মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ অপরাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

টাঙ্গাইলের ১৬ সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা ওড়ে না!

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
  • ৯৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলে ১৬ টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে উড়ছে না জাতীয় পতাকা। সরকারি ভবনে ফ্লাগ স্ট্যান্ড থাকলেও টাঙানো হয় না জাতীয় পতাকা। অফিসের ভেতরে দৈনন্দিন সকল কাজকর্ম চলছে। দফতরের কর্তারা বিভিন্ন ফাইলপত্রে স্বাক্ষর করছেন- আলোচনা চলছে নানা বিষয়ে। অফিসের সব কাজ হয়, শুধু দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না।

এই চিত্র টাঙ্গাইল জেলার ১৬টি সরকারি অফিসের। গত এক মাসে একদল গণমাধ্যম কর্মীর পর্যবেক্ষণে বিষয়টি উঠে আসে। জেলার এসব অফিসে কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না। সুস্পষ্ট নির্দেশনার পরও জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করায় জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন নাগরিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা ১৯৭২ (সংশোধিত ২০২৩) এর ৬ ধারার উপ-ধারা (১) অনুযায়ী সরকারি ভবনসমূহে সকল কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা রয়েছে। একই বিধিমালার ৭ ধারায় পতাকার সম্মান বজায় রাখতে ২৬টি উপ-ধারার মাধ্যমে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই বিধিমালার ৮ ধারায় ৫টি উপ-ধারার মাধ্যমে সাধারণ নির্দেশাবলি দেওয়া হয়েছে।

সংশোধিত বিধিমালার ৬ এর উপ-ধারা (১) এ বলা হয়েছে-‘গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন এবং অফিসসমূহ, যেমন- রাষ্ট্রপতির বাসভবন, সংসদ ভবন প্রভৃতি, সকল মন্ত্রণালয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সচিবালয় ভবনসমূহ, হাইকোর্টের অফিসসমূহ, জেলা ও দায়রা জজ আদালত সমূহ, বিভাগীয় কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার/কালেক্টর, চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের অফিসসমূহ, কেন্দ্রীয় এবং জেলা কারাগার সমূহ, পুলিশ স্টেশন, শুল্ক পোস্টসমূহ, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এইরূপ অন্যান্য ভবন এবং সরকার কর্তৃক সময় সময় নির্ধারিত ভবনসমূহে সকল কর্মদিবসে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ উত্তোলন করা হইবে।’

সরেজমিনে দীর্ঘ এক মাসের পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল(সোমবার) থেকে ১৬ মে (বৃহস্পতিবার ) পর্যন্ত জেলা সদরের ১৬টি সরকারি কার্যালয়ে নির্দিষ্ট স্থান ও পতাকা উত্তোলনের ফ্লাগ স্ট্যান্ড থাকলেও কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হচ্ছে না। সরকারি অফিস ও ভবনগুলো হচ্ছে- টাঙ্গাইলের সড়ক ভবন (সওজ), গণপূর্ত বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ি), জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিশু একাডেমি, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, টাঙ্গাইল বিটিসিএল, আবহাওয়া অফিস, প্রাণী সম্পদ কার্যালয়, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়।

সকল কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার বিষয়ে টাঙ্গাইলের অধিকাংশ সরকারি অফিস প্রধানরা মনে করেন, শুধুমাত্র বিশেষ দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক। সব কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনে বাধ্যবাধকতা নেই। সব অফিসেই একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বা নিরাপত্তা প্রহরীকে পতাকা উত্তোলনের দায়িত্ব দেওয়া থাকে। ‘পতাকা উত্তোলনের বিধিমালা’য় স্পষ্ট করে সব কর্মদিবসে পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা নেই। বিধিমালায় ‘…সরকার কর্তৃক সময় সময় নির্ধারিত ভবন সমূহে সকল কর্মদিবসে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ উত্তোলন করা হইবে’ বলা হয়েছে। ওখানে ‘…সরকার কর্তৃক সময় সময়…’ বলা হয়েছে, নির্দেশনার বাইরে সকল কর্মদিবস বলা হয়নি- এটাকেই অনেকে কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চমান সহকারী (ইউডিএ) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। এ বিষয়ে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না। তারা সাধারণত বিশেষ দিবসগুলোতে যথানিয়মে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে থাকেন।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিষয়টি অতীব জরুরি-জাতীয় পতাকা না উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। তার অজান্তে এটা হয়েছে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্টদের জাতীয় পতাকা প্রতিদিন উত্তোলনের নির্দেশ দেন।

টাঙ্গাইল গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম তৌহিদুল ইসলামের অনুপস্থিতিতে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বাবু কুমার বিশ্বাস বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা নেন।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ (সড়ক ভবন) অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খান বলেন, তিনি টাঙ্গাইলে নতুন যোগদান করেছেন। দেশের জাতীয় পতাকা প্রতিটি মানুষের গর্ব ও অহংকার। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ডেকে বিষয়টি জানতে চান এবং নিয়মিত জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ দেন।

জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, তারা ভাড়া ভবনে অফিস পরিচালনা করছেন। তারপরও তারা বিশেষ দিবসে নিয়মিত যথানিয়মে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। প্রতি কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি অবগত নন। বিধিমালা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। একই ভবনে অবস্থিত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিচালক মহর আলী মোল্লা অনুপস্থিত থাকায় তার কার্যালয়ের কেউ কোনো বক্তব্য করতে রাজি হননি।

টাঙ্গাইল জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবদুল লতিফ মোল্লা বলেন, তিনি টাঙ্গাইলে নতুন যোগদান করেছেন। তাছাড়া ভাড়া ভবনে অফিস থাকায় তারা বিশেষ দিবস ছাড়া পতাকা উত্তোলন করতে পারেন না। বিশেষ দিবসে বিশেষ ব্যবস্থায় তারা জাতীয় পতাকা যথাযথ মর্যাদায় উত্তোলন করে থাকেন।

তিনি জানান, পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের স্থায়ী ভবনের জন্য প্রাক্কলন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া আছে। নিজস্ব ভবন নির্মাণ হলে তারা নিয়মিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন।

টাঙ্গাইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ তানভীর হোসেন বলেন, বিষয়টি তার নজরে ছিল না। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ দিলে একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তড়িঘড়ি পতাকা উত্তোলন করেন।

টাঙ্গাইল জেলা রেজিস্ট্রার মো. মাহফুজুর রহমান খান বলেন, তার পদোন্নতি হয়েছে-দ্রুতই তিনি হেড অফিসে যোগদান করবেন। জেলা সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়টি জরাজীর্ণ থাকায় তিনি কিছুটা উন্নয়ন করতে গিয়ে দেখতে পান পতাকা উত্তোলনের স্থান নেই। বাধ্য হয়ে কার্যালয়ের সামনে সড়ক ঘেঁষে স্ট্যান্ড স্থাপনের জায়গা তৈরি করেছেন। জনসমাগমের ভিড়ে সেখানে নিয়মিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা সম্ভব হয় না। তারপরও বিশেষ দিবসে বিশেষ ব্যবস্থায় জাতীয় পতাকা যথাযোগ্য মর্যাদায় উত্তোলন করা হয়।

তিনি দাবি করেন, জমিদারি আমলের জরাজীর্ণ কার্যালয়টি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে জনগণের সেবা পাওয়া সহজতর হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য পৃথক স্থান নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।

টাঙ্গাইল শিশু একাডেমির জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা খন্দকার নিপুণ হোসাইন বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়মিত যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও নামানো হয়। সেজন্য তাদের ওখানে নিয়মিত উত্তোলন করা হয় না। তবে বিশেষ দিবসে নিয়মিত উত্তোলন করা হয়।

পতাকা উত্তোলন বিষয়ে টাঙ্গাইলের আদালতের সরকারি কৌশলী (পিপি) এস আকবর খান বলেন, জাতীয় পতাকা ব্যবহারের একটি আইন আছে। সেখানে পতাকা অবমাননার শাস্তির বিধানও আছে। আইনটি সবার জানা দরকার এবং পতাকা আইন অনুযায়ী ব্যবহার হচ্ছে কিনা সেটি মনিটরিং করা দরকার। বিধি মোতাবেক পতাকা উত্তোলন না করা জাতীয় পতাকা অবমাননার শামিল। জাতীয় পতাকা অবমাননায় সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত শাস্তি এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

তিনি জানান, আসলে জাতীয় পতাকার সঙ্গে দেশপ্রেমের বিষয়টি জড়িত। তাই সকল সরকারি ভবনে যথাযথ মর্যাদায় জাতীয় পতাকার ঠিকমতো ব্যবহার করা উচিত। যারা বা যে অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না- তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

টাঙ্গাইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বীরবিক্রম বলেন, দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জিত স্বাধীনতার মাধ্যমে জাতীয় পতাকা পেয়েছি। তাই আমাদের জাতীয় পতাকা ও স্বাধীনতা যুদ্ধ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ পতাকা বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনসাধারণকে একত্রিত করেছিল। এ পতাকাতলে দাঁড়িয়ে দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা দেশমাতাকে স্বাধীন করার জন্য শপথ নিয়েছিল। বীর শহিদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকার লাল বৃত্ত সকল দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধার পবিত্র রক্তের প্রতীক।

তিনি জানান, সরকারি অফিস-আদালতে সকল কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়ম রয়েছে। যে-সব অফিস বা ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না তিনি বা তারা জাতীয় বেইমান হিসেবে চিহ্নিত। তাদের কাছ থেকে জনসাধারণও সেবা পায় না। তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে জাতীয় পতাকা যথাযথ মর্যাদায় উত্তোলনের বিষয়ে একাধিকবার কথা বলেছেন।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, সরকারি ভবনে সকল কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা যথাযোগ্য মর্যাদায় উত্তোলন এবং যথাসময়ে নামানোর নিয়ম রয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও যথা সময়ে নামানো হয়। তিনি জেলা পর্যায়ের সকল অফিস বা ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা দিবেন এবং যথাযথভাবে তদারকি করবেন।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

The Trend (Online Shop)

©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights