নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন এলাকায় যেন বহুতল ভবন নির্মানের প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। শহরের যে দিকেই তাকানো হয় দেখা যায় ইট পাথরে গড়ে উঠা বড় বড় দালান। এসব ভবন নির্মানে মানা হচ্ছেনা কোন নিয়ম কানুন। বিল্ডিং কোড মেনে নির্মান করা হচ্ছেনা এমন অভিযোগ রয়েছে অনেক। বিশেষ করে ভবন নির্মানের সময় অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে পথচারীসহ সাধারন মানুষ। আর নির্মান সামগ্রী রাস্তায় রাখা সেটাতো অলিখিত নিয়মে পরিনত হয়েছে। পথচারীকে ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনাও। প্রতিবেশীরা অসহায়।
গত ১৬ অক্টোবর এমনি নির্মম ঘটনা ঘটেছে শহরের সাবালিয়া নির্মানাধীন একতা টাওয়ারে। ওইদিন দুপুরে একতা টাওয়ারের পাশে ১০ থেকে ১২ জন শিশু খেলা করছিল। এ সময় নির্মানাধীন টাওয়ারের একটি ইট ছুটে এসে এক শিশুর উপর পড়ে। এতে শিশুটির মাথা থেতলে যায়। আশংকাজনক অবস্থায় শিশুটিকে স্থানীয়রা টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে শিশুটির চিকিৎসা চলে। এ সময় চিকিৎসকরা শিশুটিকে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কোন রকমে শিশুটি মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেলেও এখনো আশংকা রয়েছে। উন্নত কোন হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করার পর হয়ত জানা যাবে শিশুটি নিরাপদ অবস্থায় আছে কিনা। এব্যপারে ভুক্তভোগী শিশু সুর্য (১১) মামা সুমন সুত্রধর বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, ভবনের পাশ দিয়ে হেটে যাবার সময় প্রায় নির্মান সামগ্রী পড়ে যায়। নির্মান সামগ্রী রাস্তায় রাখায় এতে অনেকেই ইতমধ্যে আহত হয়েছে। ভবন নির্মানের ক্ষেতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেয়ার কারনে বিভিন্ন স্থানে অহরহ এ ধরনে ঘটনা ঘটলেও এর কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা সাধারন মানুষ।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তের এক আদেশে বিধিমালা অনুসরণ করে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর তত্বাবধানে নির্মান ও সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে বলা হলেও তা অনেকেই মানতে চায়না। বিধিমালা অমান্য করলে ওই ভবন ধ্বংস করতে পারবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। কিন্ত কে শোনে কার কথা। এক্ষেত্রে পৌরসভা বা জেলা প্রশাসনও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে। কিন্তু যথাযথ তদারকি প্রয়োগ না থাকায় এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন ভবন নির্মাণে শ্রমিক এবং পথচারীদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ জাতীয় ইমারত নির্মান বিধিমালা মানছেন না অনেক ভবন মালিক এবং নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
অভিযোগ রয়েছে, কয়েকটি বড় বড় ডেভেলপার কোম্পানি ছাড়া বেশিরভাগ ভবন মালিকরা ভবন নির্মাণে কোনও আদর্শ ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করছে না। ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেওয়ার সময় প্রত্যেকে সব নিয়ম মানার শর্ত পূরণের অঙ্গীকার করলেও তার বেশিরভাগই মানছে না।
এব্যপারে আহত সূর্যের মামা সুমন সূত্রধর বলেন, তার ভাগিনা সূর্যকে হাসপাতালের কমর্রত ডাক্তাররা তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা যেতে বলেছে। এতে আর্থিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি এবং আরো ক্ষতিগ্রস্থ হবো। আমারা ন্যায় বিচার পেতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে একতা টাওয়ারের সাধারন সম্পাদক মো. আব্দুল লতিফ বলেন, আমি শুনেছি, এটা একটা দূঘটনা। আমরা আমাদের নির্মানধীন টাওয়ারের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই রেখেছি কিন্তু হঠাৎ করে এই দূঘটনাটি ঘটেছে। আমাদের পক্ষ থেকে ঐ শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায, একতা টাওয়ারের সামনে নিরাপত্তা বেষ্টনী কোন রকম থাকলেও পিছনের দিকটায় নামকাওয়াস্তে। আর এই পিছনের নিরাপত্তা বেষ্টনী কোন রকমে থাকার কারনেই এই দূঘটনা।
একতা টাওয়ারের সাধারন সম্পাদক মো. আব্দুল লতিফ ঐ শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা বললেও এখন পযর্ন্ত ভুক্তভোগীদের সাথে কোন যোগাযোগ করে নাই।
উল্লেখ্য, ইমারত নির্মান বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী, ‘যদি নির্মানকাজ কোনও রাস্তায় বা স্থানে জনসাধারণের জন্য বাধা-বিপত্তি অথবা অসুবিধা সৃষ্টি করে, তাহলে আবেদনকারী কর্তৃক সেই স্থানে অস্থায়ী ঘের, জীবন রক্ষাকারী বাধা এবং বিকল্প চলাচল পথ তৈরি করে জনসাধারণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্মান প্রকল্পের দ্রব্যাদি ও জিনিসপত্র জনপথে কিংবা ফুটপাতে রেখে জনসাধারণের চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি করা যাবে না। আবাসিক এলাকায় সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত কোনও যন্ত্রপাতি ব্যবহার বা নির্মান পদ্ধতির মাধ্যমে নির্মানসাইট বা প্রকল্প স্থলে বিরক্তিকর কোনও আওয়াজ বা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যাবে না এবং দিনরাতের কোনও সময় সাইটে ইট বা পাথর ভাঙানো মেশিন ব্যবহার করা যাবে না।’