নিজস্ব প্রতিনিধিঃ এখন অনলাইন কেনাকাটার যুগ। ঘরে বসে মোবাইলে কেনা যায় পছন্দের কাপড়। পেমেন্টও করা যাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। এরপরও ২০ বছর আগে দর্জির দোকানে যে ভিড় ছিল এখনো তেমনই রয়েছে। সেলাইয়ের জন্য এনালগ মেশিনের জায়গায় ডিজিটাল মেশিন এলেও ১০/১২ রোজার পর বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের অর্ডার নেওয়া। তবে বন্ধ হয়নি সুতো আর সেলাইয়ের মেলবন্ধনের শব্দ। ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে এখন দিন-রাত টাঙ্গাইলের দর্জিপাড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল্লার অলিগলি থেকে বিপণিবিতানে কান পাতলেই সে শব্দ শোনা যাচ্ছে।
আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে দর্জিবাড়িতে দিনরাত ব্যস্ততা চলছে। তবে অধিকাংশ দর্জির দোকানগুলোতে অর্ডার নেওয়া বন্ধের পথে। কারিগররা জানান, ১৫ রোজা পর্যন্ত অর্ডার দেওয়ার সুযোগ থাকে। তবে সেক্ষেত্রে ক্রেতা পরিচিত কি না সেটি বিবেচনায় রাখা হয়। দর্জি বাড়ির এই ব্যস্ততাই জানান দিচ্ছে যে সামনে ঈদ আসছে। এই ব্যস্ততা চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত।
টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন দর্জির দোকানগুলোতে দেখা যায় কারিগরদের যেন দম ফেলার সময় নেই। অপেক্ষাকৃত অভিজাত এই এলাকাগুলোতে মজুরির দরও বেশি। এই এলাকায় গজ কাপড় আর সেলাইয়ের কাজ করা হয় একসঙ্গেই, তাই কাপড় নিয়ে অন্য কোথাও দৌড়ঝাঁপের দরকার পড়ে না। এখানে মজুরি শুরু হয় ৭শ’ থেকে যা সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত গড়ায় বলে ক্রেতারা জানান। অপেক্ষাকৃত কম মজুরিও মিলছে বিভিন্ন মার্কেটে। কারিগররা জানান, মহল্লার দোকানগুলোর সবই পরিচিত ক্রেতা। সেকারণে বেশি নেওয়ার সুযোগ থাকে না। এরপরও ঈদকে সামনে রেখে ১০০-১৫০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে থ্রিপিস তৈরি করতে ৫০০-১০০০ টাকা খরচ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দামি কাপড় থেকে সাধারণ কাপড় সব মজুরি একই। শুধু পাড়া-মহল্লা নয়, টাঙ্গাইলের বড় বড় শপিংমলেও ব্যস্ততা বেড়েছে। যেমন- টাঙ্গাইল মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ মার্কেট, সাউদিয়া মার্কেট, মাহমুদুল হাসান মার্কেট, আলী কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে কাপড়ের ধরন এবং ডিজাইন অনুযায়ী ব্লাউজের মজুরি রাখা হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর সালোয়ার কামিজের মজুরি ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা। নতুন নতুন অর্ডারের চাপও বেড়েছে এই সময়।
এসব মার্কেটের কারিগররা বলেন, আমাদের টেইলার্সের একটা নির্দিষ্ট ক্যাপাসিটি থাকে। দেখা যায়, আমরা ৩ হাজার পিস কাপড় তৈরি করতে পারি ঈদকে ঘিরে। এর বেশি নিলে তো হয় না। এছাড়া তাড়াহুড়োতে কাপড় সেলাইয়ে অনেক সময় ভুল হয়, যা ঈদের আনন্দকে নষ্ট করে দেয়। সেই চিন্তা থেকেই অনেকে আগেভাগে বানিয়ে ফেলছেন তাদের পছন্দের জামা-কাপড়। সুস্মিতা নামের এক ক্রেতা জানান, শেষের দিকে দর্জির দোকানগুলোতে চাপ বেশি থাকে, কাজের মানও পড়তি হয়। সেকারণে আগে আগে আসা। একটু আগেই কিনে রাখা ভালো। কাপড়ের মধ্যে একটু ডিজাইন করতে চাইলে আগেই কাজ করানো ভালো বলে তিনি জানান। এদিকে শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে পছন্দমতো ডিজাইনে জামা বানাতে গজ কাপড়ের খোঁজে অনেকেই এসেছেন। তাদের অধিকাংশের পছন্দ ঈদকে ঘিরে নতুন কালেকশন। এর মধ্যে মাইসরি, জয়পুরি প্রিন্ট ও কাজ করা জর্জেট ঈদকে কেন্দ্র করে দোকানগুলোতে আনা হয়েছে। ২০০ থেকে ৩ হাজার টাকা প্রতি গজ কাপড় বিক্রি হচ্ছে এখন বিপণিতে। ব্যবসায়ীরা জানান, এবার বেচাকেনা ভালো। মার্কেটে ক্রেতাদেরও আনাগোনাও বেশি। তবে যারা বেতন বোনাসের অপেক্ষার পর কাপড় কিনবেন তারা মূলত তৈরি পোশাকের দোকানে ঢুঁ মারবেন। তবে এসব দোকানের মূল ক্রেতা নারীরা তৈরি পোশাক আর অনলাইন কেনাকাটা সবসময়ই চলে। ধুম লাগে ঈদ এলেই। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কাপড় বানিয়ে পড়ার প্রবণতা গেল এক দশকে বেশ কমেছে। এরপরও কেন দর্জির দোকানে ভিড়! এ বিষয়ে জানতে কথা হয় টাঙ্গাইলের একাধিক দর্জির দোকানির সঙ্গে। তারা জানান, এখন অনেক বেশি ক্রেতা আসেন যারা অনলাইন থেকে অর্ডার করেছেন কিন্তু শরীরে ভালো ফিট হয় না, অনেকের সাইজ বড় হয়ে গেছে। এসব কারণে দর্জি কাছে না এসে আর উপায় থাকে না। এছাড়া ইদানীং কাপড় যেন শরীরে ভালো মানায় সে কারণে বানানোর আগেই ওয়াশ করা হয়ে থাকে।
অন্যদিকে টাঙ্গাইলের প্রায় সকল টেইলার্সগুলোতে এরই মধ্যে কারিগর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এই সময় অর্ডারের চাপও বেশি। তারা জানান, মুলত শবেবরাতের পর থেকেই ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন পোশাক বানানোর অর্ডার শুরু হয়ে যায়। আয়েশা নামের একজন কারিগর বলেন, একটা নির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে কাজ করি। প্রতিদিন ১০টির বেশি কাজ করা যায় না। সে অনুযায়ী ঈদের আগে চাঁদ রাত পর্যন্ত কাজ করব।