খুলনার উপকূলীয় এলাকায় আগামী ২৪ ও ২৫ অক্টোবর সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু গত ২৬ ও ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমালে’ ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এখনও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে জোয়ারের পানির চাপে ওই বাঁধ আরও দুর্বল হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আঘাত হানার আগে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না ওই বাঁধ। এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির চাপ ও বাতাসে অনেক স্থানে বেড়িবাঁধের নদীর দিকের অংশ ক্ষয়ে প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। কোথাও কোথাও ওপরের মাটি ধুয়ে বাঁধ নিচু হয়ে যায়। এরপর গত পাঁচ মাসেও তা সংস্কার না করায় বাঁধের অবস্থা আরও জরাজীর্ণ হয়েছে।
স্থানীয়য় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, কয়রা উপজেলার দশহালিয়া, শিকারিবাড়ি, হোগলা, কালিবাড়ি, গুরিয়াবাড়ি, ৪, ৫ ও ৬ নং কয়রা, মঠবাড়ি এবং কাটমারচর এলাকার প্রায় ৭ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দাকোপ উপজেলার কাকড়াবুনিয়া, বানিশান্তা, নিশানখালি, আন্ধারমানিক, আড়াখালী, কালিবাড়ী, খলিশা, মৌখালি, রায়বাড়ি, তাঁতখালি ও তিলডাঙ্গা এলাকায় ৪ দশমিক ২৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলার জামাইপাড়া, বাসাখালি, হারিখালি, বাইনতলা খেয়াঘাট, পশ্চিম কানাইমুখী, ননিয়াপাড়া, পাইশমারী, কুড়–লিয়া, সেলেমানপুর, পুরাইকাটি এলাকার ৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোভুঁইয়া, কড়িয়া, কড়িয়া জব্বারখালি, ঠাকুরানবাড়ি, বুজবুনিয়া, দ্বীপ বরণপাড়া, কল্যাণশ্রীপুর, বটিয়াঘাটা বাজার এলাকার ৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অবস্থা জরাজীর্ণ।
স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার দাকোপ উপজেলার লক্ষ্মীখোলা গ্রামে প্রায় ৪০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত জিও টিউব দিয়ে কোনোমতে তা মেরামত করেছে। তবে জায়গাটি এখনও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হয়নি।
কয়রা উপজেলার দশহালিয়া গ্রামের লোকমান শেখ ও জয়নাল শেখ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া প্রায় ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ এখনও শুরু হয়নি। প্রতি বছর ১/২ বার ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাস কিংবা উঁচু জোয়ারের পানির চাপে অন্য কোথাও বেড়িবাঁধ না ভাঙলে দশহালিয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে যায়। কিন্তু এখানকার বাঁধ মেরামত না হওয়ায় আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। তারা বলেন, রিমালে বেড়িবাঁধ ভেঙে আমাদের চিংড়ি ঘের, ফসলের জমি ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছিল। সেই ধকল আমরা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আবার ঝড় আসছে, এবার যে কী হয় বুঝতে পারছি না।
দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা গ্রামের দীপংকর মিস্ত্রি বলেন, রিমালের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ১ কিলোমিটার বাঁধের অবস্থা এখনও জরাজীর্ণ। রিমালের পরবর্তীতে গত মাসে টানা ভারী বৃষ্টিতে নদীতে জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ওই বাঁধ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরেকটা ঝড় আঘাত হানার সময় হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ মেরামত করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২ এর নির্বাহী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ইতোমধ্যে পুরোপুরি মেরামত সম্পন্ন হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি টাকা। কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটার প্রায় ২৩ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের জন্য সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এই ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামতের কার্যাদেশ দিতে মাস খানেক সময় লাগবে। এক মাস পর থেকে কাজ শুরু হবে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ডানার আগে ক্ষতিগ্রস্ত ওই বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হবে না। অবশ্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ২/১টি স্থানে কিছু মেরামত কাজ করা হচ্ছে।