আজ ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে টাঙ্গাইল মুক্ত হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দখলদারিত্ব থেকে। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ, ত্যাগ ও নির্যাতনের গৌরবগাথায় আজও দিনটি টাঙ্গাইলবাসীর কাছে স্মরণীয়।
দিবসটি উপলক্ষে দীর্ঘদিন পর ঐতিহাসিক কাদেরিয়া বাহিনীর উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— ভোরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সঙযাত্রা ও লাঠিখেলা, বিকেল সাড়ে ৩টায় আলোচনা সভা।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন কাদেরিয়া বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। প্রধান অতিথি থাকবেন মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের কমান্ডার ইন চিফ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। বাছাইকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও দেশ–বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও আলোচনায় অংশ নেবেন।
স্বাধীনতার ঘোষণার পর টাঙ্গাইলে দ্রুত সংগঠিত হয় সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ, যা তখন জেলার ‘হাই কমান্ড’ হিসেবে পরিচিত ছিল। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ছিলেন আহ্বায়ক ও সশস্ত্র গণবাহিনীর সর্বাধিনায়ক। আব্দুল কাদের সিদ্দিকীসহ অন্যান্য নেতাদের নেতৃত্বে চলতে থাকে সংগঠিত প্রতিরোধ।
১৯৭১ সালের মার্চে কয়েকদিন টাঙ্গাইল ছিল স্বাধীন। পরে পাকবাহিনীর আক্রমণ শুরু হলে টাঙ্গাইলে গড়ে ওঠে একের পর এক প্রতিরোধযুদ্ধ—মির্জাপুরের গোড়ান-সাঁটিয়াচড়া, বল্লা, মাটি কাটা, ভূঞাপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘন ঘন সংঘর্ষে শত শত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
এরই মধ্যে পাহাড়ি অঞ্চলে সংগঠিত হয় কাদেরিয়া বাহিনী, যার সদস্য সংখ্যা পরে ১৭ হাজারে পৌঁছায়। এই বাহিনী টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, সিরাজগঞ্জসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীকে চাপে ফেলে রাখে।
৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত টাঙ্গাইলে অবস্থান করছিল প্রায় পাঁচ হাজার পাকসেনা ও হাজারো রাজাকার। একই সময়ে কাদেরিয়া বাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে মুক্তিযুদ্ধের কৌশল গড়ে তোলে।
১০ ডিসেম্বর রাতে কাদেরিয়া বাহিনী চারদিক থেকে টাঙ্গাইল শহর ঘিরে ফেলে। ভোরে বিভিন্ন দিক দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করেন।
শহরের পানির ট্যাঙ্ক এলাকায় শেষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাকবাহিনী; পাল্টা আক্রমণে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পরাজিত করেন। পরে সার্কিট হাউসে অবস্থানরত পাকসেনারা আত্মসমর্পণ করে।
১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল পুরোপুরি হানাদারমুক্ত হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে টাঙ্গাইলবাসী।