মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মেডিকেল সনদ নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪
  • ৩১০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টাকা ছাড়া মেলে না মেডিকেল সনদ। টাকা দিলে মারাত্মক জখমও সাধারণ জখম বানিয়ে সনদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ১০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকার বিনিময়ে পাল্টে দেয়া হয় মেডিকেল সনদ। এদিকে টাকার বিনিময়ে মেডিকেল সনদ পাল্টে দেয়ায় সাধারণ মানুষ যেমন ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে মামলার তদন্তে পুলিশকে পড়তে হচ্ছে চরম বেকাদায়। মেডিকেল সনদ নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শাওন সিয়ামের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত (৬ মে) সোমবার সকাল সাতটার দিকে উপজেলা সদরের পুষ্টকামুরী গ্রামের ইসমাইল মিয়া তার ঘরের ছাদের পানি আবুল হোসেনের ঘরের চালে দিচ্ছিলেন। আবুল হোসেনের স্ত্রী জেসমিন আক্তার নিষেধ করলে এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। জেসমিনের স্বামী আবুল হোসেন ও ছেলে ফুয়াদ হোসেন এগিয়ে আসলে ইসমাইল মিয়া তার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে আবুল হোসেন ও ফোয়াদ হোসেনের মাথা লক্ষ করে এলোপাথারি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। খবর পেয়ে মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রামকৃষ্ণ ঘটনাস্থলে এসে রক্তমাখা দা জব্দ করেন। এ বিষয়ে জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে ইসলাম মিয়া ও স্ত্রী মেয়েকে আসামী করে মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।

পুলিশ ও ভূক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, ফৌজদারি ঘটনা নিয়ে আদালতে বা থানায় মামলা-মোকদ্দমা করতে হলে প্রমাণস্বরুপ সরকারি মেডিকেল সনদের প্রয়োজন হয়। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষ এই সনদ বাধ্যতামূলকও। এ কারণে ঘটনার দিন দুপুরে আহত আবুল হোসেন ও তার ছেলে ফোয়াদ হোসেনকে কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। মাথায় সেলাই করাসহ চারদিন তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়। পরে মামলার প্রয়োজনে মেডিকেল সনদ প্রয়োজন হলে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শাওন সিয়াম নানাভাবে তাদের কাছে টাকার প্রস্তাব দিতে থাকেন। কিন্তু টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে সত্য রিপোর্ট দেয়ার অনুরোধ করেন জেসমিন আক্তার। এতে ডা. শাওন সিয়াম ক্ষুব্ধ হন। তিনি টাকা না পেয়ে আসামীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে দায়ের কুপকে লাঠির আঘাত বলে মিথ্যা মেডিকেল সনদ দিয়েছেন। এ কারণে এখন তারা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্মুখ হয়েছেন বলে জেসমিন আক্তার অভিযোগ করেন।

এদিকে মির্জাপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) রাম কষ্ণ বলেন, তিনি আহত দু’জনের মাথার আঘাত দেখেছেন। এছাড়া উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলেছেন। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা দা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে ইসমাইল মিয়া উদ্ধার হওয়া দা দিয়ে আবুল হোসেন ও তার ছেলে ফোয়াদ হোসেনকে কুপিয়েছেন। কিন্তু মেডিকেল সনদ দেয়া হয়েছে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এতে তিনি মামলা নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন। রাম কৃষ্ণ ঘটনার সত্যতার স্বীকার করে আরও বলেন, প্রভাবিত হয়ে চিকিৎসক মেডিকেল সনদ দেয়ায় মামলার তদন্তে এখন তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, মামলা করতে সরকারি মেডিকেল চিকিৎসকের সনদ লাগবেই। এই সুযোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শাওন সিয়াম রোগীদের মেডিকেল সনদ প্রদানে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। তাঁর এই কাজে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম সহযোগিতা করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই মেডিকেল সনদ বানিজ্য চালিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মেডিকেল সনদ বিষয়ে ডাক্তার-নার্স-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট লেনদেন করে থাকে। টাকা ছাড়া যেন মেডিকেল সনদ পাওয়াই যায় না। আবার হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও টাকার বিনিময়ে মিলে মেডিকেল সনদ। সংঘর্ষ, নির্যাতন বা শত্রুতাতামূলক কোন কারণে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তখন মেডিকেল সনদ বাণিজ্য হয় প্রকাশ্যেই।

আবুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রতিবেশি ইসমাইল দা নিয়ে এসে তাকে ও তার ছেলে ফোয়াদকে মাথা লক্ষ করে এলোপাথারি কুপাতে থাকে। এতে তার ও তার ছেলের মাথায় দায়ের কুপে গুরুতর জখম হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের মাথার আঘাত দেখেছে ও ঘটনাস্থল থেকে রক্ত মাখা দা উদ্ধার করেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা শাওন সিয়াম ভর্তি অবস্থায় তাদের চিকিৎসাও করেছে। দায়ের কুপ জেনেও তিনি টাকার বিনিময়ে লাঠির আঘাতে আমরা মাথায় জখমপ্রাপ্ত হয়েছি বলে মেডিকেল সনদ দিয়েছেন। এতে তার ন্যায় বিচার পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

গত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বপালন কারী ডা. শাওন সিয়ামের বিরুদ্ধে মেডিকেল সনদের টাকা নেয়া, হাসপাতালে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করা, কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও বেশির ভাগ সময় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শাওন সিয়াম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার যা মনে হয়েছে আমি সেভাবেই রিপোর্ট দিয়েছি।

মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিববার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, মেডিকেল অফিসার রোগীর চিকিৎসা করে মেডিকেল সদন তৈরি করে থাকে। এ বিষয়ে আমি শুধু স্বাক্ষর করে থাকি।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights