নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দুর্গন্ধ সাথে নিয়ে টাঙ্গাইল পৌর শহরে প্রবেশ করতে হয় মানুষের। শহরের অন্যতম প্রধান ২টি প্রবেশ পথ রাবনা বাইপাস ও কাগমারী শশ্মান ঘাট এলাকায় ময়লার ভাগাড় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে খোলাস্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় এলাকার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকিতে। দুর্গন্ধে স্থানীয় মানুষ ও পথচারীরা অতিষ্ট। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জোরালো দাবি থাকলেও এখনো করতে পারে নি পৌরসভা। তবে জেলা প্রশাসক দ্রুতই সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
টাঙ্গাইল পৌরসভাটি বিগত ১৮৮৭ সালের (১ জুলাই) প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৯ দশমিক ৪৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পৌরসভায় ২ লাখেরও বেশি লোকের বাস। মোট ভোটার ১ লাখ ৪০ হাজার ২৩১ জন। এ পৌরসভায় ১৩৭ বছরেও গড়ে উঠেনি আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান। নেই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাবনা বাইপাস রাস্তার পাশে ময়লার স্তুপ। শহরের ময়লাগুলো পৌরসভার ভ্যানে করে খোলাভাবে ঢেলে ফেলা হচ্ছে। জেলার উত্তরের ৬ উপজেলার মানুষ শহরে নিয়মিত যাতায়াত করেন। যানবাহনের চালক যাত্রীরা দুর্গন্ধ সহ্য করতে না পেরে নাকে কাপড় চেপে যাচ্ছেন। পথচারীরা এ এলাকায় এক মিনিটের জন্যও দাঁড়াচ্ছেন না। ময়লার মধ্যে পড়ে আছে গরু-শকুরের মরদেহ। এদিকে এর মধ্যেই টোকাইরা ময়লা থেকে তাদের কাঙিত জিনিস খুঁজছে। কাগমারী শম্মানঘাটের উত্তরপাশে ময়লা ফেলা হচ্ছে। টাঙ্গাইলের নাগরপুরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ কাগরামী সড়কে যাতায়াত করেন। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি এমএম আলী কলেজের শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীরা এ পথেই চলাচল করেন।
দুর্গন্ধে আশপাশের বসতি ও দোকানদারদের করুণ অবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের কি যে খারাপ লাগে সেটা বলে বোঝোতে পারবো না। ঘরে থাকা রান্না ও খাওয়া কিছুই তৃপ্তি সহকারে করতে পারি না। অনেকবার পৌরসভার কাউন্সিলকে বলেছি, কিন্তু কোন লাভ হয় নি। মাহিম নামের এক স্কুলছাত্র বলেন, এখান দিয়ে স্কুলে যাবার সময় দুর্গন্ধে পেট ফুলে যায়। বাতাসে দুর্গন্ধ বাড়িতে চলে আসে। এখানে ময়লা না ফেলার অনুরোধ করেছি। রাবনা বাইপাস এলাকার দোকানদার সরোয়ার হোসেন ময়লার জন্য দোকানে গ্রাহক আসতে চায় না। দোকানের খাবারের মধ্যে মাছি বসে। দোকানদারি করা খুব কষ্টের। তবুও পেটের দায়ে দুর্গন্ধের সাথে থাকতে হচ্ছে। আমজাদ খান নামের অটোরিকসা চালক বলেন, আমি এ সড়কেই গাড়ি চালাই। দুর্গন্ধে অবস্থা ভয়াবহ। যাত্রীরা উঠতে চায় না। এক যাত্রী বলেন, শহরে ঢোকার মূল রাস্তায় এমন ময়লার ভাগাড় সত্যি অশোভন। হিরা মিয়া বলেন, এ সড়কে চলাচলের সময় আমার শ্বাস কষ্ট হয়।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র বলেন, টাঙ্গাইল পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। রাবনা বাইপাস এলাকা এবং কাগমারী এলাকায় যেভাবে বর্জ্য ডাম্পিং করা হচ্ছে, তাতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শহরের প্রবেশ পথে বর্জ্য ফেলার কারণে জীববৈচিত্রসহ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এভাবে ডাম্পিং বন্ধ করে পৌরসভার নিজস্ব জায়গায় ডাম্পিং করার দাবি করছি। পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার্থে আইনি প্রয়োগও দরকার। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করে স্বাস্থ্য বান্ধব করতে পৌরসভাকেই মূল ভূমিকা নিতে হবে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এনভাইরনমেন্টাল সাইন্স এবং রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রফেসর ড. সাইফুল্লাহ বলেন, উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলার কারনে দুর্গন্ধ ও রোগ জীবানু ছড়ায়। ময়লার ভাগাড় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানকার মাটি হারাচ্ছে উর্বরতা। অন্যদিকে প্লাস্টিক বর্জ্য নালায় ঢুকে সৃষ্টি করছে জলাবদ্ধতা।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: সুজাউদ্দিন তালুকদার বলেন, খোলা ময়লা-আবর্জনা থেকে রোগ জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে মানুষ-পাখির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসে বিভিন্ন জটিল রোগ হতে পারে। বায়ু দূষনের কারনে এলার্জি এবং এজমার সমস্যা প্রকট হচ্ছে। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। বাতাসে ভারী ধাতু ছড়িয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করছে। ফলে লিভার-কিডনির রোগ, ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, খোলা জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারনে মানুষের অসুবিধাতো হয়ই। জায়গা সংকটে দীর্ঘ দিনেও শহরে হয়নি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। পৌরসভার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের নিকট জায়গা চাওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, শহরে একটি আধুনিক কসাইখানা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা খুবই প্রয়োজন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কমপক্ষে ১ একর জায়গা দরকার। জায়গাটি নির্ধারণে আমরা কাজ করছি। আশা করি দ্রুতই সমাধান হবে এবং শহরবাসী একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পাবে।