মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন

টাঙ্গাইলে ভোটের জটিল হিসাব, বিএনপি নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে
ছবি-ইত্তেফাকের

টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় সংসদীয় আসন আটটি। এসব আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর চাপে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে প্রার্থী মনোনয়নে বিলম্ব করে বিএনপি। গত ৪ ডিসেম্বর সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে মনোনয়ন দেওয়ার বিরোধিতা করে রাতেই মশাল মিছিল করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল।

অন্য আসনগুলোতেও বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর চাপে ভোটের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ ভোটার থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা। মনোনীতরা ঐক্যের ডাক দিলেও মনোনয়ন বঞ্চিতরা মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে একের পর এক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। আবার, টাঙ্গাইল-৮ ও টাঙ্গাইল-৪ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ও তার ভাই লতিফ সিদ্দিকী বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবেন।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী টাঙ্গাইলের আট আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে নীরবে ভোটারদের মন জয় করার জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। আট আসনেই এনসিপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। গণঅধিকার পরিষদ তিনটি এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও গণসংহতি আন্দোলন দুটি করে আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নির্বাচনী জোটের হিসেবে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন বলে জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।

টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী): এই আসনে ফকির মাহবুব আনাম স্বপন ওরফে স্বপন বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। স্বপন ফকির দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠঘাট চষে বেড়ানোর পাশাপাশি মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ করছেন।

অন্যদিকে, স্বপন ফকিরের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ও তার কর্মী-সমর্থকরা। তারা দুজনেই বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। সম্প্রতি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কৃত কর্নেল (অব.) আসদুল ইসলাম আজাদও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ মোন্তাজ আলী সুশৃঙ্খল ও দলবদ্ধভাবে নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এবার জামায়াতের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রার্থী সাইদুল ইসলাম আপন প্রচারাভিযানে রয়েছেন। সাবেক এমপি খন্দকার আনোয়ারুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর): এই আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টুকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সকল নেতাকর্মী তার প্রতি আস্থা রেখে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আসনে জামায়াতের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মওলানা হুমায়ুন কবীর দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিলউজ্জামান জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল): এই আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ওবায়দুল হক নাসির। সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুত্ফর রহমান খান আজাদ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও এই আসনে তিন বারের সাবেক এমপি। তার কর্মী ও সমর্থকরা ওবায়দুল হক নাসিরকে বয়কটের ডাক দিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।

এই আসনে টাঙ্গাইল জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি হোসনি মোবারক বাবুল জনসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লা হায়দার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন হাফেজ মাওলানা রেজাউল করিম।

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী): এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য লুত্ফর রহমান মতিন। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন ঢাকা বিভাগী সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটু। উভয়েই সমান তালে গ্রামেগঞ্জে সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এই আসনে পাঁচ বার নির্বাচিত এমপি ও সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী শক্তিশালী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করে এমপি হয়েছিলেন। তার অনুসারীরা চারদিকেই সরব রয়েছেন। এই আসনে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও টাঙ্গাইল জেলা জামায়াতের নায়েব আমির খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত।

টাঙ্গাইল-৫ (সদর): এখানে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। মাঠে রয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল, টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সাবেক সহসভাপতি ছাইদুল হক ছাদু, টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক সভাপতি আহমেদুল হক শাতিল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য জিয়াউর রহমান প্লেটো। এদের মধ্যে ফরহাদ ইকবালের অনুসারীরা মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে ৪ ডিসেম্বর রাতে মশাল মিছিল ও সমাবেশ করে।

এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা জামায়াতের আমির আহসান হাবিব মাসুদ। তিনি ব্যাপকভাবে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এনসিপির প্রার্থী হচ্ছেন সংগঠনের জেলা শাখার সদস্য সচিব মাসুদুর রহমান রাসেল। ছাত্রফেডারেশন টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি ফাতেমা রহমান বিথী গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষে নির্বাচনের মাঠে যুক্ত হয়েছেন। এছাড়া বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের ভাই মুরাদ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার): এই আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন রবিউল আউয়াল লাভলু। জামায়াতের মনোনয়ন পেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ডা. এ কে এম আব্দুল হামিদ। তিনি ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি। এই আসনে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি কবীর হোসেন এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মনোনয়ন পেয়েছেন মো. আখিনুর মিয়া। এনসিপির হয়ে নির্বাচন করবেন ওহেদুজ্জামান সুমন।

টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর): এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিক। এই আসনে একাধিক ব্যক্তি বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও হাল ছাড়েননি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সাঈদ সোহরাব। তিনি মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে সংগঠনের জেলা শাখার শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ তালুকদার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও আলিফ দেওয়ান গণসংহতি আন্দোলন এবং তোফাজ্জল হোসেন গণঅধিকার পরিষদ থেকে এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। এনসিপি থেকে খন্দকার মাসুদ পারভেজ নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর): ব্যাপক জটিল অঙ্কের আসন। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান। মনোনয়ন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী শিল্পপতি সালাউদ্দিন আলমগীর রাসেলের হয়ে কাজ করছেন। এরই মধ্যে টাঙ্গাইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক খালেক মণ্ডলের সঙ্গে কমিটি গঠন দ্বন্দ্বে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন আহমেদ আযম খান। এই দ্বন্দ্ব এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনে কয়েক শ নেতাকর্মী বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে।

এই আসনে দুই বারের সাবেক এমপি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। তিনি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। বঙ্গবীর নির্বাচনে এলে নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ নতুন করে সাজাতে হবে বলে বাসাইল-সখীপুরের বাসিন্দারা জানান। এই আসনে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন সংগঠনের জেলা শাখার সহসাধারণ সম্পাদক ও বাসাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি দুই উপজেলাতেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এনসিপি থেকে মাহমুদুল হক মাসুম নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন বলেন, ‘বিএনপি বড় সংগঠন। মনোনয়ন ঘিরে দ্বন্দ্ব-ক্ষোভ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সবাই এক হয়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করবে।’ টাঙ্গাইল জেলা জামায়াতের আমির আহসান হাবীব মাসুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের নতুন পরিবেশে দেশের কল্যাণের জন্য গ্রহণযোগ্য মানুষগুলোকে জামায়াতের প্রার্থী করা হয়েছে।’

সুত্র-দৈনিক ইত্তেফাক

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

The Trend (Online Shop)

©২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি বা ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়)
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102