নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মধুপুরে একটি ব্রিজের অভাবে একটি ইউনিয়নের চার গ্রামের প্রায় ৯ হাজার মানুষের দুর্ভোগ চরমে। বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছে এ অঞ্চলের জনসাধারণ।
প্রায় সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকলেও মেরামত করার উদ্যোগ নেয় না কেউ। তাই নিরুপায় হয়ে গ্রামবাসীরা নিজেদের চাঁদার অর্থায়নে নির্মিত বাঁশের এ সাঁকো যুগের পর যুগ ধরেই ভাঙ্গা গড়ার মধ্যদিয়ে চলছে।
এলাকাবাসী জানায়, মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী ইউনিয়নের পোদ্দারবাড়ী গ্রামে বংশাই নদীর উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে ইউনিয়নের পোদ্দারবাড়ী, গোসাইবাড়ী সহ কাইতকাই গ্রামের কিছু অংশের প্রায় ৯ হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে।
সাঁকোটির পূর্ব পাশের পোদ্দারবাড়ীসহ আরো ২টি গ্রামের মানুষকে প্রতিদিন ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে, আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া এবং লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের ওই বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে নদীর অপর প্রান্তে যেতে হয়।
নদীর পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত গোলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় এবং অপর প্রান্তে পোদ্দারবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। ফলে নদীর উভয় প্রান্তে শিশু শিক্ষার্থীদেরই ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়ে অপর প্রান্তে অবস্থিত স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে।
বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার সময় অভিভাবকরা থাকেন উদ্বিগ্ন।
প্রয়োজনের তাগিদে স্থানীয়রাই প্রতি বছর বাঁশ ও খুঁটি দিয়ে সাঁকো তৈরি করে কোনো রকমে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। বছরের পর বছর মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও আজও নজর পড়েনি কর্তৃপক্ষের।
ফলে নদীর দুই প্রান্তের মানুষের সেতুবন্ধন অধরাই রয়ে গেছে।
ঐ অঞ্চলে বসবাসরত জনসাধারণের দাবি গোলাবাড়ী ইউনিয়নের বংশাই নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণের। ব্রিজটি নির্মিত হলে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়িত হয়। এতে করে এই অঞ্চলের সকল লোকজন খুব ভালোভাবে যাতায়াত করতে পারবে।
পোদ্দারবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা গোলাবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী হযরত আলী, হাবিবুর রহমান উজ্জ্বলসহ আরো অনেকে জানায়, প্রতি বছর নিজেদের খরচে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি থইথই করে। তখন নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে পার হতে ভয় লাগে। আমরা কোনো কৃষি পণ্য আনা- নেওয়া করতে পারি না।
তারা বলেন, কোনো লোক অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যায় না। হাসপাতালে নিতে গেলে প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। তবে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে আমাদের সকলের চলাচলের জন্য অনেক ভালো হতো।
গোলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আল-আমিন, মাছুদ ও সুমি আক্তার জানায়, বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে স্কুলে যেতে আমাদের খুব ভয় করে। কখন যেন ভেঙে নদীতে পড়ে যাই। তবে মাঝে মধ্যেই সাঁকো থেকে পা পিছলে নদীতে পড়ে গিয়ে বই-খাতা ভিজে যায়। আর স্কুলে যাওয়া যায় না।
আমাদের এখানে অতি দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর নিকট জোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
স্থানীয় গোলাবাড়ী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস ছালাম বলেন, বাঁশের সাঁকোটি এখন দুর্বল কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আছে। তবুও প্রয়োজনে সব সময়ই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পার হতে হয় সাঁকোটিতে। যেকোনো সময় সাঁকোটি ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
এব্যপারে গোলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা খান বাবলু কে জানান, গোলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বংশাই নদীর উপর যে বাঁশের সাঁকো রয়েছে সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে নদীর দুই পারের বাসিন্দারা এর সুফল ভোগ করবে। ব্রিজটি শীঘ্রই যাতে নির্মাণ হয় সে ব্যাপারে তিনি উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি জোর দাবি জানান।
তিনি আরও জানান, যাতে এখানে দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণ করা যায় এজন্য মধুপুর-ধনবাড়ী আসনের সাংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপির সু-দৃষ্টি কামনা করছি।