নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে মজিদ মাতাব্বর (৬০) নামে এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে এক কন্যাকে (১৪) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। চলতি মাসের শুরুতে উপজেলার পারখী ইউনিয়নের গোয়ারিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
গত সোমবার (২৫ মার্চ) স্থানীয় মাতব্বর লেবু মিয়ার ইশারায় শালিসের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাঁচাপার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসীর। এতে জনমনে ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
ভুক্তভোগী মেয়ের বাবা আব্দুল মান্নান পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ী। তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম জানান, মেয়ে পার্শ্ববর্তী দেওপাড়া মাদ্রাসা ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। মজিদ আমার মেয়েকে পাত্র দেখানোর কথা বলে টাঙ্গাইল নিয়ে যায়। আমার মেয়ের নানা সম্পর্কে মজিদ সরল বিশ্বাসে তার সাথে যাইতে দেওয়া হয়। কিন্তু সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার মেয়ের ক্ষতি করে। মেয়ে বাড়িতে আসার পর তখন বিষয়টি জানতে পারি।
স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার (২৫ মার্চ) স্থানীয় মাতব্বর লেবু মিয়ার ইশারায় শালিসের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপার চেষ্টা করে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে জুড়ি ভোটে। স্থানীয় সাত্তার তালুকদারের সভাপতিত্বে মুক্তা আলী, খান বাহাদুর, লেবু মিয়া, জুলহাসসহ ৫জন মাতব্বরের দায়িত্বে মজিদকে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ৬০ শতাংশ জমি মেয়ের নামে ধার্য করা হয়। এক পর্যায়ে জরিমানার টাকা বাকিতে দেওয়ার এক মাস সময় নেয় মাতব্বররা। কিন্তু জমি না দেওয়ার বিষয়টি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে তারা জানান।
এদিকে মেয়ের দাদা আব্দুল গফুর এবং প্রতিবেশীরা জানান, জরিমানার টাকা ও শালিসের রায় তারা মানতে রাজি হননি। কিন্তু গত কয়েক দিন যাবৎ ধর্ষনের ঘটনা মিমাংসা করার জন্য স্থানীয় একটি মহল তাদেরকে হুমকি ও চাপ প্রয়োগ করছে। এমনকি থানায় যেতে চাইলে প্রভাবশালী মহলের রোষানলের স্বীকার হয়েছেন তারা। এখন রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েছেন পরিবারটি। সরেজমিনে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী ওই কন্যা এবং তার পারিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আব্দুল মজিদ এবং ভুক্তভোগী পরিবারের ওই কন্যার বাড়ি একই বাড়িতে। ভুক্তভোগী মেয়েটির সম্পর্কে প্রতিবেশী নানা হয়। এর সুবাদে প্রায়ই আব্দুল মজিদ ওই বাড়িতে যাতায়াত করত।
ভুক্তভোগী কন্যা জানান, পাত্র দেখানোর কথা বলে টাঙ্গাইল নিয়ে যায়। সেখান থেকে মধুপুর নিয়ে ঘুরিয়ে এসে বাড়ির দিকে ফিরে এসে একই গ্রামে মজিদের শ্যালকের বাড়িতে এনে বাথরুমে আটকে রাখে। পরে সেখানে আমার বোরকা ছিড়ে ফেলে আমার সাথে খারাপ কাজ করে। ঘটনার ৩/৪ দিন পরে মেয়ের চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী তানিয়ার কাছে ধর্ষণের ঘটনা জানাই আমি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক এক জনপ্রতিনিধি জানান, ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে লেবু মাতব্বরের ইশারায় স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় শালিস হয়েছে। সেখানে অভিযুক্ত আব্দুল মজিদ মৌখিক স্বীকারোক্তিতে তার দোষ স্বীকার করেছে। পরে শালিসপক্ষ অভিযুক্তকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা এবং ৬০ শতাংশ জমি ধার্য করে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা সেই টাকা এবং জমি কিছুই পায়নি।
পারখি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। ধর্ষণের ঘটনা সংক্রান্ত বিষয়ে তার গ্রামের লোক মুখে শুনছি। এ বিষয়ে কোন পক্ষ আমার কাছে আসেনি।
এ ব্যাপারে কালিহাতী থানার (এসআই) ইমাম হোসেন জানান, ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে আসামি আব্দুল মজিদকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল ফারুক বলেন, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে আসামিকে আটক করে আদালত পাঠানো হইছে। ধর্ষিতা মেয়েকে মেডিকেল পরীক্ষা করানোর জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।