মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

মানুষ ও প্রাণীর ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত অটোচালক লিটন মিয়া

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মানুষ ও প্রাণীর ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের কুশারিয়া গ্রামের বাসিন্দা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক লিটন মিয়া। লিটন মিয়ার অকৃত্রিম ভালোবাসায় সাড়া দিয়ে পোষ মেনেছে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী সজারু। সজারুটি দিনরাত লোকালয়ে ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ায়। দৌড়ে বেড়ায় বাড়ির এদিক-সেদিক। লিটন ‘পাগলা’ বলে ডাকলেই ছুটে আসে তার কাছে।

প্রায় ১১ মাস আগে রমজান মাসে ঘাটাইল-সাগরদদিঘী সড়কে কুড়িয়ে পেয়ে কুশারিয়ায় নিজের বাড়িতে আনার পর থেকে সজারু ছানাটিকে পরম যত্নে লালন-পালন করছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক লিটন। ভালোবাসা পেয়ে প্রাণীটি পোষ মেনে তার পরিবারের সদস্যের মতো বসবাস করছে।

লিটনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির এপার-ওপার দৌড়ে বেড়াচ্ছে সজারুটি। কেউ চলার পথে বাধা দিলে পুরো শরীরের কাঁটাগুলো মেলে ধরছে। আদরে গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে আনন্দ পাচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর ও বিকেলে গর্ত থেকে বের হয়ে বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়ায় সে। লিটন কুড়িয়ে পাওয়া বন্য সজারু ছানাটির নাম রেখেছেন ‘পাগলা’।

ওই গ্রামের মানিকসহ অনেকে জানান, বন্যপ্রাণী সজারু পোষ মানার বিষয়টি আশ্চর্যজনক। এই প্রাণীতো লোকালয়ে মানুষের কাছে পোষ মানার কথা নয়। এগুলো সাধারণত পাহাড়ে গর্তে লুকিয়ে থাকে। লিটনের পরিবারে প্রাণীটি পোষ মানার বিষয়টি তাদের মুগ্ধ করেছে।

অটোরিকশা চালক লিটন মিয়া বলেন, ‘পাগলা’ বলে ডাক দিলে সজারুটি খাবারের জন্য ছুটে আসে। পেছন পেছন যেতে বললে সে পোষা অন্য প্রাণীর মতোই চলতে থাকে। পোষ মানা সজারু ছানাটি সাধারণত কলা, আলু, ফুলকপি, বাধাকপি, পাউরুটি, ভাত, দুধ, বিস্কিট খেতে বেশি পছন্দ করে।

লিটন জানান, প্রায় ১১ মাস আগে রমজানের পঞ্চম রাতে ঘাটাইল-সাগরদিঘী সড়কের পাশে কুশারিয়া এলাকায় একটা কলার বাগানে ভেজা অবস্থায় পড়ে ছিল সজারুটি। সম্ভবত দুই-চারদিন বয়স ছিল। সজারুর ছানাটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলে পরিচর্যার মাধ্যমে অসুস্থ সজারু ছানাটিকে সুস্থ করে তোলেন। এরপর থেকে সজারু ছানাটি পরিবারের একজন সদস্য হয়ে তাদের সঙ্গে বসবাস করছে। ঘরের ভেতর খড় দিয়ে থাকা ও ঘুমানোর জায়গা তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সজারু ছানাটি সেখানে না ঘুমিয়ে ঘরের বাইরে একটা জায়গায় মাটির নিচে নিজেই সুড়ঙ্গ তৈরি করে সুন্দরভাবে বসবাস করছে।

লিটন আরও জানান, একেবারে অল্প বয়স থেকে সজারু ছানাটি তার সংস্পর্শে থাকার সুযোগে যেমন পোষ মেনেছে, তেমন সজারুটির প্রতিও তার মায়া জন্মেছে। প্রতিদিন দুপুরে সজারু ছানাটি গর্ত থেকে বের হয়ে তার হাতে খাবার খেয়ে গর্তে চলে যায়। আবার বিকেলে বের হয়ে ঘরে এবং আশপাশের দোকানে নির্দ্বিধায় ঘুড়ে বেড়ায়। গভীর রাত পর্যন্ত সজারু ছানাটি আশপাশে লোকালয়ে খেলাধুলা ও ছোটাছুটি করে খাবার খায়। সবার কাছে ছানাটি একটা আদরের পোষ্য প্রাণী।

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে সজারুর সংখ্যা এক সময় বেশ ছিল, তবে বর্তমানে অবস্থা বিপন্ন। সজারু বাদামি, ছাই কিংবা সাদা বা মিশ্র রঙের হয়ে থাকে। শরীরে ১৪ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত কাঁটা থাকে এবং ওজন ১০ থেকে ১৮ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সজারু একটি সংরক্ষিত প্রজাতি এবং এর শিকার বা হত্যা আইনত দণ্ডণীয় অপরাধ।

টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সজারু একদিকে হিংস্র ও অন্যদিকে ভীত একটি প্রাণী। মানুষ বা বনের অন্য প্রাণিদের ভীষণ ভয় পায়। অত্যন্ত ছোট অবস্থা থেকে আদর-যত্ন পাওয়ায় এটি পোষ মেনে থাকতে পারে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, সজারু একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। অটোরিকশা চালকের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে সজারুটিকে এনে বনে অবমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি। লিটন কোনোভাবেই এই প্রাণী লালন-পালন বা পোষা প্রাণীর মতো নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না বলেও জানান তিনি।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

The Trend (Online Shop)

©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights