নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বিচার ১১ বছরেও শেষ হয়নি।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে আহমদ সুমন মজিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে। বিচারের আশায় অপেক্ষা করতে করতে এই মামলার বাদী আমার মা গত ২৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন। মামলার আসামিরা প্রভাবশালী। তারা নানাভাবে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন। মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে গত সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা দিয়েছে। সে নির্দেশনা বাস্তবায়নেও উদ্যোগ নেই।
মামলায় শুধু তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেওয়া বাকি রয়েছে। সাক্ষ্য নেওয়ার তারিখ এলেই কারাগারে থাকা কোন আসামি ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন। তাই আদালতে আনা হয় না। আবার আসামি এলেও তদন্ত কর্মকর্তা আসেন না। এ কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিচার কাজ।
দীর্ঘ ১১ বছরেও বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। মামলাটি টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজ পাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
২০১৪ সালে এই মামলায় জড়িত থাকা সন্দেহে আনিছুল ইসলাম রাজা এবং মোহাম্মদ আলী নামের দুইজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আদালতে তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যা মামলার সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি ছানিয়াত খান বাপ্পা’র জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে।
তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এতে সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান’র চার ভাইসহ ১৪জনকে আসামি করা হয়।
এই মামলার আসামি আমানুর রহমান খান আত্মসর্মপণের পর তিন বছর কারাগারে ছিলেন। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার অপর ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান এখনও কারাগারে আছেন। অন্য দুই ভাই জাহিদুর, সানিয়াত পলাতক রয়েছেন।
এই মামলার রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌশুলি মনিরুল ইসলাম খান বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর মামলার তারিখ ছিল। সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। এর আগে অন্তত ৮টি ধার্য তারিখে অসুস্থ থাকায় আসামি হাজির করা হয়নি। এজন্য বিচার কাজ পিছিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, মামলার ২৬জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এখন তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেওয়া হলেই মামলাটির যুক্তিতর্ক শুরু হবে। তারপরেই রায় হবে। আগামী ২৫ জানুয়ারি সাক্ষ্য নেওয়ার তারিখ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ফারুক আহমেদের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকালে তার কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ, দুপুরে শহীদ মিনার চত্বরে গণভোজ এবং সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এছাড়া আগামী সপ্তাহে ফারুক আহমেদ ও নাহার আহমেদের স্মরণে সভার আয়োজন করা হবে।