নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের ঐতিহ্যবাহী দীনি ইলম শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান পেচারআটা-মাটিআটা দাখিল মাদ্রাসা। পাহাড়ি অঞ্চলে গড়ে ওঠা প্রাচীন এই মাদ্রাসাটিতে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করলেও দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক লোভ-লালসার ফলে প্রতিষ্ঠানটির দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। বিশেষ করে অত্র মাদ্রাসার কম্পিউটার অপারেটর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও তার ভাই মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি জহুরুল ইসলাম পান্নুর কারণেই বেহালদশা বলে অভিযোগ তুলেছেন মাদ্রাসার শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (চুন্নু) পেচারআটা-মাটিআটা দাখিল মাদ্রাসার কম্পিউটার অপারেটর কাম-মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও দায়িত্ব পালন করেন অফিস সহকারী হিসেবে। এর বাহিরে তার আরও একটি পরিচয় আছে, তিনি রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানার আস্থাভাজন ছিলেন। পতিত সরকারের এই প্রেতাত্মাদের কারণে মাদ্রাসাটির এই দুরবস্থা। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও মাদ্রাসার সুপারের ভূমিকায় সব নিয়ন্ত্রণ করতেন। মূলত তাদের দুই ভাইয়ের কারণে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের পথে। শিক্ষক, অভিভাবকসহ কাউকেই তিনি পাত্তা দিতেন না। অভিভাবকদের দাবি, মাদ্রাসার অফিস সহকারী জিন্নাহ দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে যেসব গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সাবেক এমপি’র প্রভাব খাটিয়ে তার নিজের ছোট ভাই জহুরুল ইসলাম পান্নাকে অত্র মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করেছেন। এ ছাড়াও জাল-জালিয়াতি ও ভুয়া সনদ ব্যবহারকারী বেশ কয়েকজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ-বাণিজ্য ও অবৈধভাবে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ, মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা না থাকা এবং অস্বাভাবিক যাতায়াত বিল তৈরি করে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে পত্রিকায়। স্কুল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানববন্ধন করেছেন ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জমাও দিয়েছে। কিছু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বিভিন্ন দপ্তরে। কিন্তু বরাবরই অদৃশ্য কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে রসুলপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল হোসেন বলেন, অত্র মাদ্রাসার কেরানি চুন্নু অফিসের যাবতীয় কাজ বাড়ি থেকে সম্পন্ন করেন। আর দুর্নীতি হচ্ছে তার নিত্যদিনের সঙ্গী। তিনি রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। পেচারআটা-মাটিআটা দাখিল মাদ্রাসার সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, খাতা, রেজ্যুলেশন বই, নিয়োগ সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি সুপার নিয়োগের পত্রিকার কপি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও জহুরুল ইসলাম আত্মসাৎ করেছেন। শিক্ষকদের নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি, পে-স্কেলের কাগজপত্র, শিক্ষক নিয়োগের তথ্যাবলীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ তাদের কাছে। বারবার চাইলেও তারা প্রতিষ্ঠানে অদ্যাবধি সেগুলো জমা দেননি। এ ব্যাপারে অত্র মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও তার ভাই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম পান্নার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, পেচারআটা-মাটিআটা দাখিল মাদ্রাসার কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ আসলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।