নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা।
তারা অভিযোগ করেছেন গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন থেকেই স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর “লালিত-পালিত সন্ত্রাসীরা” কালিহাতীতে ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
শুধুমাত্র নৌকার পক্ষে কাজ করার অপরাধে অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হামলা ও বাড়িঘর ভাংচুরের শিকার হয়েছেন বলে তাঁদের অভিযোগ। আতঙ্কে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পলাতক রয়েছেন।
শনিবার ২০ জানুয়ারি দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এ অভিযোগ করেন।
এসময় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে লতিফ সিদ্দিকীর অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার ওরফে ঠান্ডু।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। নির্বাচনে জনগণের ভোটের রায় আমি মাথা পেতে মেনে নিয়েছি। কিন্তু নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকী বিজয়ী হওয়ার পর তাঁর লালিত সন্ত্রাসীরা নাগবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুমের বাড়িঘর ভাংচুর, জেলা পরিষদ সদস্য আয়নায় হকের বাড়িতে হামলা, বীর বাসিন্দা ইউনিয়নে দোকান থেকে তুলে নিয়ে এক ব্যবসায়ীকে নির্মম নির্যাতনসহ অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, কালিহাতী থানা ও টাঙ্গাইল আদালতে এসব ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা করেছেন নির্যাতিতরা; পুরো কালিহাতীর পরিবেশ এখনো থমথমে ও আতঙ্কগ্রস্ত।
এদিকে গত ৯ জানুয়ারি আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতী থানা অবৈধভাবে ঘেরাও এবং টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এসময় তিনি সন্ত্রাসী মামলার এজাহারভূক্ত আসামিদের ছাড়িয়ে নিতে পুলিশকে বেআইনিভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। অবরোধের কারণে প্রায় তিন ঘণ্টা অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হন এই সড়কের হাজার হাজার সাধারণ যাত্রী। এই অবরোধের সময় আবদুল লতিফ সিদ্দিকী প্রকাশ্যে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
তিনি আরও বলেন, একজন জাতীয় নেতার নামে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী যে সন্ত্রাসী ভাষায় কথা বলেছেন, তা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত, ধৃষ্টতাপূর্ণ ও চরম অবমাননাকর। ওইদিন লতিফ সিদ্দিকীর সামনেই তার বাহিনী কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনসার আলী ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেকে লাঞ্ছিত করে।
সংবাদ সম্মেলনে কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এরপরও কোন প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটলে জনগণকে সাথে নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এর সমুচিত জবাব দিবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনসার আলী, ভাইস চেয়ারম্যান মো. আকতারুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও দশকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক ভূইয়া, নাগবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম, বাংড়া ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, সহদেবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান, বল্লা ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ খান, কোকডহরা ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম, নারান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ তালুকদার, সল্লা ইউপি চেয়ারম্যান প্রমুখ।
এদিকে লতিফ সিদ্দিকীর অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগৈর সাবেক সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ ওরফে তোতা বলেন, আওয়ামী লীগের ব্যানারে সাংবাদিক সম্মেলন করা হলো, অথচ আমরা আওয়ামী লীগ নেতারাই জানিনা। সাংবাদিক সম্মেলনে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ সত্যি না।
সাবেক সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খানের কিছু অনুসারীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে বলে তার দাবী।