নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে গত দুই মাসে ১০টির বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কখনো ঘরের দরজা ভেঙে বসতবাড়িতে আবার কখনো রাস্তায় গাছ ফেলে ট্রাক বা বাসে ডাকাতির ঘটনা অহরহ ঘটছে। ডাকাত আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন এ এলাকার সাধারণ মানুষ। দেশী অস্ত্র ঠেকিয়ে নিয়ে নিচ্ছে মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার, টাকা পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। ডাকাতের আক্রমণে আহত হয়েছেন অনেকেই।
ভুক্তভোগীরা জানান, ডাকাত আতঙ্কে রাত কাটছে তাদের। গত সোমবার উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের মালিরচালা (ভূইয়া বাড়ি মোড়) এলাকায় তিন বাসে ডাকাতি হয়। ওই এলাকার রাস্তার পাশের গজারি গাছ কেটে শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য রওনা হওয়া তিন বাসের শিক্ষার্থীদের টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে ডাকাত দল। পরে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় ডাকাত দল। শিক্ষা সফরের বাসে থাকা শিক্ষক ওবাইদুল ইসলাম রুবেল জানান, মঙ্গলবার শেষ রাতের দিকে আমরা ফুলবাড়িয়ার সোয়াইপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকসহ নাটোরের উদ্দেশ্য রওনা দেই। ভোর ৪টায় সাগরদীঘি বাজার পার হয়ে ভূইয়া বাড়ি মোড়ে পৌঁছালে রাস্তায় গাছ ফেলে আমাদের গতিরোধ করে ১৫-২০ জনের ডাকাত দল। তারা আমাদের তিনটি বাসে ডাকাতি করে। মোবাইল, টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ সব নিয়ে যায়। এসময় রবিন নামে এক ল্যাবসহকারীকে আঘাত করে ডাকাতরা।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি একই স্থানে মালবাহী একটি ট্রাকে ডাকাতি হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি সাগরদীঘি-ঘাটাইল আঞ্চলিক সড়কে সন্ধানপুর ইউনিয়নে ল্যাংড়াবাজার (ফকিরচালা) এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ১০টি যানবাহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ১০ ফেব্রুয়ারি ডাকাতি হয় ধলাপাড়া ইউনিয়নের শহরগোপীনপুর এলাকার মাদরাসা শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুনের বাড়িতে। ১০ চাকার বড় ট্রাক নিয়ে ডাকাতির কবলে পড়া চালক মিন্টু মিয়া (৩৫) জানান, অনেকগুলো গাড়ির সারি দেখে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে জানতে চান এখানে কী হয়েছে। এ সময় তার কাছে থাকা টাকা, মোবাইলসহ সব নিয়ে যায় ডাকাত দল। গত ২৪ নভেম্বর লক্ষীন্দর ইউনিয়নের বেইলা গ্রামে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলামের বাড়িতে ডাকাতি হয়। রফিকুল জানায়, এ বিষয়ে ঘাটাইল থানায় মামলা করেছি।
গত ১ নভেম্বর রাতে বাইরের গেট, কেচিগেট, বারান্দার তিনটি তালা এবং ঘরের দরজা ভেঙে পাকুটিয়া এলাকায় নিতাই আদিত্যের ঘরে ডাকাতি হয়। উপজেলার শহর গোপিনপুর জোরবহচালা গ্রামের আব্দুল কাদের ৯ ডিসেম্বর তার খামারের মুরগি এবং বাগানের কলা বিক্রির আট লাখ ৭৫ হাজার টাকা ঘরে রাখেন। ওই রাতেই ডাকাত হানা দেয় তার বাড়িতে।
একই রাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে ওই গ্রামের সৌদি প্রবাসী রফিকুল ইসলামের বাড়িতে। রফিকুলের স্ত্রী মর্জিনা জানান, থানায় অভিযোগ বা কোনো মামলা করেননি।
এর আগে ৫ ডিসেম্বর রাত ১টার দিকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে শহর গোপিনপুর গ্রামের আমির হামজার বাড়িতে। হামজা বলেন, ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ১০-১২ জনের একটি ডাকাত দল। দা, রড, কিরিচ ঠেকিয়ে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং দেড় ভরি স্বর্ণ নিয়ে যায়। পরদিন ধলাপাড়া ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এসে লুট হওয়া মালপত্রের বিবরণ লিখে নিয়ে যায়। ভুক্তভোগীরা জানান, নিরাপত্তাহীনতায় আছেন তারা। সন্ধ্যা নামলেই ডাকাতির ভয়টা বেড়ে যায়।
ঘাটাইল থানার ওসি রকিবুল ইসলাম বলেন, লক্ষীন্দর ইউনিয়নের একটি ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন। অন্যান্য ডাকাতির ঘটনার কোনো বাদি না থাকায় মামলা নেয়া যায়নি।