মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩৭ অপরাহ্ন

চলতি মৌসুমে টাংগাইলে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে প্রান্তিক কৃষকদের

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১ জুন, ২০২৫
  • ২৩৭ বার পড়া হয়েছে

টাঙ্গাইল সদরের ভাঁটচান্দা গ্রামের প্রান্তিক চাষি আব্দুল কাদের। চলতি মৌসুমে ভাঁটচান্দা মৌজার গভীর নলকূপের আওতায় দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। উৎপাদন মূল্যের চড়া বাজারে টাকার পরিবর্তে সেচ পাম্প মালিকরা ধান নেয়ায় তিনি প্রায় নয় হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

আব্দুল কাদের বলেন, “এই মৌজায় প্রায় ৪৫ বছর যাব ধান চাষ করি। আগে টাকা নিলেও বর্তমানে ধান নিচ্ছে। এত আমরা প্রান্তিক কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ক্ষতি পোষাতে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী টাকা নেওয়ার দাবি করছি।”

শুধু আব্দুল কাদের নয়, ১২টি উপজেলায় ১৮৪টি গভীর নলকূপের বেশির ভাগ প্রান্তিক ধান চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কৃষকরা বলছেন, প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও ধান নেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। টাকা নেওয়ার কথা বললে সেচ পাম্প মালিকরা হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। এছাড়াও অনেক কৃষক ভয়ে সাংবাদিকের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, এসব নলকূপের আওতায় চলতি মৌসুমে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে প্রান্তিক কৃষকদের।

বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, প্রান্তিক পর্যায়ে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন খরচ কমাতে অন্তত ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই কিউসেকের ১৮৪টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেয় বিএডিসি। নলকূপগুলো সমিতির মাধ্যমে পরিচালনা করার কথা থাকলেও বেশির ভাগই প্রভাবশালীদের দখলে।

নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৫শ’ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে সিকি ভাগ হিসেবে ধান নিচ্ছেন। এতে প্রতিবিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার ধান চলে যাচ্ছে।

সরেজমিন ভাটচান্দা ছাড়াও টাঙ্গাইল শহরের এনায়েতপুর, করটিয়া, দাইন্যাসহ বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গভীর নলকূপগুলো প্রভাবশালীদের দখলে। কৃষকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও বেশির ভাগ সেচ পাম্প প্রভাবশালীদের পরিবারের সদস্য দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। এতে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা তেমন কোন উপকার পাচ্ছেন না।

আলিসাকান্দা গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলী বলেন, ‘আমাদের দাইন্যা রামপাল গ্রামে টাকা নেওয়া হয়। তবে আলিসাকান্দায় ধান নেওয়ায় প্রতি বিঘায় আমাদের চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার ক্ষতি হচ্ছে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন কৃষক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী টাকা নেয়ার কথা বললে সেচ পাম্প মালিকরা নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। কৃষি বিভাগ ও বিএডিসির কর্মকর্তারা এসব দেখেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি অনেক সেচ পাম্পের মালিক। তবে ভাটচান্দা গ্রামের সেচ পাম্প মালিক শামসুল হক বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী টাকা নিলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই ধান নিচ্ছি।”

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদেকীন বলেন, “কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে এবং প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়াতে হবে। অন্যথায় বছরের পর বছর কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে। একসময় তারা ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা বন্ধ করে দিবে।”

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক তরুণ ইউসুফ বলেন, “বিষয়টি অনৈতিক ও অমানবিক। মানবিকতা ও আইনের সুষ্ঠ প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষকদের স্বার্থে এগিয়ে আসতে হবে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশেক পারভেজ বলেন, “এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

টাঙ্গাইল বিএডিসির (ক্ষুদ্র সেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে নলকূপ দেওয়া হয়েছে। সব জায়গায় টাকা নেওয়ার নিয়ম। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

The Trend (Online Shop)

©২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি বা ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়)
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102