নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আইনে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ। ১০ চাকার ভারী ড্রামট্রাক গ্রামীণ সড়ক দিয়ে চলাচল নিষিদ্ধ। অথচ পাহাড়ি লালমাটি ভরে অবাধে চলছে এই ট্রাক। ভেঙে যাচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। দুর্ভোগে পড়ছেন এলাকাবাসী। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার নিত্যদিনের চিত্র এটি।
ঘাটাইলে নির্বিচারে টিলা কাটা হচ্ছে। এসব টিলার মাটি বহন করা হচ্ছে দশ চাকার বড় ড্রামট্রাকে। গ্রামীণ সড়কে এ ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তবু ঘুরছে এই ট্রাকের চাকা, ভাঙছে গ্রামীণ সড়ক।
লক্ষিন্দর ইউনিয়নের কাজলা গ্রামের লালগিড়িরঘাট এলাকায় ইট দিয়ে নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় তিন মাস আগে। পাতিচালা এলাকায় টিলা কাটা হয় কয়েক দিন আগে। টিলার মাটি বহন করা দশ চাকার ট্রাক ওই সোলিং সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এতে বেহাল হয়ে পড়েছে সড়কটি।
স্থানীয়দের ভাষ্য, সড়কটি দিয়ে ভ্যানগাড়ি দূরে থাক, দুই চাকার সাইকেল নিয়েও এখন চলা দায়। সরেজমিনও মেলে সত্যতা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি। অনুরোধের সুরে মাটি ব্যবসায়ীকে সড়কটি সংস্কার করে দিতে বলেন স্থানীয়রা। কিন্তু তাদের অনুরোধ রাখেননি মাটি ব্যবসায়ী খলিল মিয়া ও সিরাজ মিয়া।
পাহাড়ি লালমাটি কেটে রাস্তার কাজ করা হয়েছে। এটি ছিল স্থানীয় সংসদ সদস্যের বরাদ্দের কাজ।
তবে মাটি বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। তাদের ভাষ্য, এলাকাবাসি রাস্তা ঠিক করে দিতে বলেছিল, বিষয়টি পিআইও অফিসকে জানানো হয়েছে।
ইউপি সদস্য আল আমিন জানান, সোলিং সড়কটি শুধু ভেঙেই যায়নি, দেবেও গেছে। বৃষ্টি এবং বর্ষা মৌসুমে এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। এর জন্য মাটি ব্যবসায়ীকে দায়ী করেন তিনি।
ধলাপাড়া ইউনিয়নের আষারিয়াচালা এলাকায় টিলা কাটা হচ্ছে। আর টিলার মাটি আনতে ব্যবহার করা হচ্ছে আষারিয়াচালা সড়ক। এই সড়কও ইটের সোলিং।
আষারিয়াচালা বাসস্ট্যান্ড থেকে দক্ষিণ আষারিয়াচালা জসিমের বাড়ি পর্যন্ত সড়কটি দুই কিলোমিটার। প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। মাটিভর্তি দশ চাকার ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সড়কের মাঝের দুটি বক্স কালভার্টও ভেঙে গেছে।
ইট বিছানো এই সড়কের নাম কাগজে-কলমে হেয়ারিং বন বন্ড সংক্ষেপে বলে এইচবিবি। এ সড়কের কাজ হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
আষারিয়াচালা গ্রামের হাবিবুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ‘প্রশাসন নয়, আমরা আসমান পানে চেয়ে আছি কখন বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি, অল্প সময়ের জন্য হলেও আমাদের স্বস্তি দেয়। বন্ধ থাকে মাটি কাটা।’
ধলাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের ভাষ্য, মাটি বহন করা বড় ট্রাক চলাচলের কারণে ভেঙে গেছে গ্রামীণ সড়ক। এর একটা বিহিত করা উচিত।
গ্রামীণ সড়কে মাটিবাহী ভারী ট্রাক চলাচলে শুধু রাস্তাঘাটই ভাঙছে না, ঘটছে দুর্ঘটনাও। গত শনিবার সকালে মাটিভর্তি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে উপজেলার সালেংকা মোড়ে টিটু খান নামে এক অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামীণ পুরো সড়ক মাটিবাহী ভারী ট্রাকের দখলে থাকে। ছোট যানবাহনগুলোকে সাইড দিতে গিয়ে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা।
মাটিবাহী ভারী ট্রাক চলাচলে এলজিইডির সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি ঘাটাইল উপজেলা প্রকৌশলী হেদায়েত উল্লাহর।
তিনি বলেন, গ্রামীণ সড়কের ওজন ধারণক্ষমতা দশ টন। আর দশ চাকার একটি খালি ট্রাকের ওজন প্রায় দশ টন। যখন এই ট্রাকগুলো মাটি বহন করে তখন এর ওজন হয় ২৫ থেকে ৩০ টন।
ইট বিছানো ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হকের ভাষ্য, গ্রামীণ সড়ক দিয়ে যদি এভাবে ভারী যান চলাচল করে তবে রাস্তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। গ্রামীণ এলাকা উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করি। এভাবে সড়ক ভেঙে ফেলা হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে না। বিষয়টি অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরতিজা হাসান বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে অনেক স্থানে পাহাড় কাটা বন্ধ করা হয়েছে। অভিযানের আওতায় দশ চাকার ড্রাম ট্রাকও রয়েছে। গ্রামীণ সড়ক রক্ষায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যানদের। এ ধরনের কাজ বন্ধে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।