নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে দিন দিন অটোরিকশার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে যেমন রয়েছে সুফল, তেমনি রয়েছে এর কুফলও। সার্বিক বিবেচনায় চালকরা খুঁজছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব ছোট যান। আর হাতের কাছে সহজে পাওয়া অটোরিকশায় সাধারণ খুশি যাত্রীরাও।
এতে করে পৌরসভাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অদক্ষ চালক ও প্রচুর গাড়ির কারণে ভোগান্তিতেও পড়ছেন সাধারণ পথচারী মানুষরা। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরেজমিন দেখা যায়, ঘাটাইল পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ে রাস্তাগুলোতে পায়ে চালানো রিকশা তেমন চোখেই পড়ে না।
ব্যাটারি চালিত অটো রিকসা চালকদের সাথে এ নিয়ে কথা হলে তাদের ভাষ্য, যাত্রীরা এখন পায়ে চালিত রিকশায় চড়তে রাজি হয় না। টাকা ও সময় বাঁচাতে অটোরিকশাই তাদের পছন্দ। তাছাড়া প্যাডেল রিকশায় উঁচু নিচু ঢালে গাড়ি অনেককে টেনে তুলতে না পারলে যাত্রীরা হেঁটে, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে গাড়িতে ধাক্কাও দিতে হয়।
একটি অটোরিকশায় দিনে আয় কমপক্ষে ৫০০ থেকে হাজার টাকা। পায়ে চালানো রিকশায় আয় হয় সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। পরিশ্রমও অনেক বেশি। আর দেশে তৈরি হওয়ায় অটোরিকশা সহজেই কিনতে পাওয়া যায় বলে অনেকেই অটোরিকশা কিনে ভাড়া চালাচ্ছেন। এতে সংসারের আয়রোজগারও ভালো হচ্ছে। আর এতে করে অনেকাংশেই কমছে বেকারত্বও।
এদিকে এই বাহনটির কুফল হচ্ছে, কম ওজনের এসব গাড়িতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি। একটু বেশি বাতাস হলে ও উঁচু নিচু স্থানে সহজেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক। এতে যান উল্টে যাওয়ার ভয় থাকে। আর বেশির ভাগ সময় গাড়ি চালাচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়সের, শারীরিক দুর্বল ব্যক্তিরা। এমনকি শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও এ গাড়ি চালিয়ে রোজগার করছেন। যাত্রীরাও অর্থ ও সময় বাঁচাতে এসব গাড়িতেই যাতায়াত করছেন বেশি।
উপজেলার পৌর শহরে কলেজ মোড়ে সম্প্রতি ১২-১৩ বছরের একটি ছেলেকে দেখা যায় অটোরিকশা চালাতে। পরিচয় জেনে তার ছবি তুলতে গেলে মায়াবী চাহনিতে ছবি না তোলার অনুরোধ জানায়। প্রথমে নাম পরিচয় পর্যন্ত বলতে চায়নি।
তার ভাষ্য, ছবি ফেসবুকে দিলে পুলিশ তাকে গাড়ি চালাইতে দেবে না। এমন হলে সংসারও চলবে না।
লেখাপড়া ছেড়ে কেন গাড়ি চালাচ্ছ, এমন প্রশ্নের উত্তরে কিশোর ছেলেটি বলে, বাবা নেই অভাবের সংসার। বাধ্য হয়ে ছোট ভাইবোন আর মায়ের খাবার জোগাতে এই কাজ করছি। পড়াশোনার ইচ্ছে থাকলেও করার কিছুই নেই।
পৌরসভা, সাগরদিঘী, হামিদপুর, পাকুটিয়া, ঝড়কাসহ উপজেলার অসংখ্য চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব গাড়িতে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত টানা ৮-১০ ঘণ্টা চার্জ দিলে ৭০ কিলো থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চালানো যায় এসব গাড়ি।
তারা জানায়, একটি ব্যাটারি সর্বোচ্চ তিন মাস থেকে ছয় মাস সার্ভিস দেয়। পরে ব্যাটারি পরিবর্তন করে নতুন নিতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেকার কিংবা বিদেশ ফেরত যুবকেরা এসব গাড়ি কিনে নিজেরা চালায়। এমনকি বেশি লাভের আশায় ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েও অনেকে এসব গাড়ি কিনে চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী শিশুদের কখনো বাধ্য করা যাবে না অটোচালাতে। কিন্তু তারা যে স্বেচ্ছায় পারিবারিক সমস্যায় পড়ে সংসারে আয়রোজগারের জন্য কাজ করছে। বিষয়টি উভয় দিক দিয়েই অমানবিক। তারপরও শিশু শ্রম আইনে এটাও অপরাধ। এতে কিশোরটি নিজেও যেমন ঝুঁকিতে থাকে, যাত্রীরাও ঝুঁকিতে পড়ে। তা ছাড়া ফিটনেসবিহীন চালকের অটোরিকশাও আইনসিদ্ধ নয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের শারীরিক পরিশ্রমের কাজ আইনের সম্পন্ন পরিপন্থী। তা ছাড়া শক্ত হাতে দীর্ঘস্থায়ী হাতল চেপে ধরায় মেরুদণ্ড, বাহু ও পাজরের সমস্যার সম্ভাবনা থেকে যায়। এ ধরনের সমস্যা চিকিৎসায় সহজে সেরে উঠে না। তা ছাড়া এসব চিকিৎসাও দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যয় বহুল।