শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় চিরশায়িত হয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহন। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়। পরে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা সোমবার রাত ৮টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক প্রবীণ এই রাজনীতিক আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর তার জানাজা টাঙ্গাইল শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপি চেয়ারারপারসন উপদেষ্টা লুৎফর রহমান খান আজাদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন, জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আহসান হাবিব মাসুদ ও বিএনপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবালসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতির অঙ্গনের লোকজন অংশ নেন।

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহচর হামিদুল হক মোহন আমৃত্যু রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র ও তিন কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের বোনজামাই।
হামিদুল হক মোহনের ঘনিষ্ঠরা জানান, স্কুলছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) মাধ্যমে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি টাঙ্গাইল জেলা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। পরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর ভাসানী ন্যাপের রাজনীতে যুক্ত হন। পরে ভাসানী ন্যাপ বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয়। তিনি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালে সভাপতি হন।
টানা ১৭ বছর জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন।
রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। টাঙ্গাইল নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন।
দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ১২ অক্টোবর দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দেন হামিদুল হক। এজন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেন। সোমবার বিকেলে উপজেলার দেউলী ইউনিয়নে যান। সেখানে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত দলের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন। সভা শেষ করে পাশের মসজিদে সন্ধ্যায় নামাজ পড়েন। পরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কয়েকটি গাড়ি নিয়ে টাঙ্গাইল শহরের উদ্দেশে রওনা হন। কিছু দূর যাওয়ার পর অসুস্থ বোধ করেন। তাকে অচেতন অবস্থায় টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সিসিইউতে তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।