নিজস্ব প্রতিনিধিঃ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় টাঙ্গাইল পৌরসভায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে করে পৌর এলাকার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে প্রবেশ করেছে বৃষ্টির পানি। তলিয়ে গেছে অধিকাংশ পাড়া মহল্লার রাস্তাঘাট। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীকে। দুর্ভোগ লাঘবে ইতিপূর্বে মেয়রকে অবগত করা হলে প্রতিশ্রুতি মিললেও দীর্ঘদিনেও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) থেকে একটানা বৃষ্টি শুরু হলে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় পৌরসভার অধিকাংশ নাগরিককে। হঠাৎ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় মালামাল ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এদিকে পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়া, বিশ্বাস বেতকা, পূর্ব আদালতপাড়া, থানাপাড়া, আদি টাঙ্গাইল, কলেজ পাড়াসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, বিগত ১৮৮৭ সালের ১ জুলাই টাঙ্গাইল পৌরসভা স্থাপিত হয়। বিগত ১৯৮৫ সালে টাঙ্গাইল পৌরসভা ‘গ’ থেকে ‘খ’ এবং বিগত ১৯৮৯ সালে ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নতি লাভ করে। তারপরও দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরেও দুর্ভোগ কমেনি পৌরবাসীর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভার মোট ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে পৌরসভার ১৪ ওয়ার্ড আদালত পাড়া, ১৫ ওয়ার্ড আশেকপুর, ১৭ ওয়ার্ড কুমুদিনী কলেজ পাড়া, ১২নং ওয়ার্ড আদি টাঙ্গাইল ও ১৮ নং ওয়ার্ডের সাবালিয়ার বাসিন্দারা। বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের। রিকশাচালক মোবারক মিয়া বলেন, বৃষ্টি হওয়ার পর টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে ও সাবালিয়া এলাকায় যাওয়া যায় না। অল্প বৃষ্টিতে সড়ক তলিয়ে থাকে। রিকশার মোটরে পানি প্রবেশ করে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। শহরের পূর্ব আদালত পাড়া এলাকার শিক্ষার্থী সিয়াম মিয়া বলেন, অল্প বৃষ্টিতে পাকা সড়ক তলিয়ে আমার বাসায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। রাস্তা দিয়েও হাটু পানি।
স্থানীয় সাইফুল ইসলাম বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ গত ৫ বছরে আমাদের এলাকায় কোন প্রকার উন্নয়ন কাজ করেনি। খাল দখল হয়ে গিয়েছে ফলে ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। আমাদের বসতঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে। তাই বাসার ফ্রিজ ও অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আশেকপুর এলাকার বাসিন্দা আতোয়ার রহমান বলেন, গত কয়েক বছর শুধু উন্নয়নের কথা শুনেছি। কিন্তু সাবেক মেয়ররা কোন প্রকার ড্রেনের উন্নয়নমূলক কাজ করেনি। ফলে আমাদের এ ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। আদি টাঙ্গাইল এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের এলাকার কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। সামান্য বৃষ্টিতেই বাসাবাড়ির অলিগলি রাস্তাসহ ঘরে পানি উঠে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এবং সড়কগুলো নিচু হওয়ায় এছাড়া এলাকার বিভিন্ন ডোবা ও নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে মানুষের চলাচলে মারাত্মক কষ্ট হচ্ছে। সাপ ও বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রুপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র বলেন, শহরের ২৭টি খালের মধ্যে প্রায় সব খালই অবৈধভাবে দখল হয়ে রয়েছে। এছাড়া শহরের পুকুরগুলো প্রভাব খাটিয়ে ভরাট করা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্ভোগ লাঘবে খাল দখল মুক্তের পাশাপাশি ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল করা জরুরি। তাহলেই টাঙ্গাইল শহরবাসীর দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হবে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রশাসক শিহাব রায়হান বলেন, বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।