নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে স্কুল মাঠে পশুর হাট বন্ধের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী। উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের পৌজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে দীর্ঘ এক যুগ ধরে বসছে পশুর হাট। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের। প্রতি বছর পশুর হাট বন্ধের দাবি করা হলেও বন্ধ হচ্ছে না অদৃশ্য কারণে। স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানালেও কোন প্রতিকার মেলেনি।
জানা যায়, প্রতি বছর ঈদুল আযহার উপলক্ষে পৌজান সরকারি প্রাথমিক স্কুলের মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসে। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে কোরবানির পশুর হাট শুরু হয়। এ সময়ে নামমাত্র স্কুল খোলা থাকে। যারা পশু কেনাবেচা করতে আসেন, তাদের হৈ-হুল্লায় ক্লাস নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বস্তিতে লেখাপড়া করতে পারে না। এছাড়া পশুর বর্জ্যের গন্ধে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হয়ে উঠে। স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
স্কুলের অভিভাবক ও স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলেন, কোরবানির সময় পশুর হাটের প্রয়োজন আছে। হাট থেকেই পশু কেনাবেচা করতে হয়। গ্রামের অন্য আরও অনেক জায়গা রেখে পশুর হাটের জন্য স্কুল মাঠে বসানো হয়। বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাট থাকলে এমনিতেই শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। তার ওপর সেই হাট যদি স্কুলের মাঠ অবধি গড়ায় তখন শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির আর শেষ থাকে না। দেশের অনেক স্থানেই দেখা যায় বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে নানান কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। আর এ দখলের পেছনে থাকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিংবা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে তারা দখলদারিত্ব চালিয়ে যায়। এতে লেখাপড়া বিঘ্নিত হয়। শিক্ষার্থীরা যে অবসরে খেলাধুলার আনন্দে ভাসবে- সেটাও তখন আর সম্ভব হয় না। পশুর হাটের দরকার আছে। তাই বলে স্কুলের মাঠ দখল করে পশুর হাট হতে পারে না। স্কুল থেকে নিরাপদ দূরত্বে পৃথক স্থানে গরুর হাট বসানোই উচিত। শিক্ষার পরিবেশ কোনো মতেই নষ্ট হতে দেয়া যায় না।
অভিযোগকারী শুকুর মাহমুদ বিজয় জানান, ঈদুল আযহা উপলক্ষে স্কুলের মাঠে কোরবানির পশুর হাট বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। গত (৩ জুন) অভিযোগ দেওয়া হলে এ বিষয়ে নির্বাহী অফিসারের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার (১১ জুন) থেকে পশুর হাট শুরু হবে। এর মধ্যে হাটে বাঁশের খুটি পুঁতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন হাটের ইজারাদারা। পশুর হাটের প্রয়োজন, কিন্তু স্কুলের আশেপাশে ফাঁকা জায়গায় আছে সেখানে করতে পারে। পৌজান বাজার বণিক সমিতির সভাপতি কোরবান আলী বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাট হওয়ার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। পশুর হাট আমাদের প্রয়োজন, কিন্তু স্কুলের বাদ দিয়ে করা উচিত।
পৌজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মুর্তজ বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পশুর হাটের অনুমোদন দিলে আমার কিছুই করার নেই। অনুমোদন না দেওয়া হলে হাট হবে না। পৌজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুকসেদ আলী জানান, ইউএনও সাহেবের ঈদুল আজহার পশুর হাটের জন্য স্কুল মাঠের অনুমোদন না দিলে হাট হবে না।
পৌজান হাটের ইজারাদার আফসারসহ অন্যান্যদের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহাদাত হুসেইন বলেন, পৌজান হাটের ইজারাদারদের ডেকে এনে বলে দিবো পশুর হাট অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার জন্য।