নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কক্সবাজারের চকরিয়ায় অভিযানের সময় ‘ডাকাতের ছুরিকাঘাতে’ নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের (২৩) পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে সেনাবাহিনীর সাবেক একটি প্রতিনিধি দল।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল নিহত লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকা এলাকায় অবস্থিত বাড়িতে আসেন। এ সময় প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ হতে লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের বাবা, মা ও বোনসহ পরিবারের সকল সদস্যদেরকে সান্তনা প্রদান করেন। পরে তারা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করেন।
প্রতিনিধি দলের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহি আকবর সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, তানজিম হত্যায় সেনাবাহিনী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর নারী নক্ষত্র বের করার জন্য। আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। এসবের দ্রুত বিচার ও ক্রিমিনালদের ধরার মাধ্যমেই হবে। ভবিষ্যতে যারা এ রকম চিন্তাভাবনা করবে তাদের প্রতিহিত করতে পারবো। এই পরিস্থিতি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের দেশে এখনো অনেক অরাজকতা বিস্তার করছে। বিগত ১৫ বছরের দুঃশাসনের ফল হচ্ছে আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি। ডাকাত কিংবা সন্ত্রাসী আকারে দেশকে যারা অস্থিতিশীল করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ পার্টি পলিটিক্স সবকিছু পেছনে রেখে একত্রভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘে ড. ইউনুস কয়েকটা দিনের জন্য গেছেন। সেখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা তার সাথে দেখা করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এটা আমাদের গর্বের বিষয়। আমাদের অন্তবর্তীকালীন যে সরকার দ্বিতীয় বিপ্লব, দ্বিতীয় স্বাধীনতা করেছে এটা কোনমতেই ফেল করা যাবে না। এখানে আমাদের সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। চিরতরে বাংলাদেশে যাতে কোন সময়ে ফ্যাসিবাদি সরকার না হতে পারে আমাদের সেই চেষ্টা করতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যদি সেনাবাহিনীকে আমরা ডি পলিটাইজ করতে পারি এবং আমরা ইলেকশন কমিশন স্বাধীন এবং ট্রান্সপারেন্ট করতে পারি। তাহলে এই দেশে কোন সময় ফ্যাসিস সরকার জন্ম নিবে না। এই দুইটা ইনস্টিটিউশন ঠিক করতে পারলেই বাংলাদেশ ঠিক থাকবে এবং ক্রমাগত অগ্রসর হবো। আমরা যদি একত্র হতে পারি এই দেশকে আকাশচুম্বী করতে পারব।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহি আকবর আরও বলেন, জনগণ সবাই একত্রিত হন, এই সময় দেশকে গড়ে তুলুন এটি আমার বার্তা। ডাকাত ও সন্ত্রাসী যাই বলেন, যে একজন মানুষকে মারতে পারে সেনাবাহিনীর গায়ে হাত দেয়, তাহলে বোঝেন সে কত ডেঞ্জারাস সন্ত্রাসী। এরা আমাদের সমাজে লুকিয়ে আছে রন্দ্রে রন্দ্রে। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমার ঘরের পিছনে যে একজন সন্ত্রাসী এটা হয়তো আমরা জানি না। আমাদের সজাগ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। অটোমেটিক যারা এ পথে গেছে তারা বিপথগামী থেকে ফিরে আসবে। তারাও আমাদের সন্তান, এখন বিপথগামী হয়েছে। আমরাও চাই তারা আমাদের দেশের উন্নতিতে এগিয়ে আসুক। আমাদের সাথে কাজ করুক। আমরা সবাই তো একে অন্যের ভাই-বোন। হানাহানি করে কোন লাভ হবে না, দেশে উন্নতি হবে না। আগামী সরকার যদি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সরকার আসে। যদি সেই সুযোগ আসে নিশ্চয় বাংলাদেশকে একটা উন্নত দেশে পরিণত করতে পারব।
তিনি বলেন, তানজিম নামটা আমার মনে হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং সেনাবাহিনীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কেননা সে মারা গেছে ইউনিফর্ম পড়ে, অপারেশন করতে মারা গেছেন। এটা একটা খুবই দুর্ঘটনার বিষয় এবং ফুল ফুটতে না ফুটতেই শেষ হয়ে গেছে। এটা কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না।
সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের অন্যান্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্ণেল শামসুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্ণেল সিদ্দিক, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রশিদ, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্ণেল সাঈদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিদ্দিক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসিনুজ্জামিল শাহীন, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালসহ জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতি প্রতিরোধ অভিযানে নিহত হন সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন।