নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অসুখে বিসুখে অসুস্থতায় সৃষ্টিকর্তার পরেই মানুষ যাদের শরণাপন্ন হয় সেই মহান পেশার মানুষ হলেন চিকিৎসক। সেবার ব্রত নিয়েই যারা নিজেদের আত্ম নিয়োগ করেন। প্রতিটা সেক্টরেই ভাল মন্দ দুই শ্রেণীর মানুষ থাকে তেমনি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও আছে। রাগ অভিমানে এই পেশার মানুষকেই অনেক সময় কশাই বলতেও শোনা যায় আবার এই মানুষগুলোর দ্বারা উপকৃত হয়ে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রাণভরে দোয়াও করেন অনেকে। চিকিৎসাসেবা একটি অনন্য শিল্প বা সেবা। একে প্রায়োগিকভাবে রপ্ত করতে হয়। জানতে হয় বিস্তর। আত্মস্থ করতে হয় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে। সব কাজের মধ্যে যেমন প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণি আছে, তেমনি চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যেও তাই। সবকিছু ছাপিয়ে চিকিৎসকের উত্তম ব্যবহার, হাতের যশ, রোগ নির্ণয়, তার সঠিক চিকিৎসা প্রয়োগ করতে হয় রোগের ধরন বুঝে আর বাস্তবতা দিয়ে। তাহলেই রোগ দূরীভূত হবে।
বলছিলাম টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার পৌর শহরের পন্ডিত বাড়ি নামে সুপরিচিত নরেন্দ্র চন্দ্র পন্ডিতের সুযোগ্য পুত্র। তিনি আর এস পি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, কালিহাতি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, খুলনা মেডিকেল থেকে ২০০৫ সালে ডাক্তারি পাশ করেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পর ২০১০ সালে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সহকারী রেজিস্ট্রার এবং পরবর্তীতে কনসালটেন্ট হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ডা.এস সি পন্ডিত। তিনি একজন ভাল মানের ও ভাল মনের চিকিৎসক। নাক, কান, গলার বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা এবং সফল অশ্রপাচারের মাধ্যমে তিনি সারিয়ে তুলেছেন হাজারো রোগী।
চিকিৎসা সেবার অনুপ্রেরণা বিষয়ে ডা. এস সি পন্ডিত একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, আমার বাবা একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার । খুব ছোটবেলা থেকেই আমি দেখতাম কালিহাতি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে রোগীরা বাবার কাছে চিকিৎসা নিতে আসতো। বাবার সাথে আগত রোগীদের অনেক সক্ষ্যতা এবং আন্তরিকতা দেখেছি। মূলত বাবার হাত ধরেই চিকিৎসা সেবায় আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। কর্মজীবনের অর্জন প্রসঙ্গে ডা. এস সি পন্ডিত জানান, আমি ২০১০ সাল থেকে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় প্রায় ১৫ হাজার জটিল রোগীর অপারেশন করেছি এবং ৬ লক্ষাধিক রোগীর রোগ সনাক্ত করে চিকিৎসাপত্র দিয়েছি। এছাড়াও আমার নিজ পন্ডিত বাড়িতে ২০১৯ সাল থেকে প্রতি মাসের ১ম এবং ৩য় সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ফ্রী রোগী দেখি এবং ঔষধ বিতরণ করে থাকি। শুধু তাই নয় তিনি আরও জানান ভাষার মাস (২৪ ফেব্রুয়ারিতে) সৎসঙ্গ বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন এর ব্যানারে ঘাটাইল পাকুটিয়া তপোবন স্কুল মাঠে সৎসঙ্গের আয়োজনে প্রায় সারা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ জন ডাক্তার এবং ৬ টি বিভিন্ন ব্যচের প্রায় শতাধিক মেডিকেল শীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এতে টাঙ্গাইল জেলার প্রায় ৬ টি উপজেলা থেকে ২ হাজার নাক, কান, গলা, অর্থোপেডিক্স, কিডনী, ডায়বেটিস, চর্মরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের বিন্যমূল্যে চিকিৎসা সেবা, ফ্রী ঔষধ বিতরণ এবং প্রায় ৫০ জন জটিল রোগীদের বিন্যমূল্যে অপারেশন করা হয়েছে এবং ভাষার মাসের (২১ ফেব্রুয়ারিতে) আমার নিজ বাড়িতেও ব্যক্তিগতভাবে ফ্রী মেডিকেল করেছি।
ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্পের ধারাবাহিকতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সবাই সাবলম্বী বা সচ্ছল না। ৫০০- ৭০০ টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখানের সামর্থ্য সবার নাই। এ চিন্তা থেকেই সেই অসচ্ছল রোগীদের কথা মাথায় রেখে আমার এই উদ্যোগ। এছাড়া আমি সবসময় মনে করি আমি গ্রামের সন্তান তাই সব সময় চেষ্টা করি সাধারণ মানুষের পাশে থাকার তারই ধারাবাহিকতায় গ্রামে রাস্তাঘাটের যতটুকু সম্ভব ব্যক্তি উদ্যোগেই উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি।
জনকল্যানমূলক কাজ করতে গিয়ে উৎসাহের বিষয়ের এক প্রশ্নের জবাবে এই ডাক্তার বলেন, পারিবারিকভাবে আমার সহধর্মিণীর অপরিসীম অনুপ্রেরণা রয়েছে। ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের ফ্রী চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আমার সহধর্মিণীকে সবসময় পাশে পেয়েছি।
ডা. এস সি পন্ডিতের কাছে চিকিৎসা গ্রহন করা একাধিক রোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনি সময় ধরে রোগের বর্ননা শোনেন এবং রোগীর সাথে সুন্দর আচরণ করেন। সর্বদা হাসোজ্জল এ চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা প্রদান করে ইতোমধ্যেই ব্যপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন এই ডাক্তার। মানবিক এ চিকিৎসক অনেক গরীব অসহায় রোগীদের ফি ছাড়াই চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অতিরিক্ত পরীক্ষা দেন না ডাক্তারের কাছে নির্ভয়ে সব বলা যায় । মানবিক এই চিকিৎসক কোভিট-১৯ এর সময় ফ্রন্ট লাইন ফাইটার হিসাবে সরাসরি রোগী দেখছেন সু-চিকিৎসা দিয়েছেন চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্তও হয়েছিলেন।
চিকিৎসা নিতে আসা নীলা আক্তার বলেন, কানের ব্যাথায় অনকে কষ্ট পাচ্ছিলাম এবং আমার বাম কানে কম শুনতাম। এখানে চিকিৎসা নিয়ে ভাল আছি। মিমি আক্তার বলেন, আমার মেয়ের নাকের ভেতরে বোতাম আটকে ছিল যা দীর্ঘদিন নাকের ভেতরে থাকার ফলশ্রুতিতে ইনফেকশন হয়ে যায় পরে ডা. এস সি পন্ডিতের সফল অস্রপাচারের মাধ্যমে আমার মেয়ে এখন আল্লাহর রহমতে ভালো আছে। একজন গরীব অসহায় রোগী লিপি রানী বলেন, আমার মেয়ের টনসিল সমস্যা ছিল। এই ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে ভাল আছি। আবার দেখা করতে এসেছি, আমরা গরীব শুনে তিনি পরামর্শ ফি নেন নি, ওনার কথা, আচার ব্যবহার খুব ভাল। দোয়া করি ভগবান যেনো উনার মঙ্গল করেন।
ভবিষ্যতেও এ ধরনের মানবিক সেবা অব্যাহত থাকবে কিনা জানতে চাইলে ডা. এস সি পন্ডিত জানান, বিবাহিত জীবনে আমি দুই কন্যা সন্তানের জনক। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি মানুষ তার কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকে। তাই আমি আমার জীবদ্দশায় সাধারণ এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মাঝে পন্ডিত বাড়ি মানে আমার নিজ বাড়িতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাব। আমি আপনার সকলের দোয়া এবং ভালোবাসা চাই।