নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে গোড়াই হাইওয়ে থানা এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। পুলিশশূন্যতায় সহসা চালু হচ্ছে না থানার কার্যক্রম।
এক দফা আন্দোলনের নামে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা গত রবিবার (৪ আগস্ট) থানায় আগুন দিয়ে সব জিনিসপত্র ও মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা বলে পুলিশ ধারণা করছে।
অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া গোড়াই হাইওয়ে থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানান, গত ৪ আগস্ট অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসিসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত। ওসির কক্ষ, পুলিশ ব্যারাক, নারী পুলিশ ব্যারাক, অফিস কক্ষসহ একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত প্রতিটি কক্ষ গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ সময় পুলিশ সদস্যরা আত্মরক্ষার জন্য সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার সেল, কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। হামলাকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল, পাল্টা গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। থানায় আগুন দিয়ে পুলিশের ৪টি গাড়িসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় জব্দ করা অন্ততপক্ষে ৩০ থেকে ৪০টি যানবাহন পুড়িয়ে দেয়। টাঙ্গাইল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে হাইওয়ে থানার পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ওসি আদিল মাহমুদ, এসআই আনিছুজ্জামান, এএসআই জাহাঙ্গীরসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছে। তারা এখন পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সালাউদ্দিন মিয়া ও উপপরিদর্শক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, গোড়াই হাইওয়ে থানায় অগ্নিসংযোগের পর দুর্বৃত্তরা মির্জাপুর থানায় হামলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এলাকাবাসীর সহযোগীতায় হামলা করতে পারেনি তারা। জীবনের নিরাপত্তাসহ ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে তারা কর্মবিরতি পালন করে যাচ্ছেন। থানার সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এদিকে নবাগত পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. মইনুল ইসলাম রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের থানায় যোগদানের নির্দেশনা দিয়েছেন। আইজিপির নির্দেশের পরও নিরাপত্তা না থাকায় তারা থানায় কার্যক্রম চালাতে পারছেন না বলে মির্জাপুর থানা পুলিশ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি মো. আদিল মাহমুদ বলেন, হামলাকারীরা পুরো থানা পুড়িয়ে দিয়ে লুটপাট করেছে। পুড়িয়ে ফেলেছে পুলিশের চারটি পিকআপ ভ্যান, ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন মামলায় জব্দকরা গাড়িসহ ৩০ থেকে ৪০ যানবাহন। মামলার সমস্ত আলামত পুড়িয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকার অধিক হবে। থানায় থাকার মতো কোনও পরিবেশ নেই। ২৯ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে তিনি টাঙ্গাইল পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও পুলিশ লাইনে অবস্থান করছেন। পুনসংস্কার না করা পর্যন্ত গোড়াই হাইওয়ে থানায় কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. আব্দুস সবুর বলেন, থানায় নিরাপত্তা না থাকায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কার্যক্রম বন্ধ রেখে ১১ দফা দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন। নবাগত আইজিপি মহোদয় যোগানের পর দাবি পূরণসহ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন।