চারদিকে থৈ থৈ বিশাল জলরাশি, মাঝখানে শতবর্ষী হিজল গাছ। দৃষ্টির সীমানায় নেমে এসেছে নীল আকাশ, নীল জলরাশির উপর ভাসছে ছোটবড় অসংখ্য নৌকা। দর্শনার্থীদের ভিড়ে এ যেন প্রকৃতির এক প্রাণবন্ত মিলনমেলা। টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার পৌর এলাকার চাপড়াবিলের এমন নৈসর্গিক দৃশ্য দেখলে যে কেউ এটাকে টাঙ্গুয়ার হাওর বলে ভুল করে বসবে। টাঙ্গাইল শহর থেকে বাসাইল বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। এখান থেকে বাসাইল-নলুয়া রোডে ৪/৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে এগিয়ে গেলে দেখা মেলে বাসুলিয়ার। পাকা সড়কের দু’পাশে বাধাই করা ঘাটলা। রয়েছে ছোটবড় সেতু, বসার জন্য সড়কের ধারে পাকা বেঞ্চ, কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি করা যাত্রী ছাউনি। এ ছাড়া মঞ্চ বাসুলিয়ার আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। উপজেলায় চিত্তবিনোদনের জন্য তেমন কোনো আকর্ষণীয় জায়গা না থাকায় বাসুলিয়া বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে জায়গাটিতে থাকে পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোর দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। দর্র্শনার্থীদের ক্লান্তি আর ক্ষুধা মেটাতে এখানে গড়ে উঠেছে মিনি রেস্টুরেন্টসহ ফাস্টফুডের দোকান। জলে ও স্থলে উভয় জায়গায়ই রয়েছে ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ির ভ্রাম্যমাণ দোকান। শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য গড়ে উঠেছে মিনি পার্ক।
জানা যায়, বাসুলিয়ার হিজল গাছকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ডিঙ্গি নৌকার মাঝিদের চলে রমরমা ব্যবসা। অন্ধ বিশ্বাসে যুবক-যুবতীদের প্রিয়জনকে পেতে হিজল গাছের পাতা চিবিয়ে খেতে দেখা গেছে। এই হিজল গাছ নিয়েও রয়েছে কাহিনী। গুনিন জাদুকর নামক এক লোকের জাদুতে গাছটি সুদূর আসামের কামরূপ থেকে প্রেমিক যুগল অনীল ও বীণাকে গাছের উপর বসিয়ে রাতের আঁধারে উড়ে আসে এখানে। সকালে জমির মালিক হিজল গাছটি কাটতে করাত চালালে দেখা যায় গাছ থেকে রক্ত ঝরছে। কিছুক্ষণপর জমির মালিক রক্তবমি করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। বর্ষার টইটুম্বর জলে ভেসে ওঠে নীল আকাশের মুখচ্ছবি। সড়কের ধারে সারিবাধা শতাধিক ডিঙ্গি নৌকা, ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো পুরো বিকাল দর্শনার্থীদের নিয়ে ভেসে বেড়ায় কয়েক কিলোমিটার জুড়ে। গোধুলী লগ্নে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্যের ছবি ও ভিডিওচিত্র দর্শনার্থীদের ক্যামেরায় জায়গা করে নেয়।