টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের ফুলমালিরচালা গ্রামে জমির ধান পেকে আছে। স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তির হুমকি-ধমকি আর লেয়ার বর্জ্যের কারণে পাকা ধান ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে প্রায় দুই বিঘা জমির ধান। একদিকে হুমকি-ধমকি, অপরদিকে তার দু’টি লেয়ার বর্জ্যের কারণে গত ৭ বছর ধরে জমিতে ফসল ফলালেও কেটে ঘরের তুলতে না পারায় অসহায় হয়ে পড়েছেন অসহায় জোসনা বেগম। ভুক্তভোগী ওই নারী প্রতিকার চেয়ে গত ১৯শে নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগপত্র দায়ের করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির নাম আতিকুল ইসলাম।
জানা যায়, পৈতৃক সম্পত্তির প্রায় দুই বিঘা জমিতে গত ৭ বছর ধরে ধানের আবাদ করে আসছিলেন জোসনা বেগম। আতিকুল ইসলামের দু’টি লেয়ার ফার্মের বর্জ্য সরাসরি জমিতে প্রবেশ করায় কোনো বছরই জমির ফসল ঘরে ওঠাতে পারছে না। এতে অসহায় জোসনা বেগমের অবর্ণনীয় ক্ষতির পাশাপাশি প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতিসাধিত হয়েছে। বিভিন্ন সময় একাধিক চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও এর কোনো প্রতিকার না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারটি। এতে করে অসহায় জোসনা বেগমের পরিবারের অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটলেও সামান্যতম মন গলেনি আতিকুল ইসলামের। বরং তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানায়, আতিকুল ইসলাম প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তিনি কারও কথা শোনেন না। তার ওই পল্ট্রি ফার্মের বর্জ্য শুধু ফসলের ক্ষতি করছে না, বরং পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। পল্ট্রি মুরগির বিষ্টার কারণে আশপাশের কয়েক গ্রামে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় স্কুল, মক্তব, মাদ্রাসা ও মানুষের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন ক্ষতিকারক মশা-মাছি, রোগ জীবাণু ছড়িয়ে চারদিকের পরিবেশ বিষাক্ত করে তুলেছে। এর একটা প্রতিকার হওয়া জরুরি।
সরজমিন দেখা যায়, আশপাশের সকল জমির ধান কৃষক কেটে ঘরে তুলতে পারলেও জোসনা বেগমের ধান ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে। ধান না কাটায় ইতিমধ্যে ঝরে পড়ছে ধানের দানা। জোসনা বেগমকে ধান না কাটার বিষয়ে প্রশ্ন করা মাত্রই তিনি নিজেদের জমিতে ধান কাটতে না পারায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘ধানে কি দোষ করিল? এই ধান বেইচাই তো আমাগো সংসার চলে। জলদি যদি ধান কাটবার না পারি, তাইলে আমাগো সারা বছর না খাইয়া থাকা লাগবে। বছরে একবারই জমিতে ধান হয়। এই ফসল ঘরে তুলতে না পারলে ছেলেমেয়ে, পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। এ ছাড়া বেঁচে থাকার কোনো রাস্তা নেই। গত ৭ বছর ধরে জমিতে ফসল ফলালেও ঘরে তুলতে পারি না। তার পোল্ট্রি লেয়ারের বর্জ্য সরাসরি ক্ষেতে এসে জমা হয়। ফলে পাকা ধান ক্ষেতে বসে নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে গত ৭ বছরে আমার দুই থেকে তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু সাঈদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পোল্ট্রি ফার্ম স্থাপন ও বর্জ্য নিষ্কাশনের একটি নিয়ম-নীতি রয়েছে। নিয়মের বাইরে গিয়ে কেউ অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করে অন্যের ক্ষতি করা অপরাধ। আমাদের কাছে ভুক্তভোগী একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টা নিয়ে কৃষি অফিসারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।