নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় জমে উঠেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। প্রার্থীদের জমজমাট প্রচারে সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। এ নির্বাচনে যেন কোনো ধরনের অনিয়ম বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। আগামী মে মাসে চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলা পরিষধ নির্বাচন। এর মধ্যে আগামী (৪ মে) প্রথম ধাপ, (১১ মে) দ্বিতীয় ধাপ, (১৮ মে) তৃতীয় ধাপ এবং (২৫ মে) অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ। এরপর ধাপে ধাপে অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এসব ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচন সামনে রেখে গণসংযোগ জোরদার করেছেন প্রার্থীরা। এই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়াম্যান প্রার্থীরা মাঠ চশে বেড়াচ্ছেন। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোও তৎপর। যদিও এবার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকছে না। তাই আধিক্য থাকছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর। জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর অনুষ্ঠিতব্য এসব স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে চোখ রাখছে বিদেশীরাও।
নির্বাচন কমিশন সারাদেশের সকল উপজেলায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সর্বস্তরের মানুষ নির্বাচনমুখী হয়ে পড়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। তবে বিএনপি প্রকাশ্যে নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্বাচন করতে বারণ করছে না। এর ফলে প্রায় প্রতিটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা দেয়। আর আওয়ামী লীগকে অনুসরণ করছে আরও ক’টি রাজনৈতিক দল। জাতীয় পার্টিসহ সকল দল দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ায় তাদের সমর্থিতরা মাঠে নেমে পড়েছেন। নির্বাচন করতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ জোরদার করেছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও স্বজনরা।
উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় পরিষদ সরকার নির্বাচনগুলো সার্বজনীন। এসব নির্বাচনে দলীয় ইমেজ তেমন কাজে আসে না। কারণ, প্রতিটি এলাকার অধিকাংশ মানুষই চান দলমত নির্বিশেষে সবচেয়ে ভালো প্রার্থীকে বিজয়ী করতে। তবে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে এলাকাবাসী বিভিন্ন কারণে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সরব হতে চান না। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ক্ষমতাসীন দল কাউকে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার আগাম ঘোষণা করেছেন। যে কারণে এবার উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো অংশগ্রহণমূলক হতে ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছোটখাটো ভুলত্রুটি সংশোধন করে এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কঠোর অবস্থানে থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করছে নির্বাচন কমিশন। এমন বার্তা পেয়ে উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ জোরদার করেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে তৎপর। তারা নিজ নিজ এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে নিজ নিজ কৌশলে ভোটব্যাংক বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আওয়ামী লীগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার ঘোষণা দেয়ায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। কারণ এ সিদ্ধান্তের পর দলের মনোনয়ন না পেলেও যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। আর সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ পছন্দ অনুসারে যাকে খুশি ভোট দিতে পারবেন এবং তার পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। একইভাবে অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরাও নির্বাচন করতে পারবেন। এ কারণে এবারের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উৎসবমুখর হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে ভোটের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। আর বিগত ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবার তিন উপজেলায় দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। তবে বিগত ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদ বাদে বাকি দুটি পদ উন্মুক্ত রাখে। তবে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিসহ আরও কিছু দল দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিরোধিতা করে আসছে আইন সংশোধনের পর অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। কারণ, দেশের সকল উপজেলায় একজন চেয়ারম্যান ও ২ জন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় এ নির্বাচনে। উপজেলা ভিত্তিক সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তাদের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোও এ নির্বাচনকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
বিগত ১৯৮৫ সালে দেশে প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিগত ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বার ও বিগত ২০০৯ সালে তৃতীয়বার, ২০১৪ সালে চতুর্থবার এবং ২০১৯ সালে পঞ্চমবার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী মে মাসে ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলা এখন সরগরম। প্রতিটি উপজেলায় এবার প্রার্থীর ছড়াছড়ি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখায় এবং কাউকে নৌকা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দলের স্থানীয় নেতারা যে যার মতো করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে অন্যান্য দল ও দল না করা যোগ্য প্রার্থীরাও নির্বাচন করবেন। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে সকল প্রার্থীই এখন সরব।