সব কাইটা খাইয়া ফালাইছে। এখন ‘রক্ষকদের’ সহযোগিতায় বনভূমিও চলে যাচ্ছে জবর-দখলে।”
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ইউএনও মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারীর সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বন বিভাগের সঙ্গে ব্যক্তিমালিকানা ভূমির জটিলতা দীর্ঘদিনের। নিরসনের প্রক্রিয়া চলমান।