নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়ি ইউনিয়নের পীরগাছা গ্রামের তিলের টাল(তেমাথা) এলাকায় শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি বারোয়ারী মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা ঘটেছে।
মধুপুর ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট স্থানীয়দের সহায়তায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। এ ঘটনায় মন্দির কমিটি ও বন বিভাগ একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে।
স্থানীয় ভরত বর্মণ, সুভাষ পাল, চেঙ্গু বর্মণ, উত্তম পাল, ঝুমুর নকরেক, সাদেকুর রহমান, মজিবর মিয়াসহ অনেকেই জানায়, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে বারোয়ারী মন্দিরে আগুন লাগার খবর পেয়ে তারা দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানান এবং নিজেরা স্ব উদ্যোগে পানি ও কলাগাছ ফেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। পরে সোয়া তিনটার দিকে মধুপুর
থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডে মন্দিরের ঘরসহ পূজার সরঞ্জামাদী পুড়ে গেছে।
মন্দির কমিটির সভাপতি দীপক চন্দ্র বর্মণ এবং সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য খোকন চন্দ্র বর্মণ জানান, বন বিভাগের গার্ড নুরুল হক ও সেলিম হোসেনের উপস্থিতিতে ডেলেবার(শ্রমিক) হুমায়ুন মন্দিরের পাশে ঝড়া পাতায় আগুন দেয়। এক পর্যায়ে সেই আগুন মন্দিরে পৌঁছে যায়। মন্দির পুড়তে দেখে স্থানীয়রা এগিয়ে গেলে হুমায়ুন ও ওই ফরেস্ট গার্ডরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।
মধুপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার হেমায়েল কবির জানান, আগুনের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে স্থানীয়দের চাপের মুখে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দীর্ঘ দুই ঘণ্টার চেষ্টায় তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তিনি জানান, তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া তদন্তের পর অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যাবে।
বন বিভাগের দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হামিদুল হক জানান, মন্দিরের জায়গা সম্প্রসারণের নামে স্থানীয় একটি চক্র বনভূমি জবর দখলের চেষ্টা করছিল। এ খবর পেয়ে তিনি ফরেস্ট গার্ডদের নিয়ে বাধা দিতে গেলে দখলকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের উপর চড়াও হয়। বাধ্য হয়ে তারা পেছন দিকে পালিয়ে হাগুড়াকুড়ি বাজারে গিয়ে আশ্রয় নেন। এরই মধ্যে চক্রটি বনের শুকনো পাতা ও মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি পরে পুলিশ ও ফায়ার সাভিসে খবর দেন। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এলে তারাও ঘটনাস্থলে আসেন এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করেন।
তিনি জানান, ওই চক্রটি মন্দির ও বনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় বন বিভাগের ২৫ একর এলাকার সব রকমের গাছ-গাছালি পুড়ে গেছে। এতে বন ও পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে তারা অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মধুপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফারহানা আফরোজ জেমি জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে এখনও পুলিশটিম ঘটনাস্থল থেকে ফিরেনি। তারা ফিরে এলে বিস্তারিত জানানো যাবে।
প্রকাশ, মধুপুরের পীরগাছা গ্রামের তিলের টাল(তেমাথা) এলাকায় বন বিভাগের জায়গায় ২০০২ সালে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা একটি মহাদেব মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। পরে স্থান সম্প্রসারণ করে সেখানে দুর্গা মন্দির ও কালী মন্দিরও প্রতিষ্ঠা করা হয়। কালী মন্দির প্রতিষ্ঠাকালে বিষয়টি বন বিভাগের নজরে আসে। বন বিভাগের দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা ওই স্থানে মন্দির প্রতিষ্ঠায় বাধা দেন।
স্থানীয়রা বন বিভাগের বাধা অমান্য করে মন্দির প্রতিষ্ঠা অব্যাহত রাখে। বন বিভাগ মন্দির প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্টদের নামে বন আইনে মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় মন্দির কমিটির সভাপতি দীপক চন্দ্র বর্মণ(৫২), স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র বর্মণ(৩৫), কমিটির সদস্য বিফল চন্দ্র বর্মণ(৪০) ও সত্যেন চন্দ্র বর্মণ(৩৮) এ চার ব্যক্তি ১৭দিন হাজতবাস করে জামিনে মুক্ত হন। এরপর থেকে মন্দির যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায়ই স্থানীয়রা পূজা-অর্চণা করছিলেন।