অনিয়ম, অবহেলা, অব্যবস্থাপনা- এই তিন বিশেষণকে সঙ্গ করেই যেন চলছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। হাসপাতালের বর্হিবিভাগে বসেন না কনস্যালন্ট্যান্ট। চিকিৎসার যন্ত্রপাতি যেন থেকেও নেই। আর সময়ে-অসময়ে প্রেসক্রিপশন থেকে শুরু করে ঔষুধ প্রয়োগ পর্যন্ত রোগীদের সেবামূলক সব কাজই চলছে মোবাইলে টর্চ জ্বালিয়ে।
অথচ ভূঞাপুর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ঘিরে এই অঞ্চলের মানুষের উচ্ছ্বাস আর আশার কমতি ছিল না। কারণ শুধু ভূঞাপুরই নয়, আশপাশের আরও তিন উপজেলা মানুষ চিকিৎসার জন্য নির্ভর করে এই হাসপাতালের ওপর।
সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, বর্হিবিভাগের রোগী ও তাদের স্বজনরা চিকিৎসকের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছেন। বর্হিবিভাগের এনসিডি কর্ণারের কার্ডধারী রোগীরাও ফিরে যাচ্ছেন ওষুধ না পেয়ে।
হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় উঠার সিঁড়িতে ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। রোগীর পাশেই মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালের কোথাও কোথাও কফ, থুতু ও পানের পিকের ছাপ। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের টয়লেট ব্যবহারে অনুপযোগী। হাসপাতালের পেছনে ময়লা ও জমাট বাধা দুর্গন্ধ।পানির কারণে মশার উপদ্রপ বেড়েছে। ওয়ার্ডের অধিকাংশ ফ্যান নষ্ট হয়ে পড়েছে। এসময় রোগীরা জানান রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয় হাসপাতালে। সময়ে অসময়ে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে রোগীদের সেবা দেন নার্স ও চিকিৎসকরা।
তবে চাকরি হারানো ও বদলির ভয়ে এসব বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীরাসহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নার্সরা জানান, হাসপাতালের জেনারেটর রয়েছে তা চালানো হয় না। বিদ্যুৎ চলে গেলে গরমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদের। অন্ধকারে রোগীদের শরীরে ওষুধ প্রয়োগ থেকে শুরু করে জরুরি সেবা পর্যন্ত ব্যাহত হয়। তখন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে কাজ করতে হয়।
তাছাড়া ব্যবহার না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার কারণে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার চিকিৎসা সরংঞ্জাম। আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও সেটিও ব্যবহার হয় না। হাসপাতালের জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট থাকলেও তারা নিয়মিত বর্হিবিভাগে বসেন না। সপ্তাহে দুইদিন হাসপাতালে আসলেও সেটি নির্ধারিত সময়ের পর আসেন বলে অভিযোগ করেছেন রোগীরা।
মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে আসা কাজল বলেন, অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে দুইদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। আসার পর থেকেই খাবার ও পানি কম খাচ্ছি যাতে টয়লেটে না যেতে হয়। টয়লেটে গিয়ে এখন নিজেই অসুস্থ হওয়ার উপক্রম। এখানে সেবা বলতে কিছু নেই।
বড়শিলা থেকে আসা রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এই হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ, দুর্বল। পানির কলটা পর্যন্ত বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে এনেছি। তুলা থাকলেও নার্সরা দিতে চায়না। নাতিনকে হাসপাতালে আনার পর দুই আড়াই ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। পরে বাড়ি থেকে চার্জার ফ্যান এনেছি।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী বলেন, হাসপাতালে টয়লেটে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। পুরুষদের টয়লেটে কমন একটি লাইট থাকলেও প্রতিটি টয়লেটে আলাদা কোনো লাইটের ব্যবস্থা নেই। ফলে মূল দরজা বন্ধ করে প্রয়োজন সারতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) খাদেমুল ইসলাম বলেন, সমস্যা রয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় সব কাজ করা সম্ভব না। কেউই শতভাগ কাজ করতে পারি না, আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার ছবি তুলতে চাইলে বাধা দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবাহান।
এসময় তিনি বলেন, ছবি তুলতে হলে অনুমতি লাগবে। সমস্যার কথা কেউ না জানালে সমাধান কিভাবে করব। এছাড়া লোকবল সংকট রয়েছে।