নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আপনার বাসায় গাড়ি রাখার জায়গা নেই। কোন চিন্তা নেই, নির্দ্বিধায় আপনি আপনার গাড়ি টাঙ্গাইল শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে রাখতে পারেন। কোন সমস্যা নেই- জায়গার কোন ভাড়া গুনতে হবে না।
রাখতে পারেন, মোটরসাইকেল, ভ্যান, ময়লার গাড়ি, সিএনজি, ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা, বাস, মিনিবাস- ২৪ ঘন্টাই উন্মুক্ত।
শহর দিয়ে যাচ্ছেন- হঠাৎ প্রকৃতি ডাক দিল, চলে যান শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে। দাঁড়িয়ে যান শহীদ বেদীর পিছনে, কোন সমস্যা নেই। বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই।
পান-বিড়ি-চা, ফুচকা-চটপটি, ঝাল মুড়ির দোকান করবেন? জায়গায় পাচ্ছেন না, চলে যান শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে, একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে। উদ্যানের মুক্তমঞ্চে বসে ইচ্ছামতো- যা ইচ্ছে করুন- আপনাকে ঠেকাবে সাধ্য কার?
উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ অনেক উদার, তারা কাউকে কোন কিছুতেই না করতে পারেন না।
অসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানের ইতিহাস, এই উদ্যানের ইতিহাস ১৫২ বছরের পুরনো ইতিহাস।
১৮৬৯ সালে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা থেকে আলাদা করে টাঙ্গাইল মহুকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। মহুকুমা শহরের মধ্যস্থলে অবস্থিত বর্তমান শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে পুলিশ প্যারেড ময়দান স্থাপন করা হয়।
পরে ১৯৬৯ সালে টাঙ্গাইল জেলায় উন্নীত হলে বর্তমান পুলিশ লাইনে পুলিশ প্যারেডের স্থান সরিয়ে নেওয়া হয়।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর লাখো প্রাণের বিনিময় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়।
১৯৭২ সালের ২৪শে জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টাঙ্গাইলে আসেন, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের কাদেরিয়া বাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র জমা নেওয়ার জন্য। অস্ত্র জমা নেওয়ার স্থানটি ছিল বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ।
অস্ত্র জমা নেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ওই দিনই তৎকালীন পুলিশ প্যারেড ময়দানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে স্মৃতি স্তম্ভের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। তখন থেকেই তৎকালীন পুলিশ প্যারেড ময়দান জেলায় শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
পরে পর্যায়ক্রমে শহীদ বেদী, ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের আবক্ষ ভাস্কর্য ও মুক্ত মঞ্চ তৈরি করা হয়।
দেশের স্বাধীনতার জন্য ৩০ লক্ষ শহীদদের স্মরণে যে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান, তার বর্তমান অবস্থা দেখে কি মনে হয় আমরা শহীদদের যথার্থ মূল্যায়ন করছি?
প্রশ্নটি টাঙ্গাইল জেলার মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীসহ সচেতন টাঙ্গাইলবাসীর কাছে রাখলাম। আশা করি, আপনারা আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন।