মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

ঘাটাইলে কালের সাক্ষী “হুতার বাড়ি”

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৮ মে, ২০২৪
  • ২৯৪ বার পড়া হয়েছে

মধুপুর ডেস্কঃ টাঙ্গাইলে ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের মনিদহ গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে গাঙ্গের পাড় ঘেঁষে কালের সাক্ষী হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে যে বাড়িটি – সেটি এলাকার সবার কাছে “হুতার বাড়ি” নামে  পরিচিত।

‘হুতার’কে অঞ্চলভেদে-সুতার, ছুতোর বা ছুতার নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। ছুতাররা কাঠমিস্ত্রি নামেও পরিচিত, অর্থাৎ এরা কাঠের কাজ করে।

ছুতার বা কাঠমিস্ত্রি শব্দের ইংরেজি-Carpenter. সংস্কৃত সূত্রধর শব্দ থেকে ছুতার শব্দটির উৎপত্তি। বর্ণাশ্রয়ী হিন্দু সমাজ ব্যবস্থায় যে জনগোষ্ঠী কাঠের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো, তাঁদের সূত্রধর বা ছুতার বলা হতো।

একটি হিন্দু জাতি বিশেষের পদবি হিসেবেও সূত্রধর শব্দটি ব্যবহার করা হয়। সূত্রধর শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো সুতো-ধারক। সংস্কৃতিতে সূত্র মানে থ্রেড (যা করাতের পথ চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়) এবং ধার মানে ধরে রাখা।

সূত্রধরগুলিও বিভিন্ন গোষ্ঠী বা গোত্রে বিভক্ত।

প্রচলিত সূত্রধর নামের মধ্যে দত্ত, চন্দ, দে, পাল, শিল, কুন্ডু, মেনা, মান্না, মহারানা, রানা, বান্দ্রা, রাখসিত, সূত্রধার, ফৌজদার, দাস, কর এবং শর্মা অন্তর্ভুক্ত।

সূত্রধর বা ছুতাররা হলেন-ভারতীয় উপমহাদেশের বিশ্বকর্মা সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি হিন্দু সম্প্রদায়। হিন্দু সূত্রধরদের অধিকাংশই বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। বিশ্বকর্মাকে তাঁদের কুলদেবতা হিসেবে গণ্য করা হয়।

অত্র এলাকায় মনিদহের কাঠমিস্ত্রিদের চাহিদা ছিল একটু বেশী। কারণ তাঁরা কাঠের সব ধরনের কাজেই ছিলেন পারদর্শী। বিশেষ করে ঘরের আসবাবপত্র (খাট, চেয়ার-টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, আলমারি, আলনা, শোকেস, সোফা সেট ইত্যাদি) তৈরীতে সাধন দা  ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

ঘরের টুকিটাকি জিনিসপত্র (দরজা, জানালা, চৌকি, জলচৌকি, টুল, পিঁড়ি, চেরাগের গাছা, খরম, পয়টা ইত্যাদি) বানাতে নরেশ দা ছিলেন সিদ্ধহস্ত।

মনিদহ গ্রামের গোপালদা ছিলেন নৌকা বানানোর একজন অভিজ্ঞ মিস্ত্রি । তিনি সুনিপূণ হাতে বিভিন্ন ধরনের নৌকা (পাতাম নৌকা, বাট্টি নৌকা, বোট, কোষা ইত্যাদি) বানাতেন।

এই গ্রামেরই ভাসা দা এবং আনন্দ দা উভয়েই কাঠমিস্ত্রির কাজে বেশ পটু ছিলেন।

সাধুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন স্কুল ভবনটি ১৯৭৬ সালে ভাসা দা’র নির্দেশনা মোতাবেক মনিদহের সুতারেরা নির্মাণ করেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

মনিদহ ছাড়াও দিঘলকান্দি ইউনিয়নে আরও কিছু এলাকায় (দত্তগ্রাম,কোলাহা,বিয়ারা পারশী,মুজাহাটি, তেরবাড়ীয়া কাইজালীপুর প্রভৃতি) গ্রামে সুতারদের বসবাস রয়েছে।

দত্তগ্রামের (হাট বাড়ির) কানাই-বলাই দুই ভাই, কোলাহার কালিদাস দা এবং তাঁর দুই ছেলে (ভক্ত ও কৃষ্ণ) মোটামুটি ভালো কাজ করতেন।

তবে অত্র এলাকায় বাইচের নৌকা বানানোর সবচেয়ে বড় মিস্ত্রি ছিলেন বিয়ারার ডিগা দা। আশির দশকে বিয়ারা গ্রামবাসীদের জন্য বিশাল আকৃতির বাইচের নৌকাটি  তিনিই বানিয়ে দিয়েছিলেন।

পারশীর খিতীশ দা লাংগল এবং নৌকার বড় কারিগর ছিলেন। তিনি যদি কোন কাজ শুরু করতেন, সেই কাজ শেষ না করা পর্যন্ত নাওয়া- খাওয়া ভুলে যেতেন।

টিনের ঘর তৈরীতে মুজাহাটির সুতারদের সুনাম ছিল উপজেলার সর্বত্র।

কাইজালীপুরের ভাষন, জুরান’রা তিন ভাই – তাঁদের কাজের মানও ছিলো উল্লেখযোগ্য।

পারশীর বিমল-কমল ভ্রাতৃদ্বয় আধুনিক ফার্নিচার তৈরীর অনন্য কারিগর। গর্বের বিষয় – জাতীয় যাদুঘর এর কাঠের মেইন দরজা তৈরীর অন্যতম কারিগর এই বিমল।

আগেকার দিনে শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরাই সুতার এর কাজ করতো। কিন্তু উক্ত পেশাটি তুলনামূলকভাবে লাভজনক বিবেচিত হওয়ায় এবং লোকসানের ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত কম থাকায়, ইদানিং মুসলমানদের অনেকেই এই পেশায় ঝুঁকছে।

তাছাড়া যান্ত্রিকতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগায়, এ পেশার প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমাগত।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

The Trend (Online Shop)

©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights