আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে রাজনীতির মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এই আসনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও গণ অধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থীও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণার পর প্রার্থীদের তৎপরতা আরো জোরদার হয়েছে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
আসনটিতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশুবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসীন হলের সাবেক জি এস সাইদুর রহমান সাঈদ সোহরাব ব্যাপক জনসংযোগ ও উঠান বৈঠকে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
মিছিল, শোভাযাত্রা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সরব রয়েছেন তারা।
আসনটিতে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড স্টেট বিএনপির সভাপতি ইউসুফজাই সাহিদ খান চৌধুরী ও কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক দীপু হায়দার খান প্রচারের অংশ হিসেবে ব্যানার ফেস্টুন সাঁটিয়েছেন।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী টাঙ্গাইল জেলা শাখার শিক্ষাবিষয়ক সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল্লাহ তালুকদারও প্রচারণা শুরু করেছেন। পৌরসভা ও ইউনিয়নজুড়ে পোস্টার সাঁটানো, সভা-সমাবেশসহ নানা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন তিনি।
বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তোফাজ্জল হোসেন দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করে দলীয় প্রতীক ট্রাক মার্কায় ভোট প্রার্থনা করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মির্জাপুরের রাজনৈতিক চিত্র একেবারেই বদলে যায়। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে আছেন। এ আসনের সর্বশেষ সাংসদ খান আহমেদ শুভ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, অবসরপ্রাপ্ত মেজর খন্দকার আব্দুল হাফিজ, রাফিউর রহমান ইউসুফজাই সানি চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টুসহ অনেকেই রয়েছেন নিখোঁজের তালিকায়।
প্রয়াত সাংসদ একাব্বর হোসেনের বাড়ি, সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভর রাজনৈতিক কার্যালয়, এমনকি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতার বাসাও এখন জনমানবশূন্য।
নির্বাচন নিয়ে এলাকাবাসীর কৌতুহল
মির্জাপুরে একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে প্রধান আলোচনার বিষয় এখন সংসদ নির্বাচন। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে- এমন খবরে এলাকার মানুষের ভেতর স্বস্তি ফিরেছে। তবে বিএনপির মনোনয়ন কারা পাচ্ছেন তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে সাইদুর রহমান সাঈদ সোহরাব বিএনপির মনোনয়ন পেলেও তা পরিবর্তন করে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীকে দেওয়া হয় এবং তিনি বিজয়ী হন।
এরপর পরবর্তী নির্বাচনে তিনবার তিনি আওয়ামী লীগের একাব্বর হোসেনের কাছে পরাজিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আবার ২০২৩ সালের অক্টোবরে সাবেক এমপি শুভর ব্যক্তিগত সহকারী মীর আসিফ অনিকের নেতৃত্বে আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে হামলার ঘটনার পর থেকে মির্জাপুরে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত।
বিএনপি ও জামায়াতের প্রচারণা তুঙ্গে
বর্তমানে মির্জাপুরজুড়ে প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় উঠান বৈঠক, মৃত ও বিয়েবাড়িতে উপস্থিতি, পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা। তারা সব ধর্মের মানুষের বাড়িতে গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। কর্মীদের চলাচল, পোস্টারিং, ব্যানার-প্ল্যাকার্ডে নির্বাচনমুখী পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের ভাবনা
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা সদরে বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা ব্যবসার কারণে পরিবার নিয়ে সদরে বসবাস করছেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। তারা নির্বিঘ্নে সদরে যাতায়াত করতে চান। এ জন্য তারা এমন একজনকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করতে চান যার কাছ থেকে এই নিশ্চয়তা মিলবে।